৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদ: নামাযিদের উপর পুষ্পবৃষ্টি হিন্দু ভাইদের

মাসুদ আলি
  • আপডেট : ৬ মে ২০২২, শুক্রবার
  • / 26

এই উত্তরপ্রদেশেই মসজিদে লাউড স্পিকারে আযান নিয়ে আপত্তি উঠেছিল। রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীতে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। সেই উত্তরপ্রদেশই সাক্ষী থাকল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অন্যন্য ছবির। যেখানে ঈদের নামায পড়ে ফেরা মুসল্লিদের উপর ফুল ছড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাল হিন্দু ভাইয়েরা। হিন্দু ভাইদের থেকে আকস্মিক এই অভিবাদন পেয়ে আপ্লুত মুসলিমরা। চলল পরস্পরকে ঘিরে আলিঙ্গনও। ঈদের দিন মোরাদাবাদে ফুটে উঠল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবচেয়ে সেরা ছবিটি।

ঈদের দিন মসজিদ থেকে ফেরা নামাযিদের উপর পুষ্পবর্ষণ করা হল মোরাদাবাদের ঠাকুরদ্বারায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন মুসলিম ভাইদের কাছে টেনে নিতে, আন্তরিকতায় মুড়ে দিতে চমকে দেওয়ার মতো কিছু কাজ করবেন। সেইমতো স্থানীয় একটি মসজিদে ঈদের নামায চলাকালীন আগে থেকেই তাঁরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। নামায শেষে মুসলিমরা যখন একে একে বেরিয়ে আসছেন, তখন তাঁদের দিকে ফুল ছুড়ে অভিবাদন জানাতে থাকেন হিন্দু ভাইরা। এই আকস্মিকতায় প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে রীতিমতো আপ্লুত হয়ে পড়েন মুসলিম ভাইরাও। যে উত্তরপ্রদেশে রামনবমী ও হনুমানজয়ন্তীতে ইট-পাথর নিক্ষেপ হয়েছিল, সেখানে ঈদের দিন তাদের উপর এভাবে যে পুষ্পবর্ষণ হবে তা তাঁরা ভাবতেও পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই হি¨ু ভাইদের থেকে এই আন্তরিক আপ্যায়ন পেয়ে তাঁরা অবিভূত।

জানা গিয়েছে, মুসল্লিদের উপর ফুল ছড়ানোর ব্যবস্থা করে এলাকার একটি ব্যবসায়ী সংগঠন। গৌরব চৌহান নামে সংগঠনের এক সদস্য জানিয়েছেন, দুই সম্প্রদায়ের মানুষ আমরা একই জায়গায় বসবাস করি। পরস্পরের উৎসবে শামিল হই বহু বছর ধরে। এই বছর আমাদের ইচ্ছে ছিল মুসলিম ভাইদের বিশেষ কিছু উপহার দেওয়ার। তাই আমরা এইভাবে অনুষ্ঠানটিকে সাজিয়েছি। তবে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ নামাযি ব্যক্তি জানান, ওইদিন মসজিদে ঈদের নামায পড়ে ফিরে আসছিলাম। তখনই এই ঘটনা ঘটে। আমাদের উপর পুষ্পবৃষ্টি করা হয়। হিন্দু ভাইদের থেকে এই ভালোবাসা পেয়ে আমরা খুশি। আমরা চাই উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে পারস্পরিক সহাবস্থান করতে। আমরা কোনও ভেদাভেদ মানি না।

ঠাকুরদ্বারার সার্কেল অফিসার অনুপ সিং ও মহকুমা বিচারক পরমানন্দ সিং জানান, দুই সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আমরা আগেই অনুরোধ করেছিলাম এমন কিছু করা হোক যাতে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান বেড়ে যায়। সেই মতো আগেই রামনবমীর একটি মিছিলে হিন্দু ভাইদের উপর পুষ্পবৃষ্টি করেছিল মুসলিমরা। এবার হিন্দু ভাইরা একইভাবে পুষ্পবৃষ্টি করে তাঁদের আন্তরিকতার মর্যাদা দিল। আমরা খুশি সাধারণ মানুষ ধর্ম-ভেদ ভুলে পরস্পরকে এই আন্তরিকভাবে কাছে টেনে নিয়েছে। সম্প্রীতির ভারতের ছবি এমনটাই হওয়া উচিত।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ঈদ: নামাযিদের উপর পুষ্পবৃষ্টি হিন্দু ভাইদের

আপডেট : ৬ মে ২০২২, শুক্রবার

এই উত্তরপ্রদেশেই মসজিদে লাউড স্পিকারে আযান নিয়ে আপত্তি উঠেছিল। রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীতে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। সেই উত্তরপ্রদেশই সাক্ষী থাকল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অন্যন্য ছবির। যেখানে ঈদের নামায পড়ে ফেরা মুসল্লিদের উপর ফুল ছড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাল হিন্দু ভাইয়েরা। হিন্দু ভাইদের থেকে আকস্মিক এই অভিবাদন পেয়ে আপ্লুত মুসলিমরা। চলল পরস্পরকে ঘিরে আলিঙ্গনও। ঈদের দিন মোরাদাবাদে ফুটে উঠল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবচেয়ে সেরা ছবিটি।

ঈদের দিন মসজিদ থেকে ফেরা নামাযিদের উপর পুষ্পবর্ষণ করা হল মোরাদাবাদের ঠাকুরদ্বারায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন মুসলিম ভাইদের কাছে টেনে নিতে, আন্তরিকতায় মুড়ে দিতে চমকে দেওয়ার মতো কিছু কাজ করবেন। সেইমতো স্থানীয় একটি মসজিদে ঈদের নামায চলাকালীন আগে থেকেই তাঁরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। নামায শেষে মুসলিমরা যখন একে একে বেরিয়ে আসছেন, তখন তাঁদের দিকে ফুল ছুড়ে অভিবাদন জানাতে থাকেন হিন্দু ভাইরা। এই আকস্মিকতায় প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে রীতিমতো আপ্লুত হয়ে পড়েন মুসলিম ভাইরাও। যে উত্তরপ্রদেশে রামনবমী ও হনুমানজয়ন্তীতে ইট-পাথর নিক্ষেপ হয়েছিল, সেখানে ঈদের দিন তাদের উপর এভাবে যে পুষ্পবর্ষণ হবে তা তাঁরা ভাবতেও পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই হি¨ু ভাইদের থেকে এই আন্তরিক আপ্যায়ন পেয়ে তাঁরা অবিভূত।

জানা গিয়েছে, মুসল্লিদের উপর ফুল ছড়ানোর ব্যবস্থা করে এলাকার একটি ব্যবসায়ী সংগঠন। গৌরব চৌহান নামে সংগঠনের এক সদস্য জানিয়েছেন, দুই সম্প্রদায়ের মানুষ আমরা একই জায়গায় বসবাস করি। পরস্পরের উৎসবে শামিল হই বহু বছর ধরে। এই বছর আমাদের ইচ্ছে ছিল মুসলিম ভাইদের বিশেষ কিছু উপহার দেওয়ার। তাই আমরা এইভাবে অনুষ্ঠানটিকে সাজিয়েছি। তবে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ নামাযি ব্যক্তি জানান, ওইদিন মসজিদে ঈদের নামায পড়ে ফিরে আসছিলাম। তখনই এই ঘটনা ঘটে। আমাদের উপর পুষ্পবৃষ্টি করা হয়। হিন্দু ভাইদের থেকে এই ভালোবাসা পেয়ে আমরা খুশি। আমরা চাই উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে পারস্পরিক সহাবস্থান করতে। আমরা কোনও ভেদাভেদ মানি না।

ঠাকুরদ্বারার সার্কেল অফিসার অনুপ সিং ও মহকুমা বিচারক পরমানন্দ সিং জানান, দুই সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আমরা আগেই অনুরোধ করেছিলাম এমন কিছু করা হোক যাতে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান বেড়ে যায়। সেই মতো আগেই রামনবমীর একটি মিছিলে হিন্দু ভাইদের উপর পুষ্পবৃষ্টি করেছিল মুসলিমরা। এবার হিন্দু ভাইরা একইভাবে পুষ্পবৃষ্টি করে তাঁদের আন্তরিকতার মর্যাদা দিল। আমরা খুশি সাধারণ মানুষ ধর্ম-ভেদ ভুলে পরস্পরকে এই আন্তরিকভাবে কাছে টেনে নিয়েছে। সম্প্রীতির ভারতের ছবি এমনটাই হওয়া উচিত।