এই প্রথম বিশ্বকাপে হিজাব পরে খেলছেন বেনজিনা

- আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৩, শনিবার
- / 17
পুবের কলম প্রতিবেদক: নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই মুহূর্তে চলছে মহিলাদের ফিফা বিশ্বকাপ। আর সেই বিশ্বকাপে মরক্কোর হয়ে ইতিহাস রচনা করলেন নওহেলা বেনজিনা। ২০২৩ বিশ্বকাপের প্রথম হিজাব পরিহিতা ফুটবলার হিসেবে জার্মানির বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন নওহেলা বেনজিনা। দীর্ঘ সময় পরে হিজাব পরিহিতা হয়ে বিশ্বকাপে দেখা গেল কোনও মহিলা ফুটবলারকে। জার্মানির বিরুদ্ধে বদলি প্লেয়ার হিসেবে হিজাব পরিহিতা হয়ে খেললেন বেনজিনা। ম্যাচটিতে মরক্কো ৬-০ গোলে হেরে গেলেও হিজাব পরিহিতা হয়ে বেনজিনার ফুটবল মুগ্ধ করেছে মহিলা বিশ্বকাপকে। কিন্ত মহিলা বিশ্বকাপে হিজাব পরার অনুমতি কীভাবে এল?
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে কানাডার মুসলিম মহিলা ফুটবলার আসমাহান মনসুর ১১ বছর বয়সে হিজাব পরিহিতা হয়ে অটোয়ার একটি দলের হয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। যখন তিনি হিজাব পরিহিতা হয়ে মাঠে নামেন, রেফারি তাঁকে বারণ করেন। তাঁকে জানানো হয় হিজাব পরিহিতা হয়ে তিনি মাঠে নামতে পারবেন না। কারণ এতে নাকি বিপদ আছে। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া এটি ফিফার নিয়মবিরুদ্ধ। মনসুর আর খেলতে চাননি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন হিজাব পরিহিতা হয়েই খেলবেন। তাঁর দলও প্রতিবাদস্বরূপ নিজেদের তুলে নেয়। ফিফাও তখন হিজাব পরিহিতা হয়ে কাউকে খেলতে দিত না।
২০১০ সালে সিঙ্গাপুরে ইয়ুথ অলিম্পিক গেমসে ইরানের জুনিয়র মহিলা দলকেও হিজাব পরিহিতা হয়ে খেলতে নিষেধ করা হয়। এমনকি অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বে হিজাব পরিহিতা হয়ে খেলায় ইরানের মহিলা জাতীয় দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ফিফা। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনও হয়।
সমালোচকরা জানান, হিজাবে কোনও রকম ক্ষতি হয় না। বরং তা অনেকটাই বিধিসম্মত। ধর্মীয় রীতিনীতির ওপর কোনও বাধা আসা উচিৎ নয়। এমনকি ইয়ুথ অলিম্পিক গেমসে হিজাবের বদলে মাথায় টুপি পরে নামার অনুমতি দেওয়া হয়।
এরপর ২০১১ সালে জর্ডনের রাজপুত্র প্রিন্স আলি বিন আল হুসেইন ফিফার সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর হিজাব নিয়ে ফিফার মনোভাব নরম হয়। মহিলা ফুটবলে হিজাব পরার অনুমতি দেয় ফিফা।
২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড মহিলা অ্যাথলেটিকদের হিজাব পরিহিতা হয়ে ফুটবল খেলার বিষয়ে দুবছরের একটি ট্রায়ালের বন্দোবস্ত করে। ক্রীড়া সরঞ্জামকারী সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয় বিশেষ মাপের হেডস্কার্ফ তৈরি করতে, যাতে তা নিরাপদ ও দুর্ঘটনাবিহীন হতে পারে। দুবছরের ট্রায়ালের পর আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে হিজাব মোটেও বিপজ্জনক নয়।
২০১৪ সালে প্রথমবার মহিলা ফুটবলে হিজাব পরিহিতা হয়ে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়। জর্ডনে প্রথমবার অনূর্ধ্ব ১৭ মহিলা বিশ্বকাপের জন্য হিজাব স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে ফিফার বিভিন্ন মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় হিজাব অন্তর্ভুক্ত হয়। যদিও ফ্রান্সে এখনও মহিলা ফুটবলে হিজাব নিষিদ্ধ হয়েই আছে। কিন্তু ফিফা তাকে মান্যতা দিয়েছে। আর সেই হিজাব পরিহিতা হয়েই মরক্কোর মহিলা ফুটবলারের বিশ্ব মঞ্চে উপস্থিতি মহিলা ফুটবলকে আরও খানিকটা সম্মানিত করল।