পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ’র প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার রাত ১১.২৫ নাগাদ জীবনাবসার হয় তাঁর। মৃত্যুকালে বুদ্ধদেব গুহ’র বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বুদ্ধদেব গুহ৷ তারপরে তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ৩৩ দিন পর তিনি করোনামুক্ত হন। কিন্ত পোস্ট কোভিড সিনড্রোম-এর জন্য নানারকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। ৩১ জুলাই ভর্তি হন দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে। সেখানেই রবিবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সাহিত্য জগত ফের হারালো এক কালজয়ী স্রষ্টাকে।
কয়েকদিন আগে মারা যান বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষ। এরপরেই প্রয়াত হন বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ে স্ত্রী সোনামন মুখোপাধ্যায়। এবার বুদ্ধদেব গুহ’র মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সাহিত্য মহল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শোকবার্তায় জানিয়েছেন, ‘বিশিষ্ট সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি গতরাতে কলকাতায় প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য লেখক বুদ্ধদেব গুহর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ কোয়েলের কাছে, কোজাগর, একটু উষ্ণতার জন্য, মাধুকরী, জঙ্গলমহল, চরৈবেতি ইত্যাদি। এছাড়া তিনি বাংলা সাহিত্যের দুটি জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র- ঋভু এবং ঋজুদার স্রষ্টা।পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বুদ্ধদেববাবু পুরাতনী টপ্পা সহ বিভিন্ন সংগীতে পারঙ্গম ছিলেন। তাঁর বহু গল্প-উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার সহ বহু সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন।তাঁর প্রয়াণে সাহিত্য জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।আমি বুদ্ধদেব গুহর আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
ফিরহাদ হাকিম শোকজ্ঞাপন করে ট্যুইট করে লিখেছেন, ‘সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহের আকস্মিক প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। তাঁর পরিবার-পরিজন এবং অনুগামীদের আমার গভীর সমবেদনা জানাই।’
বুদ্ধদেব গুহ’র জন্ম ২৯ জুন, ১৯৩৬। তাঁর লেখায় মূলত স্থান পেয়েছে বন, অরণ্য এবং প্রকৃতি। তার স্ত্রী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ঋতু গুহ। বহু বিচিত্রতায় ভরপুর এবং অভিজ্ঞতাময় তার জীবন। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্বআফ্রিকা তার দেখা।
সাহিত্যিকের ছোটবেলা কেটেছে বরিশাল ও রংপুরে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপরিচিত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশুনা করেন।
বুদ্ধদেব গুহর পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল চাটার্ড অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত করেছিল। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের অডিশন বোর্ডের সদস্য হয়েছিলেন তিনি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। একদা বামফ্রন্ট তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগের বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ড পশ্চিমবঙ্গ বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ড এবং নন্দন উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য করা হয়েছিল। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে পরিচালন সমিতির সদস্যও নিযুক্ত হয়েছিলেন। বুদ্ধদেব গুহ খুব সুন্দর ছবি আঁকেন। নিজের লেখা একাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ তিনি নিজেই এঁকেছেন। গায়ক হিসেবেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।
‘জঙ্গলমহল’ তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। তারপর বহু উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লেখক হিসেবে খুবই অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তার বিতর্কিত উপন্যাস ‘মাধুকরী’ দীর্ঘদিন ধরে বেস্টসেলার। ছোটদের জন্য তার প্রথম বই- ‘ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে’। ঋজুদা তার সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় অভিযাত্রিক গোয়েন্দা চরিত্র। বুদ্ধদেব গুহ ‘হলুদ বসন্ত’ উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৬ সালে। তিনি শিরোমন পুরষ্কার ও শরৎ পুরষ্কারেও সম্মানিত হয়েছেন।
বুদ্ধদেব গুহ’র লেখা অন্যান্য উপন্যাসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, কোজাগর, আয়নার সামনে, অভিল্বাহিক, অববাহিকা, অবরোহী, অনবেষ, বাবলি, বাজে চন্দনপুরের কড়চা, বাংরিপোসির দু রাত্রির, বাসানাকুসুম, একটু উষ্ণতার জন্য, গুঞ্জা ফুলের মালা, হলুদ বসন্ত, চারুমতি, ছৌ, কুমুদিনী, পাখসাট, কোয়েলের কাছে, মান্ডুর রুপমতী প্রভৃতি।