পুবের কলম প্রতিবেদকঃ শিক্ষা-স্বাস্থ্য-খাদ্য—এই তিন পরিষেবা ঠিকমতো মানুষের কাছে পৌঁছালেই সমাজ উন্নত হতে। শিক্ষায় যেমন হাজী মুহাম্মদ মহসিনের অবদান রয়েছে– সেই মতো এ রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় মুসলিম বিশিষ্টদের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে চালু হয় ইসলামিয়া হাসপাতাল। ১৯২৬ সালে হাসপাতাল গঠিত হওয়ার পর চ্যারিট্যাবল ইনস্টিটিউশন গঠন করে পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু হয়। পরে ১৯৪২ সালে কলকাতার ৭৩ নম্বর চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ে একটিz বিল্ডিংয়ে চিকিৎসা পরিষেবা চালু হয়। কলকাতার পাশাপাশি পঞ্জাবের চিনোট-এর প্রখ্যাত ব্যবসায়ী হাজী মুহাম্মদ দ্বীন সাহেব এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে সব থেকে বেশি সহযোগিতা করেছিলেন। এখন হাসপাতালের উন্নতির কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিশিষ্টরা।
চার বছর পেরিয়ে অবশেষে পাঁচে এসে স্বপ্ন সাকার হয়েছে ইসলামিয়া হাসপাতালের। নবনির্মিত হাসপাতালের ভবনে আগেই চালু হয়েছে বর্হিবিভাগ। এবার হাসপাতালের এমাজেন্সি–মেডিসিন ও অপারেশন থিয়েটার (ওটি) বিভাগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। শুক্রবার ৭৩ নম্বর চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ে হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবহন ও আবাসন মন্ত্রী– কলকাতা পুরসভার মু্খ্য প্রশাসক এবং ইসলামিয়া হাসপাতালের সভাপতি ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং ইসলামিয়া হাসপাতালের সহ-সভাপতি আহমদ হাসান ইমরান, কার্যকরী সভাপতি এস এম হায়দার– সাধারণ সম্পাদক আমিরউদ্দিন (ববি)– ক্কারী ফজলুর রহমান– ইসতিয়াক আহমেদ (রাজু) প্রমুখ।
এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাসপাতালের সভাপতি ‘ইসলামিয়া হাসপাতাল’ নামকরণের সার্থকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেকে প্রশ্ন– এই হাসপাতালের নাম ইসলামিয়া কেন। ইসলাম মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা করে সেটা দেখিয়ে দিয়েছে ইসলামিয়া হাসপাতাল। শুরু ইসলাম নয়, অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ধারা অব্যাহত রেখেছে। এতে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষরাও ইসলামের সম্পর্কে ধারণা উন্নত হচ্ছে। তাঁরা এই হাসপাতালের পরিষেবা নিতে এসে ইসলাম নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ত্যাগ করতে সক্ষম হচ্ছে। প্রায় একশো বছর আগে ইসলামিয়া হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এই একশো বছর ধরে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে পরোক্ষভাবে ইসলামের প্রচার করে আসছে এই হাসপাতাল।
এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উল্লেখ করে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বহু বছর ধরে মানুষের সেবা করে চলেছে ইসলামিয়া হাসপাতাল। এখন নয়া ভবন নির্মিত হওয়ার পর পরিষেবার পরিসর বেড়েছে। হাসপাতালের আরও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন। তাই এদিনের অনুষ্ঠানে সাংসদ তহবিল থেকে হাসপাতালকে ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই হাসপাতালের নাম ইসলামিয়া নামে হলেও এখনও শুধু মুসলিমদের সেবায় যুক্ত ছিল না। মুসলিমদের পাশাপাশি সব সম্প্রদায়ের দুস্থ পরিবারের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কাজ করে এসেছে ইসলামিয়া হাসপাতাল। তিনি মনে করেন, মানুষের সেবার জন্য এই হাসপাতালকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন। এূন ব্লাড সুগার, এর রাজধানীতে পরিণত হয়েছে ভারত। তাই সুগার-এর চিকিৎসা জরুরি।
পাশাপাশি হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের প্রবণতাও বাড়ছে। এই সব রোগীদের পাশে দাঁড়াতে এই হাসপাতাল আগামীতে অন্যতম ভূমিকা পালন করবে।
সেবার কাজের মাধ্যমেই কোনও মানুষ বা সংস্থাকে মহৎ করে। রাজনীতির উর্দ্ধে গিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। এই হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য তাঁর তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে দু’বার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়।