কলকাতাThursday, 12 May 2022
  1. আজকের শিরোনাম
  2. ইতিহাস-ঐতিহ্য
  3. ক্রাইম
  4. খেলা
  5. জেলা
  6. দেশ
  7. ধর্ম ও দর্শন
  8. পর্যটন
  9. ফোটো গ্যালারি
  10. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  11. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  12. বিনোদন
  13. বিশ্ব-জাহান
  14. ব্লগ
  15. ভ্রমণ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কৃষকের আড়ালে লুকিয়ে আছেন ভারতের একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, চিনে নিন ডা. মুনকির হোসেনকে

mtik
May 12, 2022 2:57 pm
Link Copied!

পুবের কলম প্রতিবেদক: বীরভূমের রাস্তায় খুব স্বাভাবিকভাবেই সকলের চোখে পড়বে সবুজ ক্ষেত। যেখানে কৃষিকাজে ব্যস্ত চাষিরা। গ্রাম বাংলায় যে চিত্র দেখতে আমরা হামেশাই অভ্যস্থ। তবে ক্ষেতে কাজ করতে দেখা যেতে পারে এক চাষিকে। পরনে রয়েছে ফতুয়া ও চেক লুঙ্গি। কৃষি জমিতে আপনমনে কাজ করতে ব্যস্ত তিনি। মনে হতেই পারে তিনি আর পাঁচ জনের মতো সামান্য চাষি। কিন্তু না। সেই পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এই ব্যক্তির আসল পরিচয়। সাধারণভাবে জীবনযাপন করা ব্যক্তিটি আসলে একজন বিজ্ঞানী। নাম ডা. মুনকির হোসেন। তিনি  একজন সুফি। যিনি প্রায় সারা বছর রোজা রাখেন।

 

আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আবদুল কালামের কথা। গ্রাম থেকে অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করে মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন তিনি।

 

বিজ্ঞানী ডা. মুনকির হোসেনও সেই গ্রাম বাংলা থেকেই একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পোস্ট ডক্টরেট রিসার্চ স্কলার ছিলেন তিনি। মুনকির হোসেনের শৈশবে পড়াশোনা শুরু হয় মামার বাড়ির গ্রাম ভিমপুর থেকে। স্কুলের জীবন শেষ করে একসময় তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করেন। এর পর তিনি পি এইচডি সম্পূর্ণ করেন। এর পর মুম্বইয়ের আইআইটি থেকে ডক্টরেট।

 

ডা. মুনকির হোসেন জানিয়েছেন, খুটখাইল গ্রামে তাঁর জন্ম। কিন্তু গ্রামে কোনও স্কুল ছিল না। কিছুদিন পর আমার ভাইয়ের জন্ম হয়। একসঙ্গে দু’ভাইয়ের পরিচর্যার অসুবিধার কারণে আমাকে মামাবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভিমপুরে। সেখানে ছিল একটি প্রাইমারি স্কুল। শৈশবের দিনগুলোর মধুর স্মৃতি মনে করে বিজ্ঞানী জানান, ওই প্রাথমিক স্কুলটি ছিল বলেই আমার পড়াশোনা করা সম্ভব হয়েছে। না হলে কি হত জানি না। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সব সময় আমার পাশে থেকে জ্ঞানের খিদে বাড়াতে সাহায্য করেন। তাঁদের মতো শিক্ষক পাওয়ার জন্যই আমি তাইওয়ান, জাপানের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পেরেছি।

 

ডা. মুনকির হোসেনের ৫৫টি রিসার্চ ওয়ার্ক জাতীয়, আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সকলের কাছে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত বিজ্ঞানী মুনকির হোসেন। একজন বিনয়ী অধ্যাপক হিসেবেও তিনি ছিলেন অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণা।

 

কর্মজীবনের একটা সময়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৬ সালে একজন সিনিয়র রিসার্চ স্কলার হিসেবে অবসর নেওয়ার পর ডা. মুনকির তাঁর গ্রামে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামে ফিরেই কৃষিকাজের পাশাপাশি মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারে কাজ শুরু করেন। জীবনের সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে ৬৭ বছর বয়সেই এই বিজ্ঞানী ভিমপুরে ৬০ বিঘা একটি জমি ক্রয় করেন দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার জন্য। তাঁর উদ্দেশ্য হল ধর্মনিরপেক্ষ জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া এবং এমন একজন পণ্ডিত তৈরি করা যারা সৎ নেতৃত্ব প্রদান করবে সমাজে। আমাদের প্রথম ব্যাচের ২৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে যারা এই বছর পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তাদের মধ্যে ২৫ জন প্রথম বিভাগ পেয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ এবং ছয়জন শিক্ষার্থী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে স্কোর করেছে।

 

শ্যামপুর সিদ্ধেশ্বরী মহাবিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ও বাংলা সংস্কৃত মঞ্চের সভাপতি সামিরুল ইসলাম বলেন,  ডা. মুনকির হোসেন একজন অতুলনীয় ব্যক্তি। এত বড় বিজ্ঞানী হয়েও তাঁর কোনও শখ, বিলাসিতা নেই। নিজের মোবাইল ফোনও নেই। ভাইয়ের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য অর্থ ব্যয় করেন।   আর সঞ্চয়ের বাকি টাকা দিয়ে শিক্ষার প্রচারের জন্য একটি জমি কেনেন।

 

ডা. মুনকির হোসেনের লক্ষ্য মা ও শিশুদের জন্য হাসপাতাল স্থাপন করা। শুধু তাই নয়, হাসপাতালটি যেখানে মহিলা প্রশাসক থাকবে ও মহিলা চিকিৎসকদের দ্বারা পরিচালিত হবে। ইতিমধ্যেই ৩৭ বিঘা জমি নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ২৩ বিঘা জমি মাতৃ সদনের জন্য নির্ধারিত রাখা হয়েছে। এই হাসপাতাল লাগোয়া একটি ইনস্টিটিউট তৈরি হবে। যেখানে স্কুল লেভেল থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও তারা ছাত্রাবাসের সুযোগ পাবে ।

ডা. মুনকির হোসেনের কথায়, আমাদের জীবনে  মা’ই হলেন প্রথম শিক্ষিকা। তাঁর হাত ধরেই শিক্ষায়-দীক্ষায় আমরা বড় হয়ে ওঠা। সহবৎ, জীবনের শিক্ষা আমাদের সেখান থেকেই শেখা। আমাদের লক্ষ্য একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র স্থানীয় গ্রামের মেয়েরাই এখানে শিক্ষা পাচ্ছে, কারণ আমাদের তাদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা নেই। আমি আশাবাদী যে, খুব শীঘ্রই দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছেলেদের মতো তারাও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার সহ শিক্ষা এবং হোস্টেল সুবিধা পেতে সক্ষম হবে। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে, যা আজ আমরা হারাতে বসেছি।

 

ডা. মুনকির হোসেন জানিয়েছেন, খুব দরিদ্র পরিবারে জন্মেছিলাম। নিজের জীবন ধারণের জন্য গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে সবজি আর আম চাষ করি। দিনের একবেলা না খেয়েও কাটিয়েছি। তাই আমি নিজে কম খেয়েও জীবন চালিয়ে নিতে পারব। কিন্তু আমি চাই না শিশুরা না খেয়ে থাকুক। শিক্ষাই দারিদ্র মুক্তির একমাত্র উপায়।

 

সারাজীবনে বিজ্ঞানী মুনকির হোসেনের বিলাসিতা বলতে দুটি প্যান্ট আর দুটি শার্ট। সেই দিয়ে গোটা বিশ্বে ঘুরেছেন তিনি। বাংলা সংস্কৃতির মঞ্চের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দুঃস্থদের কল্যাণ থেকে লকডাউন থেকে ঘুর্ণিঝড়, আমফানের সময় ত্রাণের কাজ চালিয়ে গেছেন।