পুবের কলম প্রতিবেদক: হাওড়া জেলার আমতা ব্লকের খুশবেড়িয়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সারদা খাঁ পাড়ার বাসিন্দা আনিস খান। তিনি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে খুন হয়েছেন। এ নিয়ে পুলিশ অবশ্য তদন্ত করছে। এরই মধ্যে অনুসন্ধান রিপোর্ট পেশ করল মানবাধিকার সংগঠন
বন্দি মুক্তি কমিটি। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আনিস খুন হয়েছেন নিজের বাড়িতে। খুনের প্রত্যক্ষদর্শী আনিসের পরিজনবৃন্দের জবান অনুযায়ী আমতা থানা থেকে আগত চার পুলিশ আনিসকে খুন করে তাঁরই নিজের বাড়ির দোতলা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। রক্তাক্ত আনিসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
বন্দি মুক্তি কমিটির অনুসন্ধান রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, আনিসকে পুলিশ বেনজির বর্বতায় হত্যা করেছে, তার পরিচয় হল সে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ইসলামে বিশ্বাসী এক উচ্চশিক্ষিত তরুণ নাগরিক। কিন্তু এই পরিচয় অসম্পূর্ণ। আনিসের পরিচয়ের ভিন্ন মাত্রা আছে। আনিস খান একজন সমাজ-সংবেদী প্রতিবাদী যুবক। নিজের শিক্ষাঙ্গনের পাঠসাথী থেকে তাঁর বসবাসের অঞ্চলের প্রতিবেশীরা আনিসকে চিনেছিল বিভিন্ন সামাজিক কাজে উদ্যোগী এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক যুবক হিসেবে। আনিসের এই সমাজমুখী প্রতিবাদী সক্রিয়তা তাঁকে যেমন সহনাগরিকদের হৃদয়ে স্থান দিয়েছিল, তেমনই প্রশাসন ও তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় একাংশের চক্ষুশুল করে তুলেছিল।
বন্দি মুক্তি কমিটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তথ্যানুসন্ধানের উদ্দেশ্যে আনিস খানের বাড়িতে যায় এবং তাঁর পরিবার ও ও স্থানীয়্যদের সঙ্গে সবিস্তারে কথা বলে সংগঠনটি কতকগুলি সিদ্ধান্ত ও প্রশ্নে উপনীত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘আনিস খানকে ইচ্ছাকৃতভাবে খুন করতেই আমতা থানার চার পুলিশকর্মী এসেছিল। গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে পুলিশ যদি আনিসের বাড়িতে আসত, তাহলে নির্দিষ্ট ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে পারত। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা নিশ্চিত, ধাক্কা দিয়ে ফেলে না দিলে চার ফুট উঁচু পাঁচিল পেরিয়ে নীচে পড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ শুধু ইচ্ছাকৃতভাবেই আনিস খানকে খুন করেছে তাই নয়, এই খুন বড় কোনো পরিকল্পনার ফলশ্রুতি।
প্রত্যক্ষ খুন যারা করেছে, খুনের পেছনের মাথা তারা নয়। আনিসের পরিবার ও প্রতিবেশীরা এরকম মতই পোষণ করছে। কিছু নিম্নস্তরের পুলিশকর্মীকে আটক করে থেমে গেলে তদন্তের নামে প্রহসন হবে। পুলিশ কেন নিয়ম ভঙ্গ করে মাঝরাতে আনিসের বাড়িতে এলো? আমতা থানা কেন ঘটনার সাত ঘণ্টা পরে বাড়িতে পুলিশ পাঠালো?’
বন্দি মুক্তি কমিটির দাবি, সুপ্রিম কোর্টের কোনো অবসরপ্রাপ্ত সৎ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির বিচারপতি দিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় একটি দলের যে বা যেসকল নেতৃবৃন্দ আনিস ও তাঁর পরিবারকে লাগাতার হুমকি দিয়েছে ও বাড়িতে গুণ্ডামি করেছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে।
সংগঠনটির তরফে জানানো হয়েছে, তাদের অনুন্ধান টিমের সদস্যরা হলেন, অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত, সাবেরা সর্দার, অধ্যাপক ইমানুল হক, সন্দীপন দাস, ছোটন দাস, মিহির গোস্বামী, বিশ্বনাথ মন্ডল, ভানু সরকার, সইদুল সর্দার প্রমুখ।