হিজাবকে সঙ্গী করে মার্শাল আর্টে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চান মেটিয়াবুরুজের ইডেন নেসা

- আপডেট : ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার
- / 14
সেখ আবুল হোসেন: ইডেন নেসা খাতুন। সদ্য ১৮তে পা দিয়েছেন। মেটিয়াবুরুজের কানখুলি মধ্যপাড়ার এই মেয়েটির মাথায় সেই ছোটবেলা থেকেই একটা জিনিস ঘুরপাক খেত, বড় হয়ে নিজের দায়িত্ব নিজেই নেবেন। এমনকি নিজের আত্মরক্ষাও নিজেই করবেন। সেটা মাথায় রেখে ক্লাস নাইন থেকে ইডেন নেসার বক্সিং ও কুম্ফুতে পথচলা শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে তার পথচলা। কুম্ফু থেকে তিনি উসুতে (এটা বিশেষ ধরণের মার্শাল আর্ট) লাফ দেন। চিনের জনপ্রিয় উসু ইভেন্টে হাত পাকিয়ে সম্প্রতি খেলো ইন্ডিয়া উইমেন্স লিগে দেশের নামিদামিদের পিছনে ফেলে সোনা জেতে ইডেন নেসা। শুধু পদক জেতা নয়, ওই প্রতিযোগিতায় তিনিই দেশের প্রথম হিজাবধারি কন্যা হিসেবে উসু প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জিতে নজির গড়েছেন।
ইডেন নেসার পিতা, গোলাম মুহাম্মদ মুফতি একজন স্থানীয় মেকানিক। মেশিন সারানো যাঁর প্রতিদিনের কাজ। সামান্য উপার্জনের কাঁধে ভর দিয়ে গোলাম মুহাম্মদ মুফতি নিজের ছোট মেয়েকে পার্শ্ববর্তী ফটকে অঞ্চলের একটা কুম্ফু অনুশীলন কেন্দ্রে ভর্তি করেছিলেন, প্রায় বছর পাঁচেক আগে। সেই থেকে শুরু তার লড়াই। ইডেন নেসার প্রতিদিনের রুটিন, রোজ সকাল ৬টায় প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালিয়ে প্র্যাক্টিসে যোগ দেওয়া। পাশাপাশি সেখানে ট্রেনার ইউসুফ মোল্লার অধীনে কড়া অনুশীলনে ক্রমে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়া। দ্বীনিয়াত মুয়াল্লিমা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ইডেন নেসার পড়াশোনাতে যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সে দিকটা মাথায় রেখে ট্রেনারও যথা সময়ে তাকে ছুটি দিয়ে দেন। কলেজে ভালো ছাত্রী হিসেবে পরিচিত আঠেরো বছর বয়সী ইডেন নেসা বাড়িতে পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়া এবং পড়াশোনার মধ্যেই নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। আর সকাল হলেই সেই ফটকের ট্রেনিং সেন্টারে উসু প্রশিক্ষকের ক্লাসে হাজির হওয়া অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন।
হিজাবের মধ্যে কিন্তু ইডেন নেসা কুম্ফুতে যোগ দেননি। পরবর্তীতে দ্বীনিয়াত মুয়াল্লিমা কলেজের ইসলামিক শিক্ষার সংস্পর্শে এসে তিনি উসুতে হিজাব জুড়ে দেন। শুরুতে হিজাবে তার কুম্ফুতে সামান্য সমস্যা হলেও, পরবর্তীতে সেটাই তার শক্তিতে পরিণত হয়। হঠাৎ এই চাইনিজ মার্শাল আর্টে হিজাবের সঙ্গে তার আগমনের কারণ? এর উত্তরে ইডেন নেসা বলেন, ‘হিজাব পরে খেলা আমি নিজে থেকেই বেছে নিয়েছি। আল্লাহপাক আমাকে হেদায়েত দান করেছেন। তাছাড়া আমি মনে করি, এটা একটা মেয়ের আত্মরক্ষা নিশ্চিত করে। নিজেকে ঢেকে, হেদায়েত হয়ে নিজের আত্মরক্ষা করে যদি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, তাতে ক্ষতি কিসের? সত্যি বলতে, এখন আমার হিজাবে রিংয়ে নামতে সমস্যা হয় না। এভাবেই একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করব। তাই আমি মনে করি, প্রতিটা মুসলিম মেয়েকে এভাবেই এসিয়ে আসা উচিত।’
হিজাব পরে এরইমধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন ইডেন নেসা। যদিও বড় ধরনের সাফল্য এতদিন তার কাছে অধরা থেকে গিয়েছিল। গত রমযান মাসে খেলো ইন্ডিয়া উইমেন্স লিগেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন, তবে সাফল্য আসেনি। তখন অবশ্য হিজাবের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। গত আগস্টে সাই কমপ্লেক্সে সেই খেলো ইন্ডিয়া উইমেন্স লিগে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এবারে অবশ্য তার সঙ্গী হিসেবে হিজাব সঙ্গে ছিল। যা দেখে বেশ কয়েকজন প্রতিযোগী তাঁকে কটাক্ষ করে কেন হিজাব পরে উসু’র মতো কঠিনতম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সেদিন তাদেরকে মুখে জবাব না দিলেও, সেই বড় মঞ্চে সোনা জিতে ইডেন নেসা নিজের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেন। একইসঙ্গে তাঁদের বেশ ভালো বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ইচ্ছে থাকলে হিজাব পরেও সাফল্য পাওয়া যায়। সারা বিশ্বের সামনে নিজের দেশের মুখ উজ্জ্বল করা যায়।