৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্যাসে রান্না করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!  বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, বুধবার
  • / 22

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম প্রতিবেদক: বিজ্ঞানীরা বলছেন, রান্নার গ্যাসে রান্না করা  স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, গত কয়েক বছরে এমন অনেক প্রমাণ মিলেছে। এখন এর বিকল্প খোঁজার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা বলছেন, রান্নার গ্যাসের বিকল্প খোঁজার সময় এসেছে কারণ এমন প্রমাণ ক্রমাগত বেরিয়ে আসছে যে রান্নার এই পদ্ধতি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় এবং পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।

রান্নার গ্যাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ থাকলেও সাম্প্রতিক এক গবেষণার পর রান্নার গ্যাস কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা নিয়ে বিতর্ক জোরালো হয়েছে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে রান্নার গ্যাস থেকে নির্গমনের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের হাঁপানির ক্ষেত্রে ১২.৭ শতাংশ বা আটজনের মধ্যে একজন শিশুর হাঁপানির সমস্যা হয় রান্নার গ্যাস থেকে নির্গমনের কারণে।

 

 

বিজ্ঞানীরা চিন্তিত

 

এই বছরের শুরুতে, ইউএস কনজিউমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশন ঘোষণা করেছে যে তারা রান্নার গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের বিজ্ঞানীরা বলছেন, রান্নার গ্যাস নিয়ে উদ্বেগ ভিত্তিহীন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে, সহযোগী অধ্যাপক ডোনা গ্রিন বলেছেন যে, রান্নার গ্যাসের কারণে সৃষ্ট দূষণের বিষয়ে একটি বৈধ কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সাধারণত ওভেনে রান্না করি। এর অর্থ হল গ্যাসের কাছাকাছি মুখ থাকায় আপনি নিয়মিত দূষণের সংস্পর্শে আসছেন এবং সেটা স্বাস্থের জন্য ভালো নয়। এখন আমাদের কাছে বিকল্প আছে যেগুলো অনেক নিরাপদ এবং সেগুলো পরিবেশবান্ধব। অধ্যাপক গ্রীনের মতো ড. ক্রিস্টিন কাউইও এই উদ্বেগের সঙ্গে একমত হন এবং বলেন যে রান্নার গ্যাস থেকে দূরত্ব প্রয়োজন।

 

 

স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব

 

রান্নার গ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করা হয় কারণ এটি অনেক ধরনের দূষণকারী পদার্থ নির্গত করে। প্রফেসর গ্রিনের মতে, আপনি যখন গ্যাস পোড়ান, আপনি আসলে মিথেন গ্যাস পোড়াচ্ছেন, যা বিষাক্ত যৌগ তৈরি করে। রান্নার গ্যাসের প্রধান উপাদান হল মিথেন, যা জ্বালালে তাপ উৎপন্ন করে। এর সঙ্গে নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন একত্রিত হয়ে নাইট্রো অক্সাইড তৈরি করে।

প্রফেসর গ্রিন বলেছেন যে, এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুতর পরিণতি সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে হাঁপানি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে।

ড. ক্রিস্টিন কাউইও জানান যে রান্নার গ্যাস থেকে কার্বন মনোক্সাইড নিঃসরণ হয়ে বাতাসে অক্সিজেন হ্রাস করে এবং রক্তের অক্সিজেনও নষ্ট করে। এতে মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে।

 

 

পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক

 

 

রান্নার গ্যাস পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক প্রমাণিত হচ্ছে।২০২০ সালে রকি মাউন্টেন ইনস্টিটিউটের (আরএমআই) প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব বাড়িতে গ্যাসের উনুন আছে সেখানকার বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ৫০-৪০০ শতাংশ, কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ ৩০ গুণ এবং পিএম ২.৫ এর পরিমাণ দ্বিগুণ বেশি।

এই গবেষণাটির প্রধান গবেষক ব্র্যাডি সিলস বলেছিলেন, “সমস্যার বিষয় হলো, এই দূষণ খালি চোখে দেখা যায় না। ঘরের ভেতরের বায়ু দূষণের কোনো গাইডলাইনও নেই। একারণেই আমরা নিজেরাই এমন সব পণ্য ব্যবহার করি যা আমাদেরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” আবার  ২০২২ সালে, একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের উনুন থেকে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ অর্ধ মিলিয়ন গাড়ি থেকে নির্গমনের সমান।

 

এ কারণেই এখন বিজ্ঞানীরা রান্নার গ্যাসের বিকল্প খোঁজার ওপর জোর দিচ্ছেন। ইন্ডাকশন  ও বৈদ্যুতিক উনুনকে বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইন্ডাকশন স্টোভে, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক প্রভাব দ্বারা তাপ উৎপন্ন হয় এবং রান্নার গ্যাসের সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হিসাবে দেখা হয়। যদিও এটি একটি ব্যয়বহুল।

বৈদ্যুতিক উনুন নিয়ে বিজ্ঞানীরা কিছুটা সন্দিহান কারণ বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা পুড়িয়ে। সেজন্য শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে একটি ভালো বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

 

(তথ্যসূত্র DW, তর্জমায় রুবাইয়া জুঁই)

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গ্যাসে রান্না করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!  বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, বুধবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: বিজ্ঞানীরা বলছেন, রান্নার গ্যাসে রান্না করা  স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, গত কয়েক বছরে এমন অনেক প্রমাণ মিলেছে। এখন এর বিকল্প খোঁজার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা বলছেন, রান্নার গ্যাসের বিকল্প খোঁজার সময় এসেছে কারণ এমন প্রমাণ ক্রমাগত বেরিয়ে আসছে যে রান্নার এই পদ্ধতি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় এবং পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।

রান্নার গ্যাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ থাকলেও সাম্প্রতিক এক গবেষণার পর রান্নার গ্যাস কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা নিয়ে বিতর্ক জোরালো হয়েছে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে রান্নার গ্যাস থেকে নির্গমনের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের হাঁপানির ক্ষেত্রে ১২.৭ শতাংশ বা আটজনের মধ্যে একজন শিশুর হাঁপানির সমস্যা হয় রান্নার গ্যাস থেকে নির্গমনের কারণে।

 

 

বিজ্ঞানীরা চিন্তিত

 

এই বছরের শুরুতে, ইউএস কনজিউমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশন ঘোষণা করেছে যে তারা রান্নার গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের বিজ্ঞানীরা বলছেন, রান্নার গ্যাস নিয়ে উদ্বেগ ভিত্তিহীন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে, সহযোগী অধ্যাপক ডোনা গ্রিন বলেছেন যে, রান্নার গ্যাসের কারণে সৃষ্ট দূষণের বিষয়ে একটি বৈধ কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সাধারণত ওভেনে রান্না করি। এর অর্থ হল গ্যাসের কাছাকাছি মুখ থাকায় আপনি নিয়মিত দূষণের সংস্পর্শে আসছেন এবং সেটা স্বাস্থের জন্য ভালো নয়। এখন আমাদের কাছে বিকল্প আছে যেগুলো অনেক নিরাপদ এবং সেগুলো পরিবেশবান্ধব। অধ্যাপক গ্রীনের মতো ড. ক্রিস্টিন কাউইও এই উদ্বেগের সঙ্গে একমত হন এবং বলেন যে রান্নার গ্যাস থেকে দূরত্ব প্রয়োজন।

 

 

স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব

 

রান্নার গ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করা হয় কারণ এটি অনেক ধরনের দূষণকারী পদার্থ নির্গত করে। প্রফেসর গ্রিনের মতে, আপনি যখন গ্যাস পোড়ান, আপনি আসলে মিথেন গ্যাস পোড়াচ্ছেন, যা বিষাক্ত যৌগ তৈরি করে। রান্নার গ্যাসের প্রধান উপাদান হল মিথেন, যা জ্বালালে তাপ উৎপন্ন করে। এর সঙ্গে নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন একত্রিত হয়ে নাইট্রো অক্সাইড তৈরি করে।

প্রফেসর গ্রিন বলেছেন যে, এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুতর পরিণতি সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে হাঁপানি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে।

ড. ক্রিস্টিন কাউইও জানান যে রান্নার গ্যাস থেকে কার্বন মনোক্সাইড নিঃসরণ হয়ে বাতাসে অক্সিজেন হ্রাস করে এবং রক্তের অক্সিজেনও নষ্ট করে। এতে মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে।

 

 

পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক

 

 

রান্নার গ্যাস পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক প্রমাণিত হচ্ছে।২০২০ সালে রকি মাউন্টেন ইনস্টিটিউটের (আরএমআই) প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব বাড়িতে গ্যাসের উনুন আছে সেখানকার বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ৫০-৪০০ শতাংশ, কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ ৩০ গুণ এবং পিএম ২.৫ এর পরিমাণ দ্বিগুণ বেশি।

এই গবেষণাটির প্রধান গবেষক ব্র্যাডি সিলস বলেছিলেন, “সমস্যার বিষয় হলো, এই দূষণ খালি চোখে দেখা যায় না। ঘরের ভেতরের বায়ু দূষণের কোনো গাইডলাইনও নেই। একারণেই আমরা নিজেরাই এমন সব পণ্য ব্যবহার করি যা আমাদেরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” আবার  ২০২২ সালে, একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের উনুন থেকে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ অর্ধ মিলিয়ন গাড়ি থেকে নির্গমনের সমান।

 

এ কারণেই এখন বিজ্ঞানীরা রান্নার গ্যাসের বিকল্প খোঁজার ওপর জোর দিচ্ছেন। ইন্ডাকশন  ও বৈদ্যুতিক উনুনকে বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইন্ডাকশন স্টোভে, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক প্রভাব দ্বারা তাপ উৎপন্ন হয় এবং রান্নার গ্যাসের সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হিসাবে দেখা হয়। যদিও এটি একটি ব্যয়বহুল।

বৈদ্যুতিক উনুন নিয়ে বিজ্ঞানীরা কিছুটা সন্দিহান কারণ বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা পুড়িয়ে। সেজন্য শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে একটি ভালো বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

 

(তথ্যসূত্র DW, তর্জমায় রুবাইয়া জুঁই)