আবদুল ওদুদ
রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বরাবরই আন্তরিক মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের মু্খ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে যে সমস্ত প্রকল্প হাতে নিয়েছেন– যেগুলি এখন থেকে আর এমসডিপি প্রকল্পে নয়– এখন থেকে কাজ হবে ‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প’ বা এসইউপি’ মাধ্যমে। বুধবার এমনটাই জানালেন রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি। রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে যে সমস্ত প্রকল্পের কাজ চলছে বা শেষ হয়েছে– সেগুলিকে একটি প্রকল্পের অধীনে নিয়ে এসে তদারকির কাজ শুরু করল। বুধবার সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের দফতরে সমস্ত জেলাশাসক ও ডোমা অফিসারদের নিয়ে অনলাইনে উদ্বোধন করা হয়। ‘প্রগ্রেস মনিটরিং সিস্টেম’-এর কাজ কীভাবে হবে– তা হাতে-কলমে বুঝিয়ে দেন রাজ্য সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের বিশেষ সচিব সাকিল আহমেদ। তিনি বলেন– সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে রাজ্য সরকার যে সমস্ত কাজ করেছে– সেগুলি এখন থেকে ‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে কাজ হবে।
জেলা থেকে কলকাতা যেখানেই সংখ্যালঘু দফতরের কাজ হচ্ছে তার সবই ‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে চিহ্নিত হবে। কাজের জায়গায় যে বোর্ড লাগানো হবে সেটাও সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প নামে হবে।
সাকিল আহমেদ বলেন– ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়নে প্রায় ১ লাখ স্কিম নেওয়া হয়েছে। তার জন্য ৩–৮০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আগামী দিনে রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়নে কাজ করতে আরও নানা প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংখ্যালঘু দফতরের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে প্রাথমিক বক্তব্য রাখেন দফতরের প্রধান সচিব গোলাম আলি আনসারি। তিনি রাজ্য সরকারের ‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প’ বিশেষ সুবিধা নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প’-এর জন্য তৈরি প্রগ্রেস মনিটরিং সিস্টেমের উদ্বোধন করে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন– তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল অর্থাৎ ১০ বছরে ১ লাখ স্কিমের কাজ হয়েছে। তার জন্য ৩৮০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে এতবড় কাজ অতীতে হয়নি। মন্ত্রী বলেন– সংখ্যালঘু দফতরের কাজ ১৮টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলার ১৮৩টি ব্লকে হচ্ছে। আর এই সমস্ত ব্লকে এই এক লাখ স্কিম নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে ১৮–৪৯০টি অতিরিক্ত ক্লাস রুম– ৩৬০৩টি শৌচালয়– ৩০৩টি হস্টেল– ১৪০টি স্কুল বিল্ডিং– ৪০টি আইটিআই ভবন ৮টি পলিটেকনিক কলেজের ভবন নির্মাণ সম্ভব বয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান– গত ১০ বছরে রাজ্যে ১৩–৯৭৪টি অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার– ১০৯৯ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র– ২১–৮০৫টি পানীয় জলের প্রকল্প করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৮৯ কর্মতীর্থ– ২৫২টি বহুমুখী কমিউনিটি সেন্টার এবং ৬৩ হাজার ৫১৯টি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে।
মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন– এতদিন নানা কাজ নিয়ে অভিযোগ ছিল– ব্লক বলে আসত জেলা থেকে ফান্ড রিলিজ হয়নি– আবার জেলা আধিকারিকরা বলতেন– সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন থেকে এই অভিযোগ আর শুনতে হবে না। প্রগ্রেস মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্পে সমস্ত তথ্য আধিকারিক থেকে মন্ত্রীরা সকলেই সরাসরি দেখে নিতে পারবেন। মন্ত্রী গোলাম রব্বানি আরও বলেন– এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে সেটি বাস্তবায়ন করেছেন। আজ অর্থাৎ বুধবার থেকে এর পথচলা শুরু হল। স্পেশাল সেক্রেটারি সাকিল আহমেদ বলেন– এতগুলি প্রকল্প তদারকি করতে নানা অসুবিধা হচ্ছিল। এখন সেই সমস্যার সমাধান এক ক্লিকেই সম্ভব।
এ দিন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি– সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে যে কর্মতীর্থ চালু হয়েছে কিংবা যেগুলির কাজ অসম্পূর্ণ হয়ে রয়েছে তার রিপোর্ট ১৫ দিনের মধ্যে দফতরে জমা করতে হবে। কেন চালু হয়নি– কি অবস্থায় রয়েছে তার কারণও জানাতে হবে দফতরে।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন– সংখ্যালঘু দফতরের প্রধান সচিব গোলাম আলি আনসারি– অতিরিক্ত সচিব ওবাইদুর রহমান– বিত্ত নিগমের এমডি– মৃগাঙ্গ বিশ্বাস– রাজ্য হজ কমিটির কার্যনির্বাহী আধিকারিক মুহাম্মদ নকি– জুলফিকার হাসান– সাইদ আহমেদ প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের জেনারেল ম্যানেজার শামসুর রহমান প্রমুখ।