উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,সুন্দরবন : এবার সুন্দরবন ভ্রমণে এসে সমস্যায় পর্যটকরা। জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি না মেলায় হতাশ অনেকেই। প্রতি বছর শীতের মরশুমে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ঢল নামে পর্যটকদের। কিন্তু এবার সুন্দরবন ভ্রমণে এসে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে অনেক পর্যটককেই। কারণ জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি মিলছে না।আর অনুমতি না মেলায় লোকালয় লাগোয়া নদী বক্ষে ভ্রমণ সেরেই ফিরতে হচ্ছে অনেককেই। আর সে কারণে ক্ষুব্ধ হতাশাগ্রস্থ পর্যটকেরা।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের জন পর্যটক সহ ১৫০টি লঞ্চ ও ভুটভুটি জঙ্গলে ভ্রমণের জন্য যেতে পারবেন। অনলাইনে বুকিং করেই তাঁরা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের জঙ্গল ও বন্য প্রাণ দেখার সুযোগ পাবেন। অনলাইনে নির্ধারিত পর্যটক সংখ্যা পূরণ হয়ে গেলেই আর মিলছে না কোনো বুকিং। ফলে সমস্যায় পড়ছেন পর্যটকেরা। হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁদেরকে। অথবা গভীর জঙ্গল লাগোয়া নদী, খাঁড়ির পরিবর্তে লোকালয় লাগোয়া এলাকায় নদীবক্ষে ভ্রমণ করেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হচ্ছে তাঁদেরকে।
আগে অফলাইনে মিলত পর্যটকদের অনুমতি। কিন্তু সম্প্রতি সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প সম্পূর্ণ অনলাইনেই বুকিং ব্যবস্থা চালু করেছে।পর্যটক পিছুঅনুমতি মূল্য, জলযানের অনুমতি মুল্য, গাইডের অনুমতি মূল্য সবই বাড়ানো হয়েছে সম্প্রতি। সে সবে সমস্যা না হলেও পর্যটকদের প্রবেশের উদ্ধসীমা বেধে দেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কারণ সারা বছর সেই পরিমাণ পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন না, যতটা আসেন এই শীতের ভরা মরশুমে। এখন প্রতিদিন গড়ে দশ থেকে বারো হাজারের বেশি পর্যটক আসছেন সুন্দরবন ভ্রমণে। সেখানে অর্ধেকের বেশি জঙ্গলের অভ্যন্তরে ভ্রমণের অনুমতি না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। সোদপুরের বাসিন্দা নির্মল সরকার, সুবোধ মজুমদাররা বলেন, “পরপর দুদিন চেষ্টা করেও অনলাইনে বুকিং করতে পারিনি। তাই হতাশ হয়েই এবার ফিরে যেতে হলো আমাদের।”এদিকে এই সমস্যার ফলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিদিনই বচসায় জড়াচ্ছেন পর্যটকরা।প্যাকেজ বুকিং করে এসে জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তাঁদের অনেকেই। ক্যানিং ও কুলতলির পর্যটন ব্যবসায়ী নিউটন সরকার, নিতাই রায়,নিমাই মন্ডল সহ আরো কয়েকজন বলেন, “ অন্তত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি বন দফতর এই ঊর্ধ্বসীমার নিয়ম শিথিল করতো তাহলেও কিছুটা সামলানো যেত। এখন প্রতিদিনই পর্যটকদের সাথে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। বেড়াতে এসে তাঁরা জঙ্গল দর্শন না করে ফিরে যাচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ ও করছেন”।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, “ জঙ্গলে আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি পর্যটকদের ঢুকতে দিতে পারি না। কারণ ওখানে বন্য প্রাণ রয়েছে। অতিরিক্ত জলযান প্রবেশে পরিবেশে দূষণ বাড়বে। ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষার জন্য,সুন্দরবনকে রক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগে অফলাইনে বুকিং চালু থাকায় নিয়ম থাকলেও তা কার্যকর হয় নি। কিন্তু এখন অনলাইনে সেই নিয়মের বাইরে কিছুই করা সম্ভব নয়।”আর এই ভরা মরশুমে সুন্দরবনে এসে হতাশ পর্যটকরা চায় সরকারি নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হোক।