পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভালবেসে মুসলিম যুবককে বিয়ে করতে চেয়েছিল এক হিন্দু যুবতী। আর এই বিয়েতে আপত্তি জানিয়ে আদালতে কেস করেছিল ওই যুবতীর পরিবার। তাদের অভিযোগ ছিল, পাত্রের বিয়ের বয়স হয়নি। তাই এই বিয়ে বাতিল করতে হবে। যদিও আদালত সে কথা মানতে চায়নি। কোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পাত্রের বিয়ের বয়স হলেই এই বিয়েতে আর কোনও সমস্যা থাকবে না।
তরুণী যা করতে চায় তাকে সেটা করার স্বাধীনতা দিতে হবে। সহজ কথায়, আদালত এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, শুধুমাত্র মুসলিমকে বিয়ে করেছে বলেই যেনতেনপ্রকারেণ সেই বিয়ে বাতিল করে দিতে হবে সেটা হতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই হাইকোর্টের সিদ্ধান্তে হতাশ পাত্রীর বাবা ও তাঁর সঙ্গে থাকা বজরং দলের মাতব্বররা।
এই মামলায় পাত্রীর বয়স ২০ বছর। পাত্রের ১৯। ভারতীয় আইনে ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ বছর। আর মেয়েদের ১৮। সেই হিসেবে পাত্রের বয়স কম এই কারণ দেখিয়ে মেয়ের বাবা বিয়ে বাতিল করতে চেয়ে বম্বে হাইকোর্টে আবেদন করেন। যদিও হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিন্দু তরুণী এক মুসলিমকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এটা ঠিক যে, ছেলের এখনও বিয়ের বয়স হয়নি। তাই বলে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ওই তরুণী কাকে বিয়ে করবে সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। আদালত তাতে নাক গলাতে পারে না। ওই তরুণীতে তার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। পাত্র বিয়ের বয়সে পৌঁছালে সেইসময় ওই যুবতী যদি তাকে বিয়ে করতে চায় তাতে আপত্তি করতে পারে না আদালত।
একইসঙ্গে বিচারপতি এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ওই যুবতীকে হেফাজতে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। শুধু তাই নয়, ওই যুবতীর দাম্পত্য জীবন যাতে সুখের হয় সেই কামনা করে বিচারপতি ভারতী ডাংরে ও বিচারপতি মঞ্জুষা দেশপান্ডের বেঞ্চ বলেছে, ‘আমরা কেবল তার সৌভাগ্য কামনা করতে পারি। আমরা তার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করব। সে যা করতে চায় তাকে করতে দিন।’
ওই যুবতী বর্তমানে মুম্বইয়ের চেম্বুরে একটি সরকারি মহিলা হস্টেলে রয়েছে। উল্লেখ্য, বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ওই যুবতী মুসলিম কিশোরের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছিল। এরপরই যুবতীর বাবা কোর্টে কেস করে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত তাকে হস্টেলে প্রেরণ করে। এদিকে, ওই মুসলিম কিশোরের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ অফিসারদের একাংশ তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে এবং এই সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই অভিযোগ ওঠার পরই মেয়েটিকে থানায় ডাকা হয়েছিল।
সেখানে তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি বজরং দলের লোকরাও উপস্থিত ছিল। পরিবারের চাপ, বজরং দলের মাতব্বরদের চাপ সত্ত্বেও ওই যুবতী নিজের অবস্থানে অনড় থাকে এবং তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে অস্বীকার করে। ফলে তাকে ফের হস্টেলে পাঠানো হয়।
এদিকে, ওই মহিলার বাবার আইনজীবী আদালতে জানান, ছেলেটি বিয়ের বয়সে পৌঁছাতে এখনও প্রায় ২ বছর বাকি। তাঁর মক্কেল নিজের মেয়ের জন্য একটি বিউটি পার্লার করে দিতে চান, যাতে সে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। পাশাপাশি, ওই যুবতী তার পরিবারের সঙ্গে থাকলেও এই ২ বছরে সে চাইলে তার প্রেমিকের সঙ্গে ফোনেও কথা বলতে পারবে। যদিও এই দুই প্রস্তাবেই সায় দেয়নি ওই যুবতী।
ফলে তাকে ফের হস্টেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এরপরই আদালত সাফ জানিয়ে দেয়, ওই যুবতীর ব্যক্তিস্বাধীনতায় যাতে কোনও হস্তক্ষেপ না হয় আদালত সেটাই নিশ্চিত করবে এবং সে যাকে বিয়ে করতে চাইবে তাকে সেটাই করতে দিতে হবে।