পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ সাল, ৩৩১ বছর। উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলজুড়ে গৌরবোজ্জ্বল শাসন করে গেছে মুঘল শাসক গোষ্ঠী। মুঘল আমলে বহু দক্ষ-প্রতিভাধর সম্রাটের উত্থান-পতন হয়েছে। রাজ্য শাসনে রয়েছে তাদের অনেক কৃতিত্বের সাক্ষ্য। ইতিহাসে সে সময়কার সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্য হিসেবেও খ্যাতির শীর্ষ ছিল মুঘলরা। মুঘল সাম্রাজ্য সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া ঘিরে রেখেছিল শাসকশ্রেণীর দুঃসাহসিকতায়।
বর্তমান বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কিছু অংশসহ আরও অনেক অঞ্চল ছিল তাদেরই দখলে। তবে রাজনৈতিকভাবেই শুধু শক্তিশালী ছিল না মুঘল শাসকরা, সাম্রাজ্যের পরিবর্তন, সংস্কৃতি, সামাজিক জীবন ও স্থাপত্যের উন্নয়নে তাদের রয়েছে অসাধারণ স্বাক্ষর। একেক স্তানের ইতিহাস একেক রকম। এবং বলা বাহুল্য সেগুলি প্রায় সবই অদ্ভূত, আশ্চর্যময় এবং চিত্তাকর্ষক।
অনেক স্মৃতিসৌধ, মসজিদ ও দুর্গ নির্মাণ করে স্থাপত্যের স্বর্ণযুগে অবস্থান করে গেছেন মুঘল সাম্রাজ্যের অধিকাংশ শৈল্পিক মনের সম্রাট। এর সাক্ষী বহন করে আগ্রার তাজমহল, দিল্লির লালকেল্লাসহ নানা অসাধারণ সব স্থাপত্য। শৈল্পিকতা ও ধর্মীয় অনুরাগ থেকে তারা ভারত উপমহাদেশে অসংখ্য মসজিদও নির্মাণ করে গেছেন।
1. বাদশাহি মসজিদ
১৬৭১ থেকে ১৬৭৩ সালের মধ্যে লাহোরে নির্মাণ করা হয়েছিল বাদশাহি মসজিদ। সম্রাট আওরঙ্গজেব এটির অনুমোদন দিয়েছিলেন। লাহোর দুর্গের বিপরীতেই এর অবস্থান।
2.আগ্রার কেল্লা
এরকমই এক অদ্ভূত স্থাপত্য আগ্রার কেল্লা। এর আরেক নাম আগ্রার লাল কেল্লা। তাজমহল থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আগ্রার এই লাল কেল্লা মুঘল সাম্রাজ্যের অসাধারণ স্থাপত্যের নিদর্শন। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই কেল্লাটি UNESCO-র বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় জায়গা পেয়েছে সেই ১৯৮৩ সালে। আগ্রা দুর্গের স্থাপত্য অপূর্ব সুন্দর। কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে। শেষ হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে ঔরঙ্গজেবের সময়।
3.শালিমার বাগ
ভারতের জম্বু কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের অদূরে বিখ্যাত ডাল লেকের উত্তর-পূর্ব দিকের সংযোগ খালের পাড়ে মুঘল জমানায় গড়ে তোলা হয় প্রথম শালিমার বাগ। এ উদ্যানটি অনেক নামেই পরিচিত। কখনও শালিমার গার্ডেন, কখনও শালামার বাগ, কখনও ফারাহ বক্স এবং কখনও বা ফাইজ বক্স নামে এটি পরিচিত ছিল।
প্রখ্যাত মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর তার প্রিয়তমা সম্রাজ্ঞী নূর জাহানের মনোতুষ্টির জন্য ১৬১৯ সালে এ স্থাপনার গোড়া পত্তন করেছিলেন। এটিকে মুঘলদের উচ্চ মার্গের উদ্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। মুঘল আমলে এখানে সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার ছিল না। মুখ্যত রাজণ্যদের বিনোদন, বিশ্রামের জন্য এটি সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু এখন পুরো উদ্যানটি জন সাধারণের বেড়ানোর জন্য উন্মুক্ত। সম্রাট জাহাঙ্গীরেরই এক অনবদ্য সৃষ্টি। এ সৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা এবং প্রেমিকের প্রতি অনবদ্য প্রতিশ্রুতির এক প্রেমময় উপাখ্যান।
4.ফতেপুর সিকরি
ফতেপুর সিকরি ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলার একটি শহর। সাল ১৫৭১ থেকে ১৫৮৫ অবধি সম্রাট আকবর শহরটিকে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করেন। কিন্তু পরে পঞ্জাবের একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তা বাতিল করেন। ১৬১০ সালে শহরটি সম্পূর্ণরূপে বর্জিত করা হয়। সম্রাট বাবরও ফতেপুর সিকরি খুব পছন্দ করতেন। আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে, আকবর ফতেপুর সিকরি নির্মাণে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন এবং সম্ভবতঃ এর স্থাপত্যশৈলীর নির্দেশনাও দিয়েছিলেন।
5. বিবি কা মাকবারা (দ্বিতীয় তাজমহল):
স্ত্রী’র প্রতি অমোঘ ভালোবাসা প্রদর্শন করতে তাজমহল বানিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। এই নির্মাণের মাধ্যমে তাঁর স্ত্রী মমতাজের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন পুরো পৃথিবীর সামনে রাখতেই এই স্থাপত্য নির্মাণ করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান। মনোহরি কারুকার্জে তৈরি করেছিলেন গ্রেট তাজমহল। এর প্রায় অনেক বছর পর ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র আজম শাহ তার মা দিলরাস বানু বেগমের প্রতি ভালোবাসার নিদশর্ন রাখতে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের আওরঙ্গবাদে ১৬৫১-১৬৬১ খ্রিস্টাব্দকালে নিমার্ণ করেন দ্বিতীয় তাজমহল। যা দেখতে তাজমহলের মতো মনে হলেও এটির নাম বিবি কা মাকবারা।
6.চিনি কা রওজা
চিনি কা রওজা, যেখানে আফজাল খান শিরাজির সমাধি রয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের সম্মুখভাগটি চকচকে টালির কাজের জন্যও পরিচিত। যাকে মুঘল যুগের ভবনগুলিতে কাশী বা চিনি বলা হয়। বহিরাগত স্থাপত্য শৈলীর কারণে কাঠামোটির স্থাপত্য শৈলী অস্বাভাবিক সরল । একটি সুলতানি শৈলীর অস্বাভাবিক গম্বুজ রয়েছে এর মধ্যে। চিনের সমাধি নামেও পরিচিত, এটি আফজাল খানের সমাধি, যিনি জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে একজন পারস্য কবি ছিলেন । পরে শাহজাহানের রাজত্বকালে তিনি উজির হন । খান ১৬৩৯ সালে লাহোরে মারা যান এবং তাকে এখানে আগ্রায় সমাহিত করা হয় । সমাধিটি মক্কা শহরের দিকে মুখ করে নির্মিত ।
7. জাহাঙ্গীরের সমাধিসৌধ:
জাহাঙ্গীরের সমাধিসৌধ, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের শাহদারা বাগে অবস্থিত। এটি চতুর্থ মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সমাধি, যিনি ১৬০৫ হতে ১৬২৭ সাল পর্যন্ত মুঘল সম্রাজ্য শাসন করেন।
8.তাজমহল
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অমোঘ প্রেমের নিদর্শন তাজমহল পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি। স্ত্রী মমতাজের প্রতি অপরিমেয় ভালোবাসার নিদর্শন স্বরুপ, তার মৃত্যুর পর সমাধিস্থলে সম্রাট শাহজাহান এই বিশাল এবং অপূর্ব স্থাপনাটি তৈরি করেন। ভারতীয়, পার্সিয়ান এবং ইসলামিক প্রভাবকে একত্রিত করে নির্মাণ করা এই স্থাপনাটি মধ্যযুগীয় মোঘল স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।
9. আকবর সমাধি
মুঘল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রতাপশালী সম্রাট ছিলেন জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবর (১৫৫৬-১৬০৫ সাল)। সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল আসাম থেকে কাবুল এবং কাশ্মীর থেকে আহমেদনগর পর্যন্ত। তিনি ৪৯ বছর ভারতবর্ষ শাসন করেন। শাসনকালের শেষ দিকে আগ্রার লালকেল্লা, ফতেহপুর সিক্রি, লাহোরের লালকেল্লা, এলাহাবাদের লালকেল্লা ছাড়াও তৈরি করেন সিকান্দ্রাবাদের সমাধি ভবন। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই আকবর মারা যান। এরপর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৬১২ সালে। সিকান্দ্রার সমাধি ভবনে ৪০টি সমাধির জায়গা ঠিক করা হলেও আছে চারজনের—আকবর, আকবরের বোন, শাহজাহানের ছেলে ও মেয়ের। সমাধিতে আকবরের দেহাবশেষ না থাকলেও এখানে বেড়াতে আসা বেশির ভাগ দর্শনার্থী বিশ্বাস করে, সমাধিতে আকবর শায়িত আছেন।
10. মোতি মসজিদ
আগ্রার মোতি মসজিদ সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেন। এটি আগ্রা দুর্গে অবস্থিত। শাহজাহানের শাসনামলে মুঘল স্থাপত্য তার স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে। মুক্তার মত দ্যুতির জন্য এই মসজিদের নাম মোতি মসজিদ হয়েছে। এর গম্বুজ সংখ্যা তিন। এগুলো মার্বেল নির্মিত ও লাল বেলেপাথরের দেয়ালের উপর অবস্থিত। মসজিদটি নির্মাণে ১ লক্ষ ৬০ হাজার রুপি খরচ হয় এবং এতে চার বছর সময় লেগেছিল।
ভারতের আগ্রা তার বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ তাজমহলের জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত। যা ১৬৩১ থেকে ১৬৪৮ সালের মধ্যে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আদেশে তার প্রিয় স্ত্রীর স্মরণে নির্মিত হয়েছিল। তাজমহল হল ভারতের মুসলিম শিল্পের রত্ন এবং বিশ্বের ঐতিহ্যের সর্বজনীনভাবে প্রশংসিত একটি স্মৃতি সৌধ। অপর উল্লেখযোগ্য আকর্ষণীয় নিদর্শন হল হল ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধি। এই সমাধি আগ্রা শহরের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক স্থাপত্য বিস্ময়গুলির মধ্যে একটি। এই স্মৃতিস্তম্ভটি তাজমহলের পিছনে অনুপ্রেরণা হিসাবে বিবেচিত হয়। এই কারণে “বেবি তাজমহল” নামে পরিচিত। তাজমহল দেখার জন্য আগ্রায় আসা অনেক পর্যটক ইতমাদ-উদ-দৌলার সমাধিও খোঁজেন। মিল থাকা সত্ত্বেও, ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধিটিকে তাজমহলের চেয়ে আরও সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে মার্বেল জালির পর্দা এবং সূক্ষ্ম খোদাই রয়েছে। যমুনা নদীর তীরে নির্মিত বহু সমাধির মধ্যে এটিই প্রথম। ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধি উত্তরপ্রদেশের আগ্রা শহরে যমুনা নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। এই ঐতিহাসিক নির্মাণ তাজমহল থেকে মাত্র ২৫ মিনিট দূরে এবং আগ্রা ফোর্ট থেকে ১৪ মিনিট। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। যাইহোক, সূর্যাস্তের সময় স্মৃতিস্তম্ভ আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
বেবি তাজমহল
ভারতের আগ্রা তার বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ তাজমহলের জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত। যা ১৬৩১ থেকে ১৬৪৮ সালের মধ্যে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আদেশে তার প্রিয় স্ত্রীর স্মরণে নির্মিত হয়েছিল। তাজমহল হল ভারতের মুসলিম শিল্পের রত্ন এবং বিশ্বের ঐতিহ্যের সর্বজনীনভাবে প্রশংসিত একটি স্মৃতি সৌধ। অপর উল্লেখযোগ্য আকর্ষণীয় নিদর্শন হল হল ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধি। এই সমাধি আগ্রা শহরের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক স্থাপত্য বিস্ময়গুলির মধ্যে একটি। এই স্মৃতিস্তম্ভটি তাজমহলের পিছনে অনুপ্রেরণা হিসাবে বিবেচিত হয়। এই কারণে “বেবি তাজমহল” নামে পরিচিত। তাজমহল দেখার জন্য আগ্রায় আসা অনেক পর্যটক ইতমাদ-উদ-দৌলার সমাধিও খোঁজেন।
মিল থাকা সত্ত্বেও, ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধিটিকে তাজমহলের চেয়ে আরও সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে মার্বেল জালির পর্দা এবং সূক্ষ্ম খোদাই রয়েছে। যমুনা নদীর তীরে নির্মিত বহু সমাধির মধ্যে এটিই প্রথম। ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধি উত্তরপ্রদেশের আগ্রা শহরে যমুনা নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। এই ঐতিহাসিক নির্মাণ তাজমহল থেকে মাত্র ২৫ মিনিট দূরে এবং আগ্রা ফোর্ট থেকে ১৪ মিনিট। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। যাইহোক, সূর্যাস্তের সময় স্মৃতিস্তম্ভ আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।