৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানের ভবিতব্যও কি ইরানের পথে?

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৩, শনিবার
  • / 8

আহমদ হাসান ইমরান: পাকিস্তানে চলছে রাজনৈতিক ডামাডোল। অর্থনৈতিক কাঠামোও ভেঙে পড়েছে। ইমরান খানের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে পশ্চিমা মদতে বসানো হয়েছে শাহবাজ শরীফের সরকারকে। যেসব প্রাদেশিক কিংবা উপনির্বাচন হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ইমরান খান এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সবথেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ।

অন্যদিকে তাঁর দল পিটিআই ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন সরকার এখন মামলা দিয়ে ও নানা ধরনের চাতুরির মাধ্যমে বিরোধী দলগুলির নেতাদের কারাগারে ঢুকাতে উঠে পড়ে লেগেছে। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন শাহবাজ শরীফের এখন একমাত্র আশা, যদি আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড থেকে ঋণ এবং রেয়াত পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো অর্থনীতি একেবারে শ্রীলঙ্কার মতো ভেঙে পড়বে না। আইএমএফ পাকিস্তানকে কিছুটা সাহায্য করতে রাজি আছে। কেন না, গদিতে রয়েছে তাদের প্রিয় আস্থাভাজন শাহবাজ শরীফের সরকার।

কিন্তু আইএমএফ-এর নানা শর্ত রয়েছে। শর্তগুলি অনেকটা ইরানের উপর চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক অবরোধের মতো। আইএমএফ বলছে, পাকিস্তানকে তাদের পারমানবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেইসঙ্গে পাকিস্তান পারমানবিক অস্ত্রবাহী যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, সেই পরিকল্পনা ইসলামাবাদকে পরিত্যাগ করতে হবে। আর এই ধরনেরও কথা একইসঙ্গে উচ্চারণ করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানের যেসমস্ত পরমাণু অস্ত্র রয়েছে তা মোটেই নিরাপদ নয়। এই অস্ত্র অন্যদের হাতে চলে যেতে পারে। কিংবা জঙ্গি হানার শিকার হতে পারে।

পাকিস্তানের হাতে এখন রয়েছে পরমাণু অস্ত্রবাহনে সক্ষম দূরপাল্লার শাহীন-৩ মিসাইল। শাহীন-৩ মিসাইলের পাল্লা হচ্ছে ২৭৫০ কিলোমিটার। এই মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লায় রয়েছে ইসরাইলসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।

পাকিস্তান সরকারের সূত্র বলছে, পশ্চিমা দেশগুলি বহুদিন থেকে ইসলামাবাদের উপর চাপ দিয়ে আসছে। তাদের পরমাণু অস্ত্রবাহী দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে। তবে পাকিস্তান এতে রাজি হয়নি। কিন্তু বর্তমানে পাকিস্তানের প্রয়োজন আইএমএফ-এর নয়া ঋণ। এছাড়া আইএমএফসহ বিভিন্ন দেশের কাছে পাকিস্তানের যে বিপুল পরিমাণ ঋণ রয়েছে, তা পরিশোধ করার সময় এসে গেছে। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে এখন এইসব ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা নেই।

তাই তারা রেয়াত এবং ঋণের জন্য আইএমএফ-এর মুখাপেক্ষি হয়ে রয়েছে। কিন্তু আইএমএফ-এর তাদের নানা মনপসন্দ শর্ত নানা শর্তের বাঁধনে পাকিস্তানকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতে চাইছে। আর পাকিস্তানের হাতেও খুব বেশি বিকল্প নেই। তারা অবশ্য চিনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দহরম-মহরম করে খানিকটা স্বস্তি পাওয়ার কোশেশ করছে। কিন্তু পাকিস্তানের যে বিরাট সমস্যা তাতে মুক্তির পথ খুব সহজ নয়।

পশ্চিমাদের একটি বড় চিন্তা, হাজার হোক পাকিস্তান একটি মুসলিম দেশ। যদি তাদের পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল এসে যায়, তবে তা ইসরাইলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই ইসরাইলকে স্বস্তি দিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলি ইসলামাবাদের উপর প্রবল চাপ তৈরি করেছে। আর নয়াদিল্লিও পাকিস্তানের অস্ত্রসজ্জা নিয়ে বরাবরই উদ্বিগ্ন।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উপর যেমন পশ্চিমারা পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বিরত রাখার কথা বলে অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক অবরোধ জারি করে রেখেছে, পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও সম্ভবত সেই একই ভবিতব্য হতে চলেছে। ইরান অবশ্য পশ্চিমাদের সমস্ত চাপ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের বোধহয় সেই ধরনের সামর্থ নেই।

তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রী সকলেই মুখে অত্যন্ত বলেছেন, ইসলামাবাদের ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ বা আওতা কি হবে, তা ঠিক করে দেওয়ার অধিকার অন্যকোন রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের নেই। আর পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণ নিরাপদ হাতে রয়েছে। তা নিয়ে অন্যদের দূঃশ্চিন্তা না করলে চলবে। কিন্তু তাদের এই প্রতিবাদী বক্তব্য খুব জোরদার নয়। বরং বেশ ম্রিয়মান।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পাকিস্তানের ভবিতব্যও কি ইরানের পথে?

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৩, শনিবার

আহমদ হাসান ইমরান: পাকিস্তানে চলছে রাজনৈতিক ডামাডোল। অর্থনৈতিক কাঠামোও ভেঙে পড়েছে। ইমরান খানের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে পশ্চিমা মদতে বসানো হয়েছে শাহবাজ শরীফের সরকারকে। যেসব প্রাদেশিক কিংবা উপনির্বাচন হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ইমরান খান এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সবথেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ।

অন্যদিকে তাঁর দল পিটিআই ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন সরকার এখন মামলা দিয়ে ও নানা ধরনের চাতুরির মাধ্যমে বিরোধী দলগুলির নেতাদের কারাগারে ঢুকাতে উঠে পড়ে লেগেছে। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন শাহবাজ শরীফের এখন একমাত্র আশা, যদি আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড থেকে ঋণ এবং রেয়াত পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো অর্থনীতি একেবারে শ্রীলঙ্কার মতো ভেঙে পড়বে না। আইএমএফ পাকিস্তানকে কিছুটা সাহায্য করতে রাজি আছে। কেন না, গদিতে রয়েছে তাদের প্রিয় আস্থাভাজন শাহবাজ শরীফের সরকার।

কিন্তু আইএমএফ-এর নানা শর্ত রয়েছে। শর্তগুলি অনেকটা ইরানের উপর চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক অবরোধের মতো। আইএমএফ বলছে, পাকিস্তানকে তাদের পারমানবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেইসঙ্গে পাকিস্তান পারমানবিক অস্ত্রবাহী যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, সেই পরিকল্পনা ইসলামাবাদকে পরিত্যাগ করতে হবে। আর এই ধরনেরও কথা একইসঙ্গে উচ্চারণ করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানের যেসমস্ত পরমাণু অস্ত্র রয়েছে তা মোটেই নিরাপদ নয়। এই অস্ত্র অন্যদের হাতে চলে যেতে পারে। কিংবা জঙ্গি হানার শিকার হতে পারে।

পাকিস্তানের হাতে এখন রয়েছে পরমাণু অস্ত্রবাহনে সক্ষম দূরপাল্লার শাহীন-৩ মিসাইল। শাহীন-৩ মিসাইলের পাল্লা হচ্ছে ২৭৫০ কিলোমিটার। এই মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লায় রয়েছে ইসরাইলসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।

পাকিস্তান সরকারের সূত্র বলছে, পশ্চিমা দেশগুলি বহুদিন থেকে ইসলামাবাদের উপর চাপ দিয়ে আসছে। তাদের পরমাণু অস্ত্রবাহী দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে। তবে পাকিস্তান এতে রাজি হয়নি। কিন্তু বর্তমানে পাকিস্তানের প্রয়োজন আইএমএফ-এর নয়া ঋণ। এছাড়া আইএমএফসহ বিভিন্ন দেশের কাছে পাকিস্তানের যে বিপুল পরিমাণ ঋণ রয়েছে, তা পরিশোধ করার সময় এসে গেছে। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে এখন এইসব ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা নেই।

তাই তারা রেয়াত এবং ঋণের জন্য আইএমএফ-এর মুখাপেক্ষি হয়ে রয়েছে। কিন্তু আইএমএফ-এর তাদের নানা মনপসন্দ শর্ত নানা শর্তের বাঁধনে পাকিস্তানকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতে চাইছে। আর পাকিস্তানের হাতেও খুব বেশি বিকল্প নেই। তারা অবশ্য চিনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দহরম-মহরম করে খানিকটা স্বস্তি পাওয়ার কোশেশ করছে। কিন্তু পাকিস্তানের যে বিরাট সমস্যা তাতে মুক্তির পথ খুব সহজ নয়।

পশ্চিমাদের একটি বড় চিন্তা, হাজার হোক পাকিস্তান একটি মুসলিম দেশ। যদি তাদের পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল এসে যায়, তবে তা ইসরাইলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই ইসরাইলকে স্বস্তি দিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলি ইসলামাবাদের উপর প্রবল চাপ তৈরি করেছে। আর নয়াদিল্লিও পাকিস্তানের অস্ত্রসজ্জা নিয়ে বরাবরই উদ্বিগ্ন।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উপর যেমন পশ্চিমারা পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বিরত রাখার কথা বলে অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক অবরোধ জারি করে রেখেছে, পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও সম্ভবত সেই একই ভবিতব্য হতে চলেছে। ইরান অবশ্য পশ্চিমাদের সমস্ত চাপ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের বোধহয় সেই ধরনের সামর্থ নেই।

তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রী সকলেই মুখে অত্যন্ত বলেছেন, ইসলামাবাদের ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ বা আওতা কি হবে, তা ঠিক করে দেওয়ার অধিকার অন্যকোন রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের নেই। আর পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণ নিরাপদ হাতে রয়েছে। তা নিয়ে অন্যদের দূঃশ্চিন্তা না করলে চলবে। কিন্তু তাদের এই প্রতিবাদী বক্তব্য খুব জোরদার নয়। বরং বেশ ম্রিয়মান।