পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে নিয়ে গোটা দেশজুড়ে বিতর্ক অব্যাহত। প্রধানমন্ত্রী মোদি থেকে শুরু করে বিজেপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র কাহিনিকে ইতিবাচক বলে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন।
এবার সেই কেরালা স্টোরিকে নিয়ে সরব হলেন সেই রাজ্যেই মানুষ। তাদের বক্তব্য কেরল রাজ্যের উন্নয়ন তুলে না ধরে কিছু ভ্রান্ত জিনিস মানুষের সামনে এনে তারা রাজ্যকে বদনাম করতে চাইছে।
রেহানা শাজাহান নামে কেরলের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, যারা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তারা নিজেরাই জানেন না, উগ্রবাদী
হিন্দুরা মুসলিমদের সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করে থাকেন। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’, উগ্রবাদী হিন্দুদের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আমরা যখন সোশ্যাল মাধ্যমে ওদের ধর্মান্ধতা নিয়ে সরব হই, তখন ওরা আর কিছুই বলতে পারে না। সেই কারণেই তারা ‘সুল্লি বাই-বুল্লি বাই’ অ্যাপ এনে আমাদের হেনস্থা করে। সিনেমাটিতে আমাদের নীরব রাখার হাতিয়ার বলে মনে করা হচ্ছে, কিন্তু মুসলিম মহিলাদের চুপ করানো যাবে না। একাংশ কেরলবাসীর মন্তব্য, সিনেমাটির সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। তারা কেরলের মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই সিনেমাকে অশ্লীল প্রচার বলেই মনে করছে। সিনেমার ট্রেলারের দেখানো হয়েছে, কেরলের ৩২ হাজার মহিলাকে ধর্মান্তরিত করে আইএসআইএস-এ যোগ দিতে পাঠানো হয়েছিল।
রেহানা শাজাহান বলেন, কেরলের আসল ঘটনা হল এই রাজ্যটিতে সাক্ষতার হার সর্বোচ্চ, স্বাস্থ্য পরিষেবার হার উন্নত, দ্রারিদ্র্য সর্ব নিম্ন, পর্যটনের জন্য সারা দেশের কাছে পরিচিত কেরল। কিন্তু দ্য কেরালা স্টোরি রাজনৈতিক দিক দিয়ে এই রাজ্যকে সমগ্র বিশ্বের কাছে দেশবিরোধী কার্যকলাপ হিসেবেই দেখাতে চেয়েছে।
কিন্তু কেরল বহু-ধর্মীয় ভাষাভাষি বহু-জাতিগত পরিচয়ের জন্য গর্বিত। সিনেমাটি শিরোনামই কেরল রাজ্যের সম্মান ক্ষুন্ন করেছে। যেখানে আমি কেরলের একজন বাসিন্দা হয়ে, ২০২০ সালে একদিনে ৮১টি অনলাইন সার্টিফিকেট কোর্স করে প্রথম ব্যক্তি হয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছি, সেখানে এই সিনেমা কিভাবে কেরলের নামে ভ্রান্ত ধারনা ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।
এই প্রসঙ্গে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কেরলের বাসিন্দা মুবাশির বলেন, এই সিনেমা আসলে উত্তর ভারতে কিছু মানুষ কিভাবে কেরলকে দেখতে চায় তা দেখানো হয়েছে। সিনেমাটি কেরলের একটি কুসংস্কারপূর্ণ চিত্রের বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করা হচ্ছে। কেরল উত্তর ভারতের থেকে অনেকাংশেই আলাদা। খ্রিস্টান ও হিন্দুদের বাড়িগুলির পাশেই রয়েছে মুসলিমদের বাড়ি।
তবে উত্তর প্রদেশের মতো উত্তর ভারতের রাজ্যে এটি কল্পনা করা খুব কঠিন। আমরা উত্তর ভারতে যে বিভাজন দেখতে পাচ্ছি, দক্ষিণ ভারত সেইগুলি কোনওদিন ভাবতেও পারবে না। উত্তর ভারতের রাজনীতিতে হিন্দু ভোট পাওয়ার জন্য যে বিদ্বেষের রাজনীতি করা হয়, সেটা দক্ষিণ ভারতে হবে না। এই সিনেমা মুসলিম সমাজকে ব্যথিত করেছে।
মুবাশির বলেন, এই সিনেমা এমনভাবে শেষ হচ্ছে যে যা সাধারণ মানুষের জীবনে হিংসা ছড়াচ্ছে, বাস্তব সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই সিনেমার একমাত্র উদ্দেশ্য বিদ্বেষ ছড়ানো। সিনেমা দেখে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার পরে আপনি যদি কোনও হিজাব পরা মহিলা, দাড়িওয়ালা বা পায়জামা-কুর্তা পরা কাউকে দেখেন তাহলে আপনার মনেও সেই বিদ্বেষ আসতে পারে।