কাঠমান্ডু: প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব হারিয়েছে মোদি সরকার। এমনকি হিন্দুরাষ্ট্র নেপালও এখন ভারতকে ‘পাত্তা’ দিতে চাইছে না। মালদ্বীপ, পাকিস্তান, বাংলাদেশের সঙ্গে চলছে বাকবিতণ্ডা। এবার নেপাল আরও একধাপ এগিয়ে চিনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ভারতকে কোণঠাসা করতে চাইছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নিয়ে চিনের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে নেপাল। এতে নেপালে চিনের প্রভাব বিস্তারের পথ সুগম করেছে। প্রাথমিক বোঝাপড়ার সাত বছর পর এই নতুন চুক্তি প্রকল্পে যোগ দিল নেপাল। আর এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে জয়শঙ্কররা। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে. পি. শর্মা ওলি সোমবার থেকে বেজিংয়ে চার দিনের সফরে রয়েছেন। জুলাই মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তার প্রথম বিদেশ সফর। ঐতিহ্য ভেঙে তিনি প্রথম সফরের জন্য নয়াদিল্লির পরিবর্তে জিনপিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং চুক্তি চূড়ান্ত করেছেন।
নেপালে নির্বাচিত রাষ্ট্রীয় নেতা প্রথম কূটনৈতিক সফরে ভারত যাওয়াটা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই প্রথার ব্যত্যয় ঘটায় অস্বস্তি অনুভব করছে দিল্লি। ২০১৭ সালে নেপাল ও চিন বিআরআই প্রকল্পের জন্য একটি প্রাথমিক চুক্তি করেছিল। চিনের এই উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী অবকাঠামো ও বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। তবে, বিগত সাত বছরে কোনো প্রকল্পের পরিকল্পনা বা বাস্তবায়ন হয়নি, কারণ চুক্তির কাঠামো নির্ধারণ করা যায়নি এবং নেপালের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব ছিল।
নতুন চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা, যেমন সড়ক উন্নয়ন ও পরিবহন করিডর তৈরি এবং অর্থায়নের উপায় নিয়ে এগিয়ে যাবে। তবে ঋণ নিয়ে উদ্বেগ থাকায় নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলির জোট সরকারের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, নেপালি কংগ্রেস যেকোনও ঋণনির্ভর প্রকল্পে আপত্তি জানিয়েছে। তবে চিন এরই মধ্যে পোখরায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য নেপালকে ২১৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এটি কাঠমান্ডু থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং গত বছর এটি চালু হয়। চিন এই বিমানবন্দরকে বিআরআইয়ের সফলতার প্রতীক হিসেবে দাবি করলেও ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের অভাবে এটি সমস্যার মুখে পড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার একে একে মিত্র হারাতে বসেছে ভারত। শ্রীলংকা, মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশ নিয়ে খুব বেশি স্বস্তিতে নেই দিল্লি। নেপাল নিয়ে অস্বস্তি আগে থেকেই ছিল। তবে চিনের সঙ্গে কাঠমাণ্ডুর নতুন এই চুক্তি চিন্তা বাড়িয়েছে দিল্লির।বিআরআই প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কের বিশাল সংযোগ তৈরির পরিকল্পনা করছে চীন। সড়ক, রেলপথ ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে এশিয়ার বাকি অংশ এবং ইউরোপের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। বিশ্বের প্রায় ১৪০টি দেশ এই প্রকল্পে চিনের সঙ্গে থাকলে দেশটির ঘোলাটে বিনিয়োগনীতির কারণে এই প্রকল্পের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে আশঙ্কা করছে বেশ কিছু দেশ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে তুলনামুলক ছোট দেশগুলোর সার্বভৌমত্বেও আঘাত আসতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।