বাতিল কর ওয়াকফ বিল, জেপিসিতে ৫০ লক্ষ ই-মেইল, এগিয়ে মহারাষ্ট্র
সামাজিক মাধ্যমে রাশ, অপছন্দের পোস্টে যাবজ্জীবন সাজার আইন আনছে যোগী
লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মুম্বই, জারি কমলা সতর্কতা
বিশেষ প্রতিবেদন: ইন্টারনেট যুগে দিন দিন মোবাইলে আসক্তি বাড়ছে শিশুদের। অনলাইনে পড়াশোনার কারণে মোবাইলের ব্যবহারও বেড়েছে। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়াও মোবাইলের ব্যবহার আসক্তিতে পরিণত হয়েছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। খেলাধুলো ছেড়ে সারাদিন মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ দিয়ে পড়ে থাকছে শিশুরা।
বিশেষজ্ঞরা গবেষণা চালিয়ে বলেছেন, স্ক্রিনে থাকার সময়সীমা কমালে শিশুদের মানসিক সুস্থতা দ্রুততার সঙ্গে উন্নত হবে। মাত্র দুসপ্তাহের গবেষণাতেই এই অভাবনীয় ফলাফল লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকদের দাবি, অতিরিক্ত ডিজিটাল ডিভাইসের ওপরে নির্ভরতা মানব জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ডেকে আনছে। অভ্যাস শুরু হয়ে যাচ্ছে শিশু বয়স থেকে।
ডিভাইসগুলি এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যা মানুষকে আকর্ষণ করেছে, একটা আটকে রাখার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। সারাদিন সেই মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখতেই রাখতেই দিন কেটে যাচ্ছে। শিশুদের মধ্যে বর্তমানে এই প্রবণতা অধ্যাদিক হারে বেড়েছে। শিশুদের মধ্যে চঞ্চলতা থাকা সত্ত্বেও একটি মোবাইল হাতে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে তারা। যখন ডিজিটাল যুগ ছিল না, তখন শিশুরা তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলো করত। কিন্তু এখন প্রতিটি বাড়িতে ডিজিটাল ডিভাইস রয়েছে। বলা ভালো বর্তমান সময় ডিজিটাল যুগ। তাই শিশুরা বাড়িতে সহজেই ইন্টারনেটের সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে, বাড়ির বাইরে পা রাখার প্রয়োজন মনে করছে না। ফলে ডিজিটাল গেজেটগুলি তাদের নিজেদের দিকে আটকে রাখছে। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি মস্তিষ্কে। শিশুরা সর্বদা প্রাণশক্তিতে ভরপুর থাকে, এবং ডিজিটাল গ্যাজেটগুলি এই শক্তি সম্পূর্ণরূপে ব্যয় করে না, পরিবর্তে তারা আরও অলস বোধ করতে থাকে।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ডেনমার্কের একটি নতুন গবেষণায় স্ক্রিন টাইম কমে যাওয়া এবং বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি নিয়ে এই সমস্ত বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে তিন ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম কমিয়ে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে আচরণে দ্রুত উন্নতি হয়েছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে,
গড়ে শিশুরা প্রতিদিন মোবাইলে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা বিনোদনের জন্য ব্যয় করে, তা গেম খেলা বা সিনেমা দেখাই হোক না কেন। গবেষণায় উপসংহারে বলা হয়েছে যে এটি ৩ ঘন্টা কমিয়ে তাদের মানসিকভাবে আরও স্থিতিশীল করে তোলে। মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিয়ে তারা বেশি চিন্তাশীল, সামাজিক হয়ে উঠবে। তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে ভালোভাবে সময় কাটাতে শুরু করে। গবেষকরা স্ক্রিন টাইম কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। মূল বিষয় হল সংযম এবং সীমানা নির্ধারণ। শিশুদের ব্যবহারের সীমা বুঝতে হবে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, যেমন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা, অস্বাস্থ্যকর এবং তাদের বিকাশকে স্তব্ধ করে দিতে পারে। সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আমরা চাই প্রতিটি শিশুর জীবন আরও মজাদার হোক। প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৩ ঘন্টা স্ক্রিন টাইম কমানো শিশুদের আচরণকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে। সেই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হঠাৎ করে যদি শিশুদের কাছ থেকে ডিজিটাল গেজেটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে তাদের আচরণে। তাই সব থেকে ভালো উপায় সচেতনভাবে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দেওয়া। কিন্তু সেই পরিবর্তন একজন অভিভাবক হিসেবে আপনাকে শুরু করতে হবে। কোনও কারণে শিশুটি রেগে গেলো, উত্তেজিত হল আর তক্ষুণি তার বায়না মেটাতে মোবাইল হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল, সেটি করা যাবে না। তার বদলে তাকে ধাঁধা সমাধান, গল্পের বই পড়ানোর অভ্যাস তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্যকর বিকল্প উপায়গুলিকে খুঁজতে হবে। অভিভাবকদের মনে রাখতে স্বল্প প্রচেষ্টা আপনাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।