নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। দু’বছর বাদে ফের রাজ্যে বিনিয়োগের নয়া দিগন্তের আশা জাগিয়ে আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। আজ বেলা বারোটা নাগাদ দেশ-বিদেশের নামী-দামি শিল্পপতি ও শিল্পোদ্যোগীদের উপস্থিতিতে নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্মেলনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার শীর্ষ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলন চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। আজ থেকে সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই অবশ্য অনুষ্ঠানের ঢাকা কাঠি পড়ে গিয়েছে। সম্মেলনে যোগ দিতে আসা ভিন দেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠকের পাশাপাশি ইকো পার্কে সম্মেলনের প্রতিনিধিদের সম্মানে বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরেই শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরির বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিন রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশি শিল্পপতিদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতেই চালু করেছিলেন বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মাধ্যমে রাজ্যে মোট ১২ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। করোনার কারণে অবশ্য গত দুই বছর বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করা যায়নি। এবারের সম্মেলনে ৪০টি দেশের প্রতিনিধি-শিল্পপতিরা যোগ দিচ্ছেন।
ব্রিটেন,অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, ভুটান-সহ ১৫ টি দেশ সহযোগী হিসেবে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।
চলতি সম্মেলন সফল করতে খামতি রাখছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে যেমন মঙ্গলবার সম্মেলনস্থলের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছেন, তেমনই অভ্যাগতদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য কালীঘাটের বাড়ি ছেড়ে নিউটাউনের এক কটেজে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অভ্যাগতরা কোথায় থাকবেন, তাঁদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখেছেন। নিরাপত্তার কারণে মঙ্গলবার থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইকো পার্ক। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে।
গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যের বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে হইচই করে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আসা দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের কাছে রাজ্যের ভাবমূর্তি সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছনোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিরোধী দল এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশ। সেই পরিকল্পিত চক্রান্ত ভেস্তে দিতে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই মাস্টারস্ট্রোক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের পাঁচ লক্ষ নতুন উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হবে। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলার উপভোক্তাদের হাতে আর্থিক সুবিধা তুলে দেবেন। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ আমলার কথায়, ‘বাংলায় সামাজিক ক্ষেত্রে তৃণমূল সরকার যে সব ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে, তার এক ঝলক দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরা হবে।’ পাশাপাশি বাণিজ্য সম্মেলনে রাজ্যে বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ সম্পর্কিত নানা তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হবে।
এবারের বাণিজ্য সম্মেলনে দেউচা পাচামি, তাজপুর সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি বেলুড়ের লজিস্টিক হাব নিয়ে বিশেষ চুক্তি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্প দফতরের এক আধিকারিক। ইতিমধ্যেই তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দরে বিনিয়োগে ইতিমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে আদানি গোষ্ঠী।