নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে নতুন করে সাম্প্রদায়িক অশান্তি বাঁধানোর ষড়যন্ত চলছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বিরোধীদের আগুন নিয়ে না খেলার জন্য সতর্কও করে দিয়েছেন। সিপিএম-বিজেপি এবং কংগ্রেসকে একই বন্ধনীতে ফেলে ‘পোকা, ধোঁকা ও বোকা’ বলে কটাক্ষের বাণ-ও হেনেছেন। পাশাপাশি আলিয়াকাণ্ড নিয়ে প্রথমবার মুখ খুলে যেমন পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন, তেমনই বিশ্বভাসরতীকাণ্ডে কেন সেখানকার উপচার্যকে গ্রেফতার করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন। এদিন রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়কে রমজানের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার বগটুইকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক সম্মেলনে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘আজ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। শ্রীলঙ্কায় আজ মানুষ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমি তুলনা করছি না। কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেও ভাল নয়। পাঁচ রাজ্যের ভোট মিটে যাওয়ার পরে ১৩ বার জ্বালানির দাম বেড়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে, পিএফের সুদ কমেছে। রেল থেকে সেল-সব কিছু বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। অনেক রাজ্য জিএসটির টাকা পাচ্ছে না। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে চিঠি দিয়েছেন। দেশের আর্থিক পরিস্থিতির কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা না ভেবে, ইডি-সিবিআইকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ইউক্রেন ফেরত ডাক্তারই পড়ুয়াদের পড়াবার টাকা নেই কেন্দ্রের। আমরা বলেছি টাকা দেব। তাও ওরা ছাড়পত্র দিচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করব, সুস্থ গণতন্ত্রের স্বার্থে, ভয়াবহ আর্থিক অবস্থার মোকাবিলায় সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বৈঠকে বসুন।’
রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন তুচ্ছ ঘটনাকে হাতিয়ার করে সংবাদমাধ্যমের একাংশ এবং বিরোধী দলগুলি যে নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে, তার সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খালি মমতার শাড়িতে কালি ছেটানোর পরিকল্পনা! কিন্তু মনে রাখবেন আমার শাড়িতে কালি ছেটালে আমিও কিন্তু মবিল ঢালতে জানি। নিজেরা মেরে, মৃতদেহ নিয়ে নবান্ন অভিযানের পরিকল্পনা বন্ধ করুন। খালি কুৎসা আর ষড়যন্ত্র। আসলে বিজেপি হচ্ছে বোকা। সিপিএম দিচ্ছে ধোঁকা আর কংগ্রেস হচ্ছে পোকা। নরকঙ্কালের মালা নিয়ে যাঁরা ৩০ বছর বাংলা শাসন করেছে, আজ সেই সিপিএম বড় বড় কথা বলছে। সবাইকে বলছি, আগুন জ্বালাবেন না। দয়া করে শান্তি বজায় রাখুন। মাথায় রাখবেন, বাংলা ভারতের বাইরে নয়।’
কয়লা ও গরু পাচার নিয়ে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি-সিবিআইয়ের অতি সক্রিয়তাকেও বিধেঁছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, অসম, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ থেকে গরুর গাড়ি আসছে। সীমান্ত দিয়ে তা বাংলাদেশে যাচ্ছে। সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে বিএসএফ। আর কয়লা খনি পাহারা দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা সিআইএসএফ। এখানে রাজ্যের দায়িত্ব কোথায়?’
গত কয়েকদিন ধরে আলিয়ার উপাচার্যকে নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি।
এদিন এ প্রসঙ্গে প্রথমবারের মতো মুখ খুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়া হচ্ছে। সেই ভিডিও কতটা সত্যি, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে না। আলিয়াতে যা ঘটছে, তা কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই ঘটনার কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আলিয়াতে যারা পড়াশোনা করে তারা সকলেই ভাল। কিন্তু সেখানেও ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ থাকতে পারে। যে কটু কথা বলেছে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমাদের এখানে পুলিশ অ্যাকশন নেয়। কিন্তু বিশ্বভারতীতে যা করছেন ভদ্রলোক, আমি ভদ্রলোকই বলব কারণ আমার মুখ দিয়ে যেন খারাপ কথা না বেরোয়। সেখানে কোনও অ্যাকশন হয়েছে? বিশ্বভারতীর ভিসি গ্রেফতার হয়েছেন?’