রফিকুল হাসান, ভাঙড়: বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের যে পরিকাঠামোয় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, তার ফলে গ্রামবাংলার বহু জায়গায় শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি উদ্যোগেও অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও রোগীদের সেবায় এই ধরনের একটি উদ্যোগ সামনে এল ভাঙড়ে। রবিবার এস আর ডায়াগনস্টিক এণ্ড পলিক্লিনিকের ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি ও রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান। সঙ্গে ছিলেন এস আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার এণ্ড পলিক্লিনিকের পরিচালক ও সত্ত্বাধিকারী হাজী আবদুর রউফ খান সহ বিশিষ্টরা। ভাঙড়ের বিবির আইট এলাকায় বাসন্তী হাইওয়ে সংলগ্ন সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে সব ধরনের আধুনিক সরঞ্জাম-সহ মানসম্পন্ন এই ডায়াগনস্টিক ও পলিক্লিনিকটি। এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হাজী আবদুর রউফ খান এই পরিকল্পনার ধারক, বাহক এবং বাস্তবে রূপকার।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার এণ্ড পলিক্লিনিকের পরিচালক হাজী আবদুর রউফ খানের সঙ্গে সউদি থেকে আগত হাকীমুল ইসলাম —- ছবি- খালিদুর রহিম
রবিবার ভাঙড়ের বিবির আইট-এ এস আর ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড পলিক্লিনিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিস্ময়করভাবে কলকাতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি, আহমদ হাসান ইমরান, বিধায়ক শওকত মোল্লা, আইএএস সাকিল আহমেদ, আইপিএস রাশিদ মুনির খান, স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণের স্পেশাল সেক্রেটারি আরশাদ হাসান ওয়ারসি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন এলাকা ও কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও চিকিৎসকরা। এদের মধ্যে ছিলেন ব্যবসায়ী সাকিল আহমেদ, মুহাম্মদ দাউদ, সৈয়দ মেহতাব হুসেন প্রমুখ।
তবে পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নমূলক কাজ, শিক্ষা, ব্যবসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যিনি সুদূর হিজাযের মক্কা শরীফ থেকে সকলকে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিচ্ছেন সেই হাকিমুল ইসলাম সাহেবও এই অনুষ্ঠানে হাজির থেকে প্রেরণাদায়ক এক ভূমিকা পালন করেন। তিনি এই জেলারই ভূমিপুত্র। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে আহমদ হাসান ইমরান বলেন, হাকিমুল ভাই আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে যেভাবে সকলকে নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাচ্ছেন তা সত্যিই বিরল। মূলত ভাঙড়ের এই ডায়াগনস্টিক ও পলিক্লিনিকের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তিনি আরবের হিজায থেকে এসেছেন। এই ধরনের কুরবানি কম লোকই করতে পারেন।
রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরানকে সম্মাননা প্রদান ছবি- খালিদুর রহিম
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি রাসূল সা.-এর হাদিস উল্লেখ করে বলেন, সব রোগের চিকিৎসা আছে। সমাজসেবার জন্য জনাব আবদুর রউফ খানের এই উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অসুস্থ হলে আমাদের দোয়া এবং দাওয়া দুই-ই দরকার। কেননা সেবার মধ্য দিয়ে মানুষ খুশি হলে আল্লাহ খুশি হবেন। ইসলামের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে তিনি মনে করিয়ে দেন ইবনে সিনা চিকিৎসা শাস্ত্রের জনকদের একজন ছিলেন। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে আমরা শিক্ষা ও গবেষণা থেকে দূরে সরে গিয়েছি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলায় আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা এখন ডাক্তার হচ্ছে।সমাজসেবায় এগিয়ে আসছেন। এই ধরনের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাঙড়ের মানুষের উপকারে আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ।
এদিন আবদুর রউফ খানের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান বলেন, স্বাস্থ্যই আমাদের সম্পদ। আবদুর রউফ সাহেব মানসম্পন্ন এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই ভাঙড় এলাকায় শুরু করেছেন। এতে সমস্তস্তরের মানুষের পরিষেবা পাবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইমরান সাহেব কুরআন ও হাদিসের কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, মৃত্যু ছাড়া প্রত্যেক রোগের ওষুধ আছে। প্রতি বছর বাংলা থেকে আমাদের ঘরের ১০০০-এরও বেশি ছেলেমেয়ে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ছে। সংখ্যালঘু সমাজকে তাদের উন্নয়নের মেধা ও অর্থকে সঠিক কাজে ব্যবহার করতে হবে তিনি মন্তব্য করেন।
বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন, ভাঙড় এলাকার ব্যাপকভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক মানোন্নয়ন ঘটছে। এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার দ্বারা ভাঙড় ও ক্যানিং এলাকার মানুষ বেশি উপকৃত হবেন।
রাজ্য পুলিশের ডিআইজি হেড কোয়ার্টার রাশিদ মুনির খান পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত ‘ইকরা’ শব্দের উল্লেখ করে বলেন, আমাদেরকে পড়াশোনা করতে হবে। যাতে আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা আইএএস, আইপিএস, ডাক্তার হতে পারে। তাঁর পরামর্শ, সংবিধান পড়ে আমাদের অধিকার জানতে হবে। তাহলেই আমাদের বাংলার মুসলিমরা এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
স্বাস্থ্য দফতরের স্পেশাল সেক্রেটারি আরশাদ হাসান ওয়ারসি বলেন, রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করার পর প্রাইভেট হাসপাতালের নিরাপত্তায় আর খুব একটা বিঘ্ন হয় না। তাঁর মতে, রোগী ও রোগীর পরিজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তার মধ্য দিয়েই এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।
এস আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড পলিক্লিনিকের পরিচালক হাজী আবদুর রউফ খান বলেন, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার করার। আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। বাজারমূল্য থেকে কম দামে সঠিক চিকিৎসা ও রিপোর্ট করাই আমাদের মূল লক্ষ্য বলে তিনি জানান।
হাজী আবদুর রউফ সাহেবের পুত্র ডা. সামিনুর ইসলাম খান ও কন্যা রুবিনা পারভীন বলেন, মানুষের সেবা দিতে আমার বাবা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। জানানো হয়, ডা. সামিনুর ইসলাম গরীব মানুষের জন্য সপ্তাহে একদিন এস আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফ্রি-তে রোগী দেখবেন।
এদিন অনুষ্ঠানের শেষলগ্নে উত্তরপ্রদেশ থেকে হাজির হন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সহসভাপতি হোসেন আহমেদ মাদানী সাহেবের পুত্র মাওলানা আশজাদ মাদানী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাধারণ সম্পাদক ক্বারী সামসুদ্দিন ও মুফতি সাহাবুদ্দিন। এদিন মাদানী সাহেব বলেন, গরীব মানুষের জন্য এই উদ্যোগ খুবই ভালো।
পাশাপাশি ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মাওলানা আশজাদ মাদানী বলেন, এটা খুব ঘৃণ্য চক্রান্ত। দেশজুড়ে এর প্রতিবাদ হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বাহারুল ইসলাম, জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মোক্তার শেখ, ব্যবসায়ী তথা হাজী আবদুর রউফ সাহেবের জামাতা আক্তার উদ্দিন মন্ডল-সহ স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা।