পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ বরখাস্ত হওয়ার পরেই বিস্ফোরক জয়প্রকাশ মুখোপাধ্যায় সহ রীতেশ তিওয়ারি। মঙ্গলবার দীর্ঘ সময় ধরে চলা সাংবাদিক বৈঠক করে একের পর এক ক্ষোভ উগরে দিলেন জয়প্রকাশ। এমনকী বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর নাম না করে নিশানা করা হয় দুজনকে। এই বৈঠকে জয়প্রকাশ বিজেপির ওপরে তীব্র বিষোদগার উগরে দেন। ভোটের দিন থেকে শুরু করে, রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক রদবদল, মুকুল রায়ের তৃণমূলে যোগদান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই, বিধানসভা ভোটে বিজেপির হার সব কিছুকে সামনে এনে বিজেপিকে নিশানা করেন তিনি। এমনকী তোপের মুখে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে’ রাজনৈতিক ভোটকুশলী বলেও প্রশংসা করেন জয়প্রকাশ।
জয়প্রকাশ এদিন বলেন, আমাদের বরখাস্ত করা হল। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেই জানতে পারলাম আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমি দল বিরোধী কোনও কথা বলিনি, তবে শান্তনু ঠাকুরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকাই কি ছিল আমার অপরাধ? তাহলে এবার তো নরেন্দ্র মোদির পাশে দাঁড়াতে অমিত শাহ ভয় পাবে। আসলে বিজেপি শান্তনু ঠাকুরকে ভয় পেয়েছে। শান্তনু মতুয়া নিয়ে কথা বলা বিজেপির মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর নাম না করে জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, রাজ্য সভাপতি আড়াই বছর রাজনীতি করছেন, আর সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) দু’ বছর হল রাজনীতির ময়দানে। কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুঁড়ছে, আর রাজ্য বিজেপি নেতারা সংযোগহীন হয়ে পড়ছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতির মেয়াদ এক বছরের। দিলীপ ঘোষের একবছর মেয়াদ ছিল। রাজ্য সভাপতির পদে বসেই নতুন পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করা হল। এই প্রক্রিয়া নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। ৪২টি-এর ৩২ জন সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ নতুন সভাপতিদের জেলার লোকেরা চেনেই না।
জয়প্রকাশ এদিন বরখাস্ত প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে বলেন, বিজেপি কর্মীরা নিজেদের কষ্ট প্রকাশ করলেই তারা দলবিরোধী? আয়নায় তাকিয়ে বলতে হবে দলে শৃঙ্খলাভঙ্গ কে করল? কিছু জানতেই পারলাম না, অথচ বরখাস্ত করা হল। মিডিয়ার মাধ্যমেই জানতে পারলাম এই বরখাস্তের কথা। বরখাস্ত প্রসঙ্গে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জয়প্রকাশ বলেন, শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইন-কানুন সর্বনেশে। বিচারের আগেই শাস্তি। যারা বিজেপি পতাকা হাতে নিয়ে মার খেয়েছে, তারা কাচের ঘরে বসে কে কি বলল তাদের ভয় করে না।
জয়প্রকাশ মজুমদার এদিন বিধানসভা ভোটের কথা উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনে এই হার কেন হল, তা নিয়ে কোনও পর্যালোচনা হয়নি। জেপি নাড্ডা এত বলার পরেও জেলা কমিটি তৈরি হল না। ২ মে ফল ঘোষণার সময় বিকেল ৫টা পর্যত্ন গণনাকেন্দ্রে আমিই ছিলাম। বাংলায় বিজেপি কর্মীরা ভালো নেই, মার খাচ্ছে, পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বহু বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। কৌশল করে অনেক নতুন কর্মীর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। বিজেপির ভোটের হারের পর পর্যালোচনা করা হয়নি। খালি আদালত পর্যন্ত গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু আদালতের ওপর ভরসা করেননি, তিনি বামেদের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে নেমে লড়াই করেছেন।
একের পর এক কটাক্ষ করে জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ২০১৯-এ লোকসভা ভোটে বিজেপির উত্থান হয়। আসলে বিজেপির এই উত্থানকে অনেক নেতাই মেনে নিতে পারেননি। বিজেপিকে যারা দলের মধ্যে থেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের অগ্রাহ্য করা হয়। যারা একটা চিঠি লিখতে পারেন না, তাদের কাছ থেকে কোনও সার্টিফিকেট আমার দরকার নেই। যারা দলে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, তারাই এই কাজ করছেন।
এদিন জয়প্রকাশ প্রশ্ন তুলে দিয়ে বলেন, রাজ্য বিজেপিকে নাকি চালাচ্ছে এভিবিপি? অথচ রাজ্যে তাদের কোনও আন্দোলন নেই। রাজ্যে স্কুল বন্ধ, অথচ এভিবিপি’র কোনও আন্দোলন নেই কেন? জয়প্রকাশ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিজেপি নিজ কেন্দ্রীকতার ভুলেই এই ধরনের কাজ করছে। এখনও সময় আছে নিজেকে শুধরে নেওয়ার।
মুকুল রায় প্রসঙ্গে জয়প্রকাশ বলেন, ১১ জুন মুকুল রায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে যোগদান করলেন। তা নিয়ে বিজেপি দফতরে কেউ কোনও আলোচনা করার সাহস পাননি। দলবদলুদের যোগদান নিচুতলার কর্মীরা ভালোভাবে মেনে নেয়নি।