সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানো হলে দেশ শ্রীলঙ্কার মতো হবেঃ রঘুরাম রাজন

- আপডেট : ১ অগাস্ট ২০২২, সোমবার
- / 12
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: শৃঙ্খলমুক্ত উদার গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দেশের আর্থিক বিকাশের নিশ্চয়তা নিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গর্ভনর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজন। সংখ্যাগরিষ্ঠবাদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে রাজন বলেন শ্রীলঙ্কার দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রয়েছে। যেখানে বেকারত্বের সমস্যাকে আড়াল করতে সেখানকার শাসকশ্রেণি মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে চেয়েছিল সংখ্যা গরিষ্ঠ রাজনীতি করে। সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল অত্যাচার ও বঞ্চনার অন্ধকারে। কংগ্রেস পার্টির শাখা অল ইন্ডিয়া প্রফেশনাল কংগ্রেসের পঞ্চম সম্মেলনে রায়পুরে বক্তব্য রাখছিলেন রাজন। তিনি সেখানে বলেন, কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করার প্রচেষ্টা ভারতের পক্ষে মঙ্গলদায়ক হবে না। এর ফলে দেশ ভাগ হয়ে যাবে, বলে মন্তব্য করেন রাজন।
তিনি মনে করিয়ে দেন ভুললে চলবে না বিশাল সংখ্যক সংখ্যালঘু বাস রয়েছে ভারতে। এত বিশাল সংখ্যক মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা যায় না। এ ধরনের কোনও প্রচেষ্টা দেশের পক্ষে শুভ হতে পারে না।
‘ভারতের আর্থিক বিকাশের জন্য কেন শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীন গণতন্ত্রের প্রয়োজন’ শীর্ষক বক্তৃতায় বক্তব্য রা’ছিলেন রাজন। তিনি বলেন আমাদের দেশে উদার গণতন্ত্রের নামে যা ঘটছে তাতে আর্থিক বিকাশ কি সম্ভব? আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। অনেকে মনে করেন গণতন্ত্রের জন্য আজ ভারত এক এবং অভিন্ন এবং দেশে শক্তিশালী নেৃত্বত্ব ও এক নায়কতান্ত্রিক নেতৃত্ব হলেও ক্ষতি নেই। রাজন বলেন, কিন্তু তিনি মনে করেন না এই যুক্তি ঠিক। এটা একটা বস্তাপচা তত্ত্ব। আর্থিক বিকাশের অর্থ পন্য এবং পুঁজির উপর শুধুজোর দেওয়া নয়, জোর দিতে হবে মানুষের উপর এবং নতুন ধারনার উপর। দেশ আর্থিক অগ্রগতির প্রত্যাশিত লক্ষ্যে এগোতে পারছে না তার কারণ হল নীতি নির্ধারকদের কাছে কোনও নতুন চিন্তা ভাবনা নেই।
ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের প্রাক্তন মু’্য অর্থনীতিবিদ মনে করেন, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি শক্তিশালী না হলে আর্থিক বিকাশ সম্ভব নয়। রাজন বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ একনায়কতান্ত্রিকতাকে যেভাবে হোক পরাজিত করতে হবে।
সংখ্যালঘুদের যদি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয় তা হলে দেশে অসন্তোষ বাড়বে। তার সঙ্গে বিদেশি শক্তি ভারতে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করবে। দেশের বিভাজন ঘটবে।
আজ শ্রীলঙ্কাকে এই ধরণের রাজনীতির খেসারত দিতে হচ্ছে। উদারনীতি কোনও ধর্ম নয়। বরং সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মের যা কিছু ভালো তাই নিয়ে গঠিত হয় উদারনীতি। রাজন মনে করেন, শুধু কোভিডের জন্য ভারতের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়নি। কোভিডের প্রার্দুভাবের আগে থেকেই ভারতে অর্থনীতির স্বাস্থ্যভঙ্গ ঘটেছিল। বিশ্বের আর্থিক মন্দার আগে থেকেই ভারতের অর্থনীতির গতি শ্লথ হতে শুরু করেছিল।
কারণ, আমরা যুবকদের জন্য নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারিনি। কেন্দ্রের অগ্নিবীর প্রকল্পের বিরোধীতায় যুবকদের প্রতিবাদ প্রমাণ করে চাকরির জন্য আমাদের যুবকরা কতটা ক্ষুধার্ত। রেলের ৩৫ হাজার খালিপদের জন্য এখানে চাকরির আবেদন পড়ে ১ কোটি ২৫ লক্ষ। আরবিআইয়ের প্রাক্তণ গভর্নর মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘আত্ননির্ভর প্রকল্প’ বিগত দশকের চর্চিত চর্বন। যেখানে জোর দেওয়া হয়েছিল শারীরিক পুঁজির উপর। কিন্তু তৈরি করতে হবে ‘হিউম্যান ক্যাপিট্যালস’। অর্থনীতির দৌড়ে তারাই জিতবে যারা প্রকৃত সক্ষম। রাজন মনে করেন সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে পর্যাপ্ত খরচ করছে না। অনেকে স্কুলের মুখ দেখেন না। প্রকৃত শিক্ষিত করে তুলে আমাদের মানব সম্পদ তৈরি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন রাজন।