পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বাবরি, জ্ঞানভাপী, শাহী মসজিদ, সম্ভলের পর এবার অটলা। বর্তমান রাজনীতিতে সবথেকে হট টপিক ‘মন্দির-মসজিদ’ ইস্যু। এই বিতর্কের অন্ত নেই। এবার অটলা মসজিদ’কে কেন্দ্র করে একটা মামলা প্রকাশ্যে এসেছে। ঘটনাস্থল সেই গো-বলয়, ‘যোগীরাজ্যে’। অভিযোগ, সেই একই। মন্দির ভেঙে মসজিদের নির্মাণ।
অটলা মাতার মন্দির ভেঙে নাকি মসজিদ নির্মাণ করেছে তৎকালীন শাসক! সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চলতি বছরে ‘স্বরাজ বাহিনী’ নামে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন জৌনপুরের সিভিল কোর্টে একটি স্যুট মামলা দায়ের করে। দাবি, ফিরোজ শাহ তুঘলক হিন্দু মন্দির ভেঙে এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। গত অক্টোবর মাসে জৌনপুরের ওই আদালত তার নির্দেশে জানায় যে কাশী ও মথুরায় মন্দির-মসজিদ মামলার মতোই আটালা মসজিদ সংক্রান্ত মামলার শুনানিও করা যেতে পারে।
এই রায়ের বিরোধিতা করেছে উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড। মন্দির ভেঙে মসজিদ করার মামলাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের স্বারস্থ হয়েছে মসজিদ কমিটি। তাঁদের দাবি, মসজিদ গুলোকে বেছে বেছে মন্দির দাবি করলেই সত্য পরবর্তন হয় না। ১৩৯৮বা তারও আগে এই মসজিদের নির্মাণকার্য শুরু হয়েছিল। এই জমি কোনওদিনই অন্য কোনও ধর্মের অনুসারীদের ছিল না। উল্লেখ্য, অটলা মসজিদ উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে ১৪ শতকের একটি মসজিদ। এটি শাহী কিলা দুর্গ থেকে ৩০০ মিটার দূরে এবং জামে মসজিদ থেকে ১ কিমি দূরে অবস্থিত।
১৩৯৮ বা তারও আগে ফিরোজ শাহের উদ্যোগে নির্মাণকাজ শুরু হলেও ১৪০৮ সালে জৌনপুরের সুলতান নাসেরুদ্দীন ইব্রাহীম শাহ শরকীর মাধ্যমে তা সম্পন্ন হয়। মামলা দায়ের করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি জানায়, মুসলিমদের মতো সনাতন ধর্মের মানুষদের উক্ত মসজিদে উপাসনা করার অধিকার আছে। কারণ ওইটা এক সময় হিন্দুদের মন্দির ছিল। দাবি, রাজা বিজয় চন্দ্র ১৩ শতকে অটালা দেবী মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। যেখানে নিয়মিত পূজা, সেবা এবং কীর্তনের মতো হিন্দু আচারগুলি করা হত।
১৪ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ফিরুজ শাহ তুঘলকের শাসনামলে মন্দিরটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আদালত-নিযুক্ত একটি দল ২৫ জুলাই সমীক্ষা করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল কিন্তু গেট বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হয়েছিল।বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দা জানিয়েছেন হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইস। তিনি বলেন, ছলে বলে কৌশলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ইতিহাস পরিবর্তন করার খেলায় মেতেছে কেন্দ্র সরকার। আর এই সব ঘটনার পিছনে আরএসএসের বড় হাত রয়েছে। বলা বাহুল্য, অযোধ্যায় যখন রাম জন্মভূমি আন্দোলন তুঙ্গে, সেই সময় একটা স্লোগান শোনা যেত- অযোধ্যা তো ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়।
বাংলায় এর তরজমা করলে দাঁড়ায়, অযোধ্যা তো শুরু মাত্র, এখনও কাশী-মথুরা বাকি আছে। যে বিষয়ের দিকে এই স্লোগানের ইঙ্গিত ছিল, তা হলো অযোধ্যা ইস্যুর নিষ্পত্তি হওয়ার পর কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ ও মথুরার শাহী ইদগাহ মসজিদের জায়গায় একসময় মন্দির ছিল এই দাবি তোলা। আর সেই সংক্রান্ত মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন।