অর্পিতা লাহিড়ী: গত ২৭শে নভেম্বর থেকে কলকাতায় শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত হস্তশিল্প মেলা। চলবে আগামী ২০ ডিসেম্বর অবধি। ইকো পার্কের ১ নং গেটের পাশে বিরাট জায়গা জুড়ে চলছে এই মেলা। কয়েক হাজার স্টলে লক্ষাধিক সামগ্রীর পশরা সাজিয়ে বসেছেন পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্ত থেকে আসা হস্তশিল্পীরা। ৪ঠা ডিসেম্বর শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল মেলা ইতিমধ্যেই জমজমাট হয়ে উঠেছে। উদরপূর্তির জন্য আছে বড় মাপের ফুডকোর্টও; পিঠে থেকে মোমো সবই ন্যায্য দামে উপলব্ধ। বোঝাই যায় আগামী ১ মাস এই মেলা হয়ে উঠতে চলেছে অবশ্য গন্তব্য
হস্তশিল্প মেলায় প্রবেশের মুখে একটু খানি থমকে গেলাম। একমনে পট এঁকে চলেছেন এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি।ক্যমেরার দেখেও তাঁর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অগত্যা একটু গলা তুলেই জানতে চাইলাম দাদা কি নাম , কি আঁকছেন এটা। অনন্ত পটুয়া ( নাম পরিবর্তিত) জানালেন পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এসেছেন, রাধা- কৃষ্ণের চিরন্তন ভালোবাসাই নাকি তাঁর পটের বিষয়। পাশাপাশি তাঁর হতাশা করোনা আর আধুনিক প্রযুক্তি গিলে নিচ্ছে বাংলার এই পটশিল্পকে। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন তিনি। অনন্তর কথায় “ মমতা দিদি আমাদের শিল্পীদের পাশে না দাঁড়ালে ভুখা পেটে মরতি হত গো মা”।
বাঁকুড়া থেকে ডোকরার কাজের শিল্প সামগ্রী নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন, এক দল শিল্পী। রয়েছেন সপরিবারে মা দুর্গা, ডোকরার এই শিল্পকর্মটির দাম ৯৯ হাজার টাকা।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে এসেছেন সুন্দরী দেবী। হোগলা দিয়ে একমনে বুনে চলেছেন ঝুড়ি। বীরভূম থেকে আসা দেবাশিস পশরা সাজিয়েছেন একতারা দিয়ে । ইংরাজি মাধ্যমে পড়া এক একরত্তি জীবনে প্রথম একতারা দেখে বেশ উত্তেজিত। একতারার ব্যাখ্যা ইংরিজিতে দিতে গিয়ে বেশ বেকায়দায় অসহায় পিতা। প্রতিটি জেলার একটি একটি নদীর নামে নামকরণ করা হয়েছে একএকটি প্যাভিলিয়নের।
রয়েছে বাংলার হারিয়ে যাওয়া পিঠে।রীতিমত চোখের সামনে ঢেঁকী ছাঁটা চালের গুড়ো থেকে বানানো হছে পিঠে। থাকুক না দেরী পৌষ পার্বনের, পিঠের স্বাদ নিতে অসুবিধে কোথায়। পিৎজা, বার্গারে মজে থাকা আধুনিক প্রজন্মকেও দেখা গেল কড়াইশুঁটির কচুরি আর আলুরদমে জিভ ভেজাতে।
তাহলে আর দেরী কেন হালকা শীতের ওম গায়ে মেখে ঘুরেই আসুন ইকো পার্কের রাজ্য হস্তশিল্প মেলায়। ( ছবিঃ প্রতিবেদক)