৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

 বাবার মৃত্যুর পর অটো চালিয়ে সংসারের হাল ধরলেন সুস্মিতা

রফিকুল হাসান
  • আপডেট : ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২, বৃহস্পতিবার
  • / 5

রেজাউল করিম, কালিয়াচক: গত ৮ মাস আগে বাবা রাজপতি মণ্ডল অসুস্থ হয়ে মারা যান। তারপর থেকেই সংসারে নিত্য অনটন। বাবা অটো চালাতেন। অটো এবং অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার ঋণ পড়েছিল সংসারের। বাবার মৃত্যুর পর অটোর আলাদা চালক রাখা হয়। কিন্তু রোজগার কিছুই হচ্ছিল না। তাই মেয়ে সুস্মিতা নিজেই স্টিয়ারিং ধরে নিয়েছে। প্রায় ৭ মাস ধরে অটো চালাচ্ছে সে। ঋণের সিংহভাগই শোধ করেছে এই অটো চালিয়েই। তার বাড়ি মোথাবাড়ি থানার রাজনগর মডেল এলাকায়।

গরিব পরিবারের মেয়ে সুস্মিতার বাবার মৃত্যুর পর নিজের পড়াশোনা মাঝপথে থমকে রয়েছে। কলেজের পড়ার ফর্ম ফিল আপের ১৭০০ টাকা জোগাড় করাও নাকি সম্ভব হয় নি। ভাইবোনদের যেন পড়াশোনা না আটকায় সেই লক্ষ্যে অটোর স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছে সুস্মিতা মণ্ডল। তার রোজগারের ওপরেই চলে সংসার, ভাইবোনদের পড়াশোনা। মেয়ে অটো চালক বলে মা এদিকে নিশ্চিন্তে বাড়িতে থাকতে পারেন না। তাই মেয়ের সঙ্গে পাশে বসে খালাসির ভূমিকা পালন করেন মা বুড়ি মণ্ডল।

স্বামীর মৃত্যুর পর ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন বুড়ি মণ্ডল। মায়ের কষ্ট দেখে নিজেই চালকের আসনে বসেন সুস্মিতা। রোজ রাজনগর মডেল থেকে কালিয়াচক,  সিলামপুর, অচিনতলা মোথাবাড়ি অবধি তাঁদের অটে নিয়ে ঘোরাফেরা। সকাল সকাল মা ও মেয়ে রান্নার কাজ শেষ করে বেরিয়ে পড়ে অটো নিয়ে। আবার সন্ধে নামার আগেই বাড়িতে ফিরে আসেন। আয় ৭০০-‌৮০০ টাকা হয়ে থাকে বলে তাঁদের দাবি। তারমধ্যে আবার নতুন করে সমস্যা, অন্যান্য কয়েকজন চালক চান না যে কোনও জায়গায় গাড়ি দাঁড় করানো যাবে না।

এই অবস্থায় মা বুড়ি মণ্ডলের প্রশাসনের কাছে দাবি, ‘‌চালকদের সবাই যে খারাপ তাও নয়, কয়েকজন ভাল চালক রয়েছেন।আমাদের সহযোগিতা করে থাকেন। এই অবস্থায় সরকারের কাছে আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমার লড়াই আমাকেই লড়তে হবে। শুধু একটাই সহযোগিতা চাই, আমাকে রুটের যে কোনও জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে যেন যাত্রী তোলার ব্যবস্থা করানো হয়।’‌ মেয়ে সুস্মিতা মন্ডল বলেন, ‘‌পরিবারকে বাঁচাতে আমাকে অটো চালানোর কাজে নামা। এ যুগে কেউ কারোর নয়। তাই নিজেদের লড়াই, নিজেদেরই লড়তে হবে। ভাইবোনদের পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করে তুলতেই হবে। শিক্ষত না হলে কোনও কাজেই আসবে না তারা।’

এদিকে কালিয়াচক-২ ব্লকের বিডিও রমল সিংহ বিরদি এই খবর জেনে অটো চালক তরুণীকে ডেকে সংবর্ধিত করল। এছাড়াও আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়ে সার্বিকভাবে পাশে থাকার বার্তা দিলেন।

 

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

 বাবার মৃত্যুর পর অটো চালিয়ে সংসারের হাল ধরলেন সুস্মিতা

আপডেট : ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২, বৃহস্পতিবার

রেজাউল করিম, কালিয়াচক: গত ৮ মাস আগে বাবা রাজপতি মণ্ডল অসুস্থ হয়ে মারা যান। তারপর থেকেই সংসারে নিত্য অনটন। বাবা অটো চালাতেন। অটো এবং অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার ঋণ পড়েছিল সংসারের। বাবার মৃত্যুর পর অটোর আলাদা চালক রাখা হয়। কিন্তু রোজগার কিছুই হচ্ছিল না। তাই মেয়ে সুস্মিতা নিজেই স্টিয়ারিং ধরে নিয়েছে। প্রায় ৭ মাস ধরে অটো চালাচ্ছে সে। ঋণের সিংহভাগই শোধ করেছে এই অটো চালিয়েই। তার বাড়ি মোথাবাড়ি থানার রাজনগর মডেল এলাকায়।

গরিব পরিবারের মেয়ে সুস্মিতার বাবার মৃত্যুর পর নিজের পড়াশোনা মাঝপথে থমকে রয়েছে। কলেজের পড়ার ফর্ম ফিল আপের ১৭০০ টাকা জোগাড় করাও নাকি সম্ভব হয় নি। ভাইবোনদের যেন পড়াশোনা না আটকায় সেই লক্ষ্যে অটোর স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছে সুস্মিতা মণ্ডল। তার রোজগারের ওপরেই চলে সংসার, ভাইবোনদের পড়াশোনা। মেয়ে অটো চালক বলে মা এদিকে নিশ্চিন্তে বাড়িতে থাকতে পারেন না। তাই মেয়ের সঙ্গে পাশে বসে খালাসির ভূমিকা পালন করেন মা বুড়ি মণ্ডল।

স্বামীর মৃত্যুর পর ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন বুড়ি মণ্ডল। মায়ের কষ্ট দেখে নিজেই চালকের আসনে বসেন সুস্মিতা। রোজ রাজনগর মডেল থেকে কালিয়াচক,  সিলামপুর, অচিনতলা মোথাবাড়ি অবধি তাঁদের অটে নিয়ে ঘোরাফেরা। সকাল সকাল মা ও মেয়ে রান্নার কাজ শেষ করে বেরিয়ে পড়ে অটো নিয়ে। আবার সন্ধে নামার আগেই বাড়িতে ফিরে আসেন। আয় ৭০০-‌৮০০ টাকা হয়ে থাকে বলে তাঁদের দাবি। তারমধ্যে আবার নতুন করে সমস্যা, অন্যান্য কয়েকজন চালক চান না যে কোনও জায়গায় গাড়ি দাঁড় করানো যাবে না।

এই অবস্থায় মা বুড়ি মণ্ডলের প্রশাসনের কাছে দাবি, ‘‌চালকদের সবাই যে খারাপ তাও নয়, কয়েকজন ভাল চালক রয়েছেন।আমাদের সহযোগিতা করে থাকেন। এই অবস্থায় সরকারের কাছে আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমার লড়াই আমাকেই লড়তে হবে। শুধু একটাই সহযোগিতা চাই, আমাকে রুটের যে কোনও জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে যেন যাত্রী তোলার ব্যবস্থা করানো হয়।’‌ মেয়ে সুস্মিতা মন্ডল বলেন, ‘‌পরিবারকে বাঁচাতে আমাকে অটো চালানোর কাজে নামা। এ যুগে কেউ কারোর নয়। তাই নিজেদের লড়াই, নিজেদেরই লড়তে হবে। ভাইবোনদের পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করে তুলতেই হবে। শিক্ষত না হলে কোনও কাজেই আসবে না তারা।’

এদিকে কালিয়াচক-২ ব্লকের বিডিও রমল সিংহ বিরদি এই খবর জেনে অটো চালক তরুণীকে ডেকে সংবর্ধিত করল। এছাড়াও আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়ে সার্বিকভাবে পাশে থাকার বার্তা দিলেন।