পুবের কলম প্রতিবেদক: ওয়াকফ বিতর্ক নিয়ে সারা দেশে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তারই মধ্যে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের রায় শুধু পাঞ্জাব ওয়াকফ বোর্ড নয়, সংসদীয় কমিটি জেপিসিকেও নতুন দিশা দেখাতে পারে। এই রায়ে বলা হয়েছে, কোনও সম্পত্তির উপর কবরস্থান, মসজিদ ও তাকিয়া (সাধারণের ব্যবহার্য) রেকর্ড থাকলে সেটি অবশ্যই ওয়াকফ সম্পত্তি এবং সেই সম্পত্তিকে রক্ষা করা প্রশাসনের দায়িত্ব। এমনকি যদি মুসলিমরা সেখানে নামায না পড়ে এবং কোনও দাফন না হয়ে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। রেভিনিউ রেকর্ডে কবরস্থান ও মসজিদ থাকলেই সেটিকে সংরক্ষণ করতে হবে এবং সুরক্ষা দিতে হবে। গ্রাম-পঞ্চায়েত চাইছিল সেই সম্পত্তিটি দখল নিতে এই যুক্তিতে যে মসজিদে ইবাদাত হচ্ছে না এবং কবরস্থান ব্যবহার হচ্ছে না। গ্রাম-পঞ্চায়েতের আর্জি খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট জানিয়েছে, এটি ওয়াকফ সম্পত্তি কোনোভাবেই দখল করা যাবে না এবং এই সম্পত্তিটির সংরক্ষণ করতে হবে।
বিচারপতি সুরেশ্বর ঠাকুর এবং বিচারপতি সুদীপ্ত শর্মার বেঞ্চে এই মামলা আসে। পাঞ্জাব ওয়াকফ বোর্ড ট্রাইব্যুনাল ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করার রায় দিয়েছিল, সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে মামলা আসে হাইকোর্টে। হাইকোর্ট ১৯৬৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের উল্লেখ করে জানায়, একবার কোনও কবরস্থান যদি জনসাধারণের ব্যবহার্যে প্রমাণ হয় তাহলে সেই স্থান জনসাধারণের। সেই কবরস্থান ওয়াকফের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই স্থান কখনোই অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবে না কেউ। যে উদ্দেশ্যে এই স্থান নির্দিষ্ট রাখা ছিল, সেই উদ্দেশ্যেই কাজে লাগাতে হবে।
বিবাদিত সম্পত্তিটি মহারাজা কাপুর থানার পক্ষ থেকে দান করা সম্পত্তি, কবরস্থান, মসজিদ ও তাকিয়ার জন্য এই জমি দেওয়া হয় ১৯২২ সালে। সুবে শাহর দুই পুত্র নিক্কে শাহ এবং সালামত শাহকে দান করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই দুইজন পাকিস্তানে চলে যায়। বিশাল সম্পত্তিটি ধীরে ধীরে পঞ্চাএয়তের অধীনে চলে আসে মসজিদে নামাযির সংখ্যাও কমতে থাকে। ১৯৬৬ সালে পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা এই সম্পত্তিটির রেকর্ড ঠিক করার জন্য মুসলিমরা আবেদন জানালে পুরানো দলিল হিসেবে সামনে আসে মহারাজার এই মহান অবদানের বিষয়টি। ১৯৬৬ সালে সম্পত্তির মালিক হয় রাজ্য সরকার। তবে সেখানে কবরস্থান এবং মসজিদ এটা রেকর্ড করতে বাধ্য হয় তৎকালীন সার্ভে টিম। সেই রেকর্ড এখনও বিদ্যমান। আর হাইকোর্ট সেই রেকর্ড সামনে তুলে ধরে রায় দিল কবরস্থান ও মসজিদ ছিল, আছে এবং থাকবে। রাজ্য সরকারকে এই ওয়াকফ সম্পত্তিটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। দেখতে হবে পঞ্চায়েত যেন এখানে কোনও ধরনের কবজা করতে না পারে।