নয়াদিল্লি, ২৭ জানুয়ারি: খ্রিস্টান হওয়ার ‘অপরাধে’ গ্রামের ‘সর্বসাধারণের জন্য নির্ধারিত’ সমাধিস্থানেও দাফনে বাধা দিয়েছিল গ্রামবাসীরা। তাদের বক্তব্য ছিল, কোনও খ্রিস্টানকে তারা তাদের গ্রামে দাফন করতে দেবে না। কারণ, স্থানটি আদিবাসী হিন্দুদের। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেই মামলায় সোমবার রায় ঘোষণা করল শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। এদিন তারা গ্রাম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে শুধুমাত্র খ্রিস্টানদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে দাফনের নির্দেশ দিয়েছে। যদিও কেন মৃতের নিজের গ্রাম ছেড়ে ২০কিমি দূরের গ্রামে দাফন করা হবে, তা নিয়ে দুই বিচারপতির মধ্যে স্পষ্ট মতপার্থক্য হয়। কিন্তু, লাশটি যেহেতু ৭ জানুয়ারি থেকে মর্গে পড়ে রয়েছে তাই এই মামলাটিকে বৃহত্তর বেঞ্চে না পাঠিয়ে ২০কিমি দূরের কবরস্থানেই দাফনের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। স্বাভাবিকভাবেই সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তে ছত্তিশগড়ে তাদেরই ‘জয়’ দেখছে গেরুয়া শিবির।
দুই বিচারপতির একজন তাঁর রায়ে জানান, গ্রামে ‘শান্তি’ বজায় রাখতে ২০কিমি দূরে খ্রিস্টানদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে দাফন করা হোক। অপর বিচারপতি আপত্তি জানান। ফলে রায় ১-১ হওয়ায় মামলাটি নিয়ম মতো বৃহত্তর বেঞ্চে (তিন সদস্যের বেঞ্চ) যাওয়ার কথা ফয়শলার জন্য। কিন্তু, দুই বিচারপতিই জানান, মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে গেলে সেখানে ফের নতুন করে মামলার শুনানি করতে হবে। তাতে আরও বিলম্ব হবে। অন্যদিকে ৭ জানুয়ারি থেকে মর্গে লাশ পড়ে রয়েছে। সবার আগে এখন সেটি দাফন করা দরকার। তাই রায় নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও অবিলম্বে যে লাশটি দাফন করা প্রয়োজন তা নিয়ে দুই বিচারপতির মধ্যে কোনও মতপার্থক্য ছিল না। ফলে বৃহত্তর বেঞ্চে মামলা না পাঠিয়ে লাশ oুত দাফনের স্বার্থে ২০ কিমি দূরের কবরস্থানে দাফনের নির্দেশই দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্ট সোমবার ছত্তিশগড়ের বস্তারের এক খ্রিস্টান যাজক সুভাষ বাঘেলের দাফন সংক্রান্ত মামলায় একটি বিভক্ত রায় দিয়েছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, খ্রিস্টান যাজকের লাশ তাঁর গ্রাম কারাকওয়াল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের খ্রিস্টান কবরস্থানে দাফন করা হোক। পাশাপাশি, রাজ্য প্রশাসনকে দাফন-কাজে সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিবার খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে গ্রামের কবরস্থানে খ্রিস্টান যাজকের দাফনে আপত্তি জানায় গ্রামবাসীরা। ফলে যাজকের ছেলে রমেশ বাঘেল সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেন। কারণ, ছত্তিশগড় হাইকোর্টের রায় তিনি মানতে পারেননি। হাইকোর্টের বক্তব্য ছিল, গ্রামে দাফন হলে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এদিন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা বলেছিলেন যে ২০ কিলোমিটার দূরে কারাকওয়ালে খ্রিস্টানদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে যাওয়া উপযুক্ত হবে। গ্রামের পরিস্থিতির কথাও তাঁর সিদ্ধান্তের ভিত্তি করে তোলেন। একই সঙ্গে বিচারপতি শর্মা বলেন, কোনো মৌলিক অধিকারই নিরঙ্কুশ নয়। এর ব্যতিক্রমও আছে। কেউ জোর দিয়ে বলতে পারে না যে তিনি কেবল তাঁর দ্বারা নির্ধারিত স্থানেই শেষকৃত্য করবেন। যদিও বেঞ্চের অপর বিচারপতি বি ভি নাগারত্না বলেন, মৃত্যু জীবনের একটি পর্যায়। এটিকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। আমাদের সবার জীবনে একদিন মৃত্যু আসবে। পাশাপাশি তিনি, বস্তার নাগারথনা পুলিশের হলফনামার তীব্র নিন্দা করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল, কোনও ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানকে গ্রামে কবর দেওয়া যাবে না, এতে গ্রামের সম্প্রীতি ও শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। পুলিশের হলফনামা সংবিধানের ১৪ এবং ২১ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করেন বিচারপতি নাগারত্না। গ্রামের কবরস্থানের পরিবর্তে আবেদনকারীকে গ্রামেই তাঁর ব্যক্তিগত জমিতে দাফন করতে দেওয়া উচিত বলেও জানান তিনি।