মুম্বই, ২০ আগস্টঃ নারী নির্যাতন! নারী নির্যাতন! নারী নির্যাতন! দেশ থেকে রাজ্য সর্বত্র মহিলাদের যৌন হেনস্থা থেকে ধর্ষণ খবর শিরোনামে। 'নিরাপত্তা ব্যবস্থা' 'সুরক্ষা' শুধু গল্পে পড়া একটি শব্দ হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। সম্প্রতি পশ্চিমবাংলায় আরজি কর কাণ্ডে এক তরুণী ডাক্তারি পড়ুয়াকে নৃশংস নির্যাতনের পর ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে কলকাতার রাজপথ। আঁচ পড়েছে দেশ- থেকে বিদেশে। সেই ঘটনার উত্তাপের মধ্যে ফের মহারাষ্ট্রে যৌন হেনস্থার ঘটনা সামনে এল। স্কুলের শৌচালয়ের মধ্যেই চার বছরের দুই ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার ঘটনায় উত্তপ্ত মহারাষ্টের বদলাপুর। অভিযুক্ত স্কুলেরই ২৩ বছরের সাফাইকর্মী। অভিযুক্তের নাম অক্ষয় শিন্ডে।
এফআইআর দায়ের হওয়ার পর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চাপের মুখে সিট গঠন করে দ্রুত তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের শিন্ডে সরকার। অভিযোগ পুলিশ প্রথমে অভিযোগ নিতে গড়মসি করে, পরে স্থানীয়দের চাপে এফআইআর দায়ের হয়। ঘটনার চাপের মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রিন্সিপ্যাল থেকে ক্লাস টিচার, মহিলা সহায়িকাকে সাসপেন্ড করেছে।
কিন্তু আগুনে ঘি পড়ার মতো ক্ষোভে দপ করে জ্বলে বদলাপুর। সমস্ত ক্ষোভ গিয়ে পড়ে স্কুল ও বদলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। বেগতিক দেখে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে বদলি করে মহারাষ্ট্র সরকার। উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ জানান, একজন মহিলা আইজি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে সিট গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজ্য চেষ্টা করছে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে নিয়ে দ্রুত নির্যাতিতা শিশুদের বিচার পাইয়ে দিতে।
ওরা ‘নিরাপরাধ’, দিল্লি দাঙ্গায় অভিযুক্ত ১০ জনকে রেহাই দিল্লি কোর্টের
হিন্দু দোকানে 'নো হালাল ফুড' লেখা সাইনবোর্ড ঘিরে বিপত্তি
পোর্ট ব্লেয়ার এখন অতীত! ডাকা হবে শ্রী বিজয়পুরম নামে...
থানে জেলার একটি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে চার বছরের দুই শিশুকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে জ্বলে ওঠে বদলাপুর। জনরোষ আছড়ে পড়ে স্কুলে বাইরে। বিক্ষোভ দেখায় স্কুলশিশুদের বিক্ষুব্ধ অভিভাবক এবং স্থানীয় নাগরিকরা। প্রচুর পরিমাণে মহিলা ছিলেন তাঁদের মধ্যে। তাঁরাই এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা স্কুলে ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনায় জেলা শিশু ও মহিলা কল্যাণ দফতর হস্তক্ষেপ করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১ আগস্ট ওই সাফাইকর্মীকে স্কুলের কাজে নিয়োগ করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ছাত্রীদের শৌচালয়ে কোনও মহিলা অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন না। এছাড়া স্কুলের একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরাও অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ চলছিল। আচমকা কয়েকজন মহিলা-সহ বিক্ষোভকারীরা স্কুলে হামলা চালায়। স্কুলের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তারা স্কুলের জানালার কাচ, বেঞ্চ, দরজা-সহ বহু সম্পত্তি ভাঙচুর করে। এখানেই শেষ নয়।
প্রতিবাদের জনরোশ আছড়ে পড়ে বদলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। লোকাল ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় হাজার হাজার মানুষ। পুলিশ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে, মানুষের সমস্ত আক্রোশ গিয়ে পুলিশের উপরে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে। অটোরিকশা ইউনিয়ন, ব্যবসায়ী সমিতি এবং স্কুল বাস অপারেটররাও এই বনধে তাদের সমর্থন জানায়। তারপরেও লোকাল ট্রেন চলতে দেখে বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রতিবাদীদের অভিযোগ, পুলিশ এফআইআর করতে অনেক দেরি করেছে। অভিযোগ জমা পড়ার ১২ ঘণ্টা পরে কেন এফআইআর করা হল তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। রেল কর্তৃপক্ষ তাদের বোঝাতে এলে হিতে বিপরীত হয়। আন্দোলন হিংসাত্মক আকার নেয়। তাঁদের দাবি, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করাই যথেষ্ট নয়। ওই স্কুলের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দিতে হবে। ঘটনায় তীব্র বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আটকে থাকা ট্রেনগুলির দিকেও পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নিত্যযাত্রীরা।
পরে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রেলস্টেশনে আসেন সরকারি রেলওয়ে পুলিশ বা জিআরপি-র কমিশনার, রবীন্দ্র শিসভেও। ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিও চালায় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হলেও আবহাওয়া থমথমে। ঘটনার পর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার তৃণমূল কংগ্রেস।