পুবের কলম,ওয়েব ডেস্ক: ইসলামিয়া হাসপাতাল। প্রায় শতাধী প্রাচীন এই হাসপাতাল এখন নতুন রূপে সজ্জিত। সাজ-সজ্জার কথা বলা হচ্ছে না, ইসলামিয়া ছিল মাত্র চারতলা। এখন তা ভেঙে ১০ তলা করা হয়েছে। আর ইতিমধ্যেই ইসলামিয়াতে আধুনিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান বিভিন্ন মেশিনপত্র ও সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে আর একটি সাধারণ কিন্তু বিরল পদক্ষেপ নিয়েছে ইসলামিয়া হাসপাতাল। এই হাসপাতালে রোগীদের ওষুধ সরবরাহের দোকানটি হচ্ছে একটি ‘ফেয়ার প্রাইস’ শপ। অর্থাৎ এই মেডিসিন শপে ন্যায্য ও যথার্থ দামে ওষুধ উপলব্ধ হবে।
আর ‘জেনেরিক মেডিসিন’ হলে তাতে লিখিত দামের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। জেনেরিক মেডিসিন হচ্ছে ব্র্যান্ডেড মেডিসিন কোম্পানির উচ্চদামের ওষুধের পরিবর্তে একই ক্ষমতাসম্পন্ন ও একই উপাদান দিয়ে তৈরি ওষুধ বাজারে দেওয়া। তবে এই ওষুধগুলিকে এফডিএ বা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ছাড়পত্র থাকতে হবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, জেনেরিক কোম্পানিগুলি যেন ওষুধের মান ও ক্ষমতায় কোনও কম-বেশি না করে। আর ওষুধ তৈরির উপাদানগুলিতেও যেন হেরফের না হয়। এইসব কিছু যাচাই করে তবেই এফডিএ ওষুধকে বাজারজাত করার ছাড়পত্র দিয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমমানের হওয়ায় জেনেরিক ওষুধগুলিও রোগ সারানোর ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকর হয়। কিন্তু মূল্য হয় ব্র্যান্ডেড কোম্পানির ওষুধ থেকে অনেক কম।
এ কথা সর্বজনবিদিত যে, ব্র্যান্ডেড কোম্পানিগুলি বিশেষ করে বহুজাতিক ওষুধ সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদিত ওষুধগুলি থেকে প্রচুর মুনাফা কামাই করে। আর এসব ক্ষেত্রে তারা মোটেই দরিদ্র দেশ কিংবা গরিব রোগীদের কথা চিন্তা করে না।
মুনাফা অর্জনই থাকে তাদের প্রধান লক্ষ্য। তারা ওষুধের বিজ্ঞাপন ও চিকিৎসকদের কাছে লবি করার জন্য এক বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করে। এমনও দেখা গেছে, কোনও একটি ওষুধ তারা প্রতি ট্যাবলেট বিক্রি করে হয়তো ২টাকা দামে।
আর একই ওষুধ ক্যাপসুলে ভরে বিক্রি করে ১০ টাকা দামে। এমন ধারণা দেওয়া হয় যে, ক্যাপসুল বেশি কার্যকরী। বিষয়টি অবশ্য মোটেই সত্য নয়। ক্যাপসুলের খোল তৈরি করতে দাম পড়ে হয়তো ৫০ পয়সা বা তারও কম।
বুঝতে পারা যায় কীভাবে তারা সাধারণ মানুষকে শোষণ করে। বড় ব্র্যান্ডেড কোম্পানিগুলি গবেষণায়ও বেশকিছু টাকা খরচ করে। তবে তাদের গবেষণালব্ধ ওষুধের পেটেন্টের মেয়াদ ২০ বছরেই শেষ হয়ে যায়। তখন যেকোনও কোম্পানি ওই ওষুধগুলি বিনা বাধায় তৈরি করতে পারে। জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলিও তা করে থাকে।
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ইসলামিয়া হাসপাতাল তাদের প্রতিষ্ঠানে ওষুধের যে ‘ফেয়ার প্রাইস শপ’-এর ব্যবস্থা করেছে তা অবশ্য চালায় ইসলামিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয় এমন একটি কোম্পানি। তবে শর্ত রয়েছে যে, জেনেরিক ওষুধের নির্দিষ্ট তালিকাভুক্ত দামেও সর্বোচ্চ ছাড় ক্রেতাদের দিতে হবে।
আর সেই অনুযায়ী ইসলামিয়া হাসপাতালে জেনেরিক ওষুধেও সরাসরি ৭০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। আর এই কথাটি স্পষ্ট ও বড় করে ওষুধের দোকানের সাইনবোর্ড মুদ্রিত রয়েছে। ফলে গরিব রোগীরা ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে জেনেরিক ওষুধ কিনলে ৭০ শতাংশ ছাড়ে তা সংগ্রহ করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে ইসলামিয়া হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক আমিরউদ্দীন ববি পুবের কলমকে বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট জনাব ফিরহাদ হাকিম চান ইসলামিয়াতে যেন রোগীরা সর্বাধিক উপকৃত হয়। আর তাই তিনি আগে থেকে বলে দিয়েছেন, ইসলামিয়ায় যে ওষুধের দোকান থাকবে তা জেনেরিক ওষুধ সরবরাহ করবে সর্বোচ্চ ছাড়ে। আর তাই আমরা এই ফেয়ার মেডিসিন শপে ৭০ শতাংশ ছাড় দিয়ে জেনেরিক ওষুধ বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। আমি এ জন্য আমাদের প্রেসিডেন্ট জনাব ফিরহাদ হাকিমকে এই ফেয়ার শপের সমস্ত কৃতিত্ব দেব।’
এই মেডিসিন শপের এক কর্মী জানান, ইচ্ছে করলে বাইরের রোগীরাও প্রেসক্রিপশন-সহ এখানে এসে ৭০ শতাংশ ছাড়ে ওষুধ কিনতে পারবেন।