Mon, July 1, 2024

ই-পেপার দেখুন

লোকসভা ভোটে লখনউয়ের শিয়া মুসলিম ভোটাররা প্রত্যাখ্যান করল বিজেপি-ঘনিষ্ঠ মাওলানাদের

ইমামা খাতুন

Published: 20 June, 2024, 08:44 PM
লোকসভা ভোটে লখনউয়ের শিয়া মুসলিম ভোটাররা প্রত্যাখ্যান করল বিজেপি-ঘনিষ্ঠ মাওলানাদের


লখনউ, ২০ জুন: এক সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায় কিংবা এক গোষ্ঠীকে অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা বিজেপির পুরনো কৌশল। কিন্তু সেই ‘ব্রিটিশি’ কৌশল আম-শিয়ারা ধরে ফেলেছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তার ফলও হাতেনাতে পেয়েছে বিজেপি।

শিয়া প্রভাবিত এলাকায় বিজেপির রাজনাথ উল্লেখযোগ্যভাবে কম ভোট পেয়েছে। মুসলিমদের দু’ভাগে ভাগ করে শিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়কে লড়িয়ে দেওয়ার অ্যাজেন্ডা পুরোপুরি ফ্লপ। বিজেপি খুবই সন্তর্পণে ‘শিয়ারা তাদের ভোটার’ প্রচারকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ২০১৪-লোকসভা নির্বাচনের পর লখনউয়ের শিয়া নেতারা বিজেপি সরকারের জো-হুজুরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
বিজেপি এবং সংঘ নেতারা প্রায়শই এমন কিছু শিয়া নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন। নিজেদের স্বার্থপূরণে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ শিয়া নেতারা এসব করে থাকেন। প্রায় বছর দশেক আগে প্রয়াত কালবে সাদিক সাহেবকে মোদি সরকার মরণোত্তর পদ্মভূষণে সম্মানিত করেছিল।

মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সহ-সভাপতি থাকাকালীন বলেছিলেন, মুসলিমরা বিজেপিকে মেনে নিতে পারে কিন্তু নরেন্দ্র মোদিকে নয়। কিন্তু মোদি ক্ষমতায় আসার পর, তাঁর ভাইপো এবং লখনউয়ের আসিফী মসজিদের শাহী ইমাম, কালবে জাওয়াদ হঠাৎই প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে পড়েন। এমনকি গুজরাটের মুসলমানদের মোদিকে ক্ষমা করা উচিত বলেও মন্তব্য করে বসেন তিনি।

মজার ব্যাপার হল এই চাচা-ভাতিজা একে অপরের প্রতিপক্ষ ছিলেন। কিন্তু স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বিজেপিকে সমর্থন করতে গিয়ে সব বিরোধিতা ভুলে হরিহর আত্মা হয়ে উঠেছিলেন। তৃতীয়বার দিল্লির তখতে বসেছেন মোদি। এখন দেখতে হবে তাঁর এই অতিভক্তির জন্য কী পুরস্কারে পুরßৃñত হন ইমাম কালবে জাওয়াদ। 
কংগ্রেসে তাঁদের প্রভাব যখন কমতে থাকে, তখন শিয়ারা বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির খোঁজ শুরু করে। শেষ পর্যন্ত জনসংঘকে তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মনে করতে শুরু করে। এই জনসংঘই পরে বিজেপিতে পরিবর্তিত হয়।  এরসঙ্গেই শিয়াদের ডিলারশিপ নেওয়া নেতারা বিজেপির দিকে ঝুঁকতে থাকে। আশির দশকে শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ায় আরব দেশগুলো কাজের জন্য তাদের বন্ধ দরজা খুলে দেয়। ফলে আরবে রুজির খোঁজে আসা শ্রমিকদের অর্থে সুন্নি মুসলমিরা

দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ওই অর্থের বলে লখনউয়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক অবস্থা দ্রুত পরিবর্তিত হয় এবং সুন্নি মুসলিমরা প্রায় সমস্ত সূচকে শিয়াদের পিছনে ফেলে দিয়েছে।  
স্বার্থপরতায় অন্ধ শিয়া ‘ডিলার’রা সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে নিহত মুসলমানদের জন্য কিংবা ইউএপিএ আইনে ধৃত কয়েক ডজন মুসলমানদের জন্য কখনও একটি শব্দ বলেনি। লখনউয়ের শিয়ারা প্রায় বছর পঞ্চাশ আগে ১৯৬৭ সালে লখনউ পশ্চিম বিধানসভা থেকে জয়ী জনসংঘ প্রার্থী লালু শর্মাকে সমর্থন করেছিল, আজও তাদের রাজনৈতিক আদর্শে তেমন কিছু বদল ঘটেনি। 
এই শিয়া ব্যবসায়ীরা রাজনাথ সিংকে ‘ভুল পার্টিতে সঠিক মানুষ’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রশ্ন হল, তিনি যদি সত্যিই সঠিক মানুষ হন, তাহলে তিনি কেন বিলকিস বানোর ধর্ষকদের সভ্য আখ্যা দিয়েছেন। কাঠুয়ায় আসিফার ধর্ষকের পক্ষে মিছিল করে নিন্দিত কাজকে যে দল সমর্থন করে সেই দল কেন ছাড়ছেন না  রাজনাথ সিং?  শিয়াদের অন্ধ সমর্থনের পুরস্কার হিসেবে রাজনাথ সিং কালবে সাদিককে পদ্মভূষণ এবং  ওয়াহেদুদ্দিন খানকে পদ্মবিভূষণ ‘পাইয়ে’ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিয়া এলাকায় কম ভোট পেয়েছেন রাজনাথ সিং। 

Leave a comment