উগ্র-ডানপন্থী ডাচ এমপি ক্ল্যাভারেনের ইসলাম গ্রহণ
ইমামা খাতুন
- আপডেট :
২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার
- / 8

বিশেষ প্রতিবেদন: একসময় নেদারল্যান্ডসের উগ্র-ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন জোরাম ভ্যান ক্ল্যাভারেন। ২০১০-১৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিডম পার্টির নেতা হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। এমনকী নেদারল্যান্ডসের উগ্র ডানপন্থী নেতা গির্ট ওয়াইল্ডার্সেরও অন্যতম সহযোগী ছিলেন তিনি। কিন্তু ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে একটি বই লেখার সময় বদলে যায় ক্ল্যাভারেনের জীবন।
২০১৮ সালের অক্টোবরে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবরে অবাক হন সবাই। পরবর্তী সময়ে তাঁর বইটি ‘এপস্টেট: ফ্রম ক্রিস্টিয়ানিটি টু ইসলাম ইন টাইমস অব সেকুলারাইজেশন অ্যান্ড টেরর’ নামে প্রকাশিত হয়।
ইউরোপের দেশগুলোতে যখন পবিত্র কুরআনের কপি পোড়ানোর মতো জঘন্য কাজ চলছে তখন নিজ জীবনের কুরআনের প্রভাব ও নতুন দিগন্ত উম্মোচনের গল্প তুলে ধরেন তিনি। সম্প্রতি তুর্কি মিডিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর জীবনের নানা বিষয় জানিয়েছন।
১৯৭৯ সালে আমস্টারডামে জন্ম ভ্যান ক্ল্যাভারেনের। নেদারল্যান্ডসের ভিইউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মতত্ত্বে পড়াশোনা করেন তিনি। উদার ও সংস্কারপন্থী খ্রিস্টান হিসেবে তাঁর বেড়ে ওঠা। ছোট থেকেই বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিল ক্ল্যাভারেনের। কারণ তিনি মনে করতেন, ইউরোপের বুকে ইসলামের কোনও স্থান নেই এবং এ ধর্মের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করাই তাঁর মূল কাজ ছিল।
ক্ল্যাভারেনের কথায়, ‘একজন রাজনীতিবিদ ও সংসদের সদস্য হিসেবে আমি নেদারল্যান্ডসে মুসলিমদের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করেছি। এখানকার ইসলামিক স্কুল, মসজিদ, আযানসহ পবিত্র কুরআন পাঠ নিষিদ্ধে আইন করার দাবি তুলেছি। সব সময় ইসলামের ভয়াবহতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল ভিন্ন। রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে লেখালেখিতে মনোযোগী হই।’
ইসলামের বিষয়ে ঠিক কখন মনোভাবে বদল এল ক্ল্যভারেনের? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য যাচাই করতে গিয়ে কিছুটা অবাক হই। আমার ইচ্ছা ছিল আমার বইয়ের সব তথ্য সঠিক হবে। তাই সঠিক বিষয় জানতে বিখ্যাত স্কলার আবদুল হাকিম মুরাদের শরণাপন্ন হই।
আমার ধারণা ছিল, ইসলাম-বিদ্বেষী হওয়ায় তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। কিন্তু তাঁর সুন্দর উত্তর শুনে মুগ্ধ হয়ে পড়ি। তিনি কিছু বই পড়ার পরামর্শ দেন। এরপর আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলে যায়। এমনকি খ্রিস্টবাদ নিয়ে আমার অনেক সংশয়ের ইসলামি জবাবও পেয়ে যাই। সেই সময় নবী মুহাম্মদ সা.র জীবনীও পড়ে ফেলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক স্রষ্টা ও নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে আমি তখন প্রায় মুসলিম হয়ে পড়েছি। তবে আমার মধ্যে তখনও কিছুটা বিদ্বেষ ছিল। ইসলামকে সত্য জানলেও আমি তা গ্রহণ করতে পারছিলাম না। কিন্তু হঠাৎই একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। অস্বাভাবিক মনে হলেও তা সত্য ছিল।
একটি বই রাখতে গিয়ে সেখান থেকে কিছুবই পড়ে যায়। যেখানে পবিত্র কুরআনের একটি কপি ছিল। আর আমার বৃদ্ধাঙ্গুল ছিল কুরআনের একটি আয়াতের ওপর। তা ছিল আল্লাহর এই কথা, ‘তোমাদের চোখ তো অন্ধ হয়নি, বরং তোমাদের বক্ষে থাকা অন্তর অন্ধ হয়ে পড়েছে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৪৬)
এরপরই সব সত্য পানির মতো সাফ হয়ে যায় ক্ল্যাভেরেনর কাছে। মনের সব প্রশ্নের উত্তর একবারেই পেয়ে যান তিনি। ক্ল্যাভারেন বলেন, ‘এরপর আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে পথনির্দেশের প্রার্থনা করি। পরদিন ঘুম থেকে ওঠার পর সব ঘৃণা-বিদ্বেষ পুরোপুরি দুর হয়ে যায়।
আমি অন্তরে প্রবল শক্তি ও আনন্দ অনুভব করি। এরপর মা ও স্ত্রীকে আমার মুসলিম হওয়ার কথা জানাই। আমার ঘটনা প্রকাশের পর সবাই আমাকে হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু আমি সত্যের পথ ত্যাগ করিনা।’