সফিকুল ইসলাম (দুলাল): সংখ্যালঘু সমাজের উন্নয়ন এবং নানা সমস্যার সমাধানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশন বিভিন্ন সময়ে আলোচনা এবং পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে থাকে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল- সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো এবং তাদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা করা।
এই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল সার্কিট হাউসে বুধবার রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের উদ্যোগে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন ♣রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। বৈঠকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নানা সমস্যা যেমন- শিক্ষার সুযোগের অভাব, প্রশাসনিক এবং অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়গুলি উঠে আসে।
এ দিন সংখ্যালঘু কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- বিকাশ বড়ুয়া, শেহনাজ কাদরী, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ও নুজহাত যয়নাব (ডব্লিউবিসিএস এক্সিকিউটিভ)। বৈঠকে মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, কাজের বরাত পেতে ঘুষের প্রস্তাব
আসানসোলের সৈয়দ মাহফুজুল হাসান সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে সরব হন। খ্রিস্টান প্রতিনিধি ফ্রান্সিস খ্রিস্টান সমাজের প্রতি নানা বঞ্চনার বিষয় তুলে ধরেন। মুহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন উল্লেখ করেন, ‘আসানসোলে বহু উর্দুভাষী মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু সরকারি নোটিশ বা লিফলেট উর্দুতে না হওয়ায় তাদের সমস্যা হচ্ছে।’ মুহাম্মদ ইমরান আসানসোলের উর্দু মিডিয়াম স্কুলগুলোর বেহাল দশা তুলে ধরে জানান, ‘যেখানে ৪,৫০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে, সেখানে মাত্র ২২ জন শিক্ষক।’
বৈঠকে আসানসোলের বিশিষ্ট ইমাম ইমদাদুল্লাহ রশিদি রেলপাড়-সংলগ্ন এলাকার হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থা এবং উন্নত চিকিৎসা সেবার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানান, ‘ওই এলাকায় বহু সংখ্যালঘু মানুষের বাস হলেও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। যা তাদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে।’
আরও পড়ুন: আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, কাজের বরাত পেতে ঘুষের প্রস্তাব
জৈন ধর্মের প্রতিনিধি নিশান্ত বিশেষভাবে উল্লেখ করেন জৈন মঙ্কদের চলাচলের সময় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার বিষয়টি। তিনি তাঁদের নিরাপত্তার জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখেন, যা তাঁদের জীবনযাত্রা সহজ করবে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বংশধর সোনালি কাজী চুরুলিয়ার অব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি চুরুলিয়াকে ‘নজরুল তীর্থ’ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান, যাতে এই ঐতিহাসিক স্থানটি যথাযোগ্য মর্যাদা পায় এবং পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
জাতীয় শিক্ষক ড. কালিমুল হক সংখ্যালঘু শিক্ষার উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দেন। সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ হাসান ইমরান সমস্ত বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সমস্যার সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ নেবেন বলে জানান। তিনি এডিএম এবং ‘ডোমা’কে সংখ্যালঘু নাগরিকদের সমস্যার সমাধানে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি সংযোগ গড়ে তোলার বিষয়ে জোর দিতে বলেন।
এ দিন দ্বিতীয় পর্বে পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন ব্লকের বিডিও, সভাপতি ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের। ♣সংখ্যালঘুদের জীবনের মানোন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নতির লক্ষ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।