পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: কমিউনিস্ট চিনে উইঘুর মুসলিমদের উপর এবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এমনিতেই তাদের সংস্কৃতি, ধর্মপালন নিয়ে চিন সরকার লাগাতার ‘নির্যাতন’ ও ‘ব্রেনওয়াশ’ করে চলেছে। এমনকি বহু উইঘুরকে ‘সংশোধন’-এর জন্য ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদেরকে ‘সঠিক’ রাস্তায় ফেরানোর জন্য চলছে ব্যাপক নির্যাতন। বহু উইঘুর দেশ ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গিয়ে ঈমান ও প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করছেন। থাইল্যান্ডে পালিয়েছেন কয়েকশো উইঘুর। এছাড়া সিরিয়া, তুরস্কেও উইঘুররা গোপনে চলে যাচ্ছেন বলে খবর।
কিন্তু লালফৌজের রক্তচক্ষু তাদেরকে বাইরে যেতে দিতে চায় না। দেশের মধ্যেই নির্যাতনের মাধ্যমে সংশোধন করতে চায়। এবার উইঘুর মুসলিমদের বিদেশ ভ্রমণের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চিন। বিষয়টি দেশত্যাগের অধিকার লঙ্ঘন করছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। উইঘুর মুসলিমদের তুরস্কসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের শুধুমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কাজাখস্তানের মতো কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এ থেকেই চিনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
চিনের বাইরে থাকা উইঘুররা যদি শিনজিয়াং সফর করতে চান, তবে ‘ভ্রমণের উদ্দেশ্য’ ও ‘পরিবারের কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র’ জমা দিতে হয়। একজন উইঘুর ব্যক্তি জানান, বিদেশ ভ্রমণ শেষে তার বাবা দেশে ফেরার পর পুলিশ তাকে জেরা করে। জানতে চায় তিনি কার সঙ্গে দেখা করেছেন, কোথায় গিয়েছেন, কী কথা বলেছেন। এভাবেই মাত্রাতিরিক্ত সন্দেহের মধ্যে রাখা হচ্ছে তাদেরকে।
চিনের ভিসাপ্রক্রিয়াও উইঘুরদের জন্য অত্যন্ত কঠোর। উইঘুরদের ভিসার জন্য ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। শিশুদের উইঘুর ভাষা শিক্ষার স্কুলে পাঠানো নিয়েও রয়েছে চিনা নিষেধাজ্ঞা। এ কারণেও তাদের ভিসা বাতিল হতে পারে।
চিন গত এক দশক ধরে উইঘুর ও হুই মুসলিমদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে চিন ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিমকে আটক করেছে। প্রথমে চিন এসব আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও পরে এগুলোকে ‘সংশোধন কেন্দ্র’ বলে দাবি করে। উইঘুরদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও জাতিগতভাবে ঘনিষ্ঠ তুরস্ক।
তাই বহু উইঘুর চিন থেকে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। তবে একসময় তুরস্ক চিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও বর্তমানে বেজিংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করায় সমালোচনার মাত্রা কমিয়ে এনেছে। পরিবারের লোকেদের জিম্মি করে বিদেশে থাকা উইঘুরদের দেশে ফেরার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।