পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : রোযার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। উত্তরে তিনি জানালেন, ছোট বেলা থেকেই পবিত্র রমযান মাসে মুসলিম ভাই-বোন-বন্ধুদের সারাদিন ধরে রোযা রাখতে দেখে আসছি। কত বড় সংযম, কতবড় ত্যাগ স্বীকার। আবার সমানভাবে স্ব-ইচ্ছায় কষ্ট স্বীকারও বলা যেতে পারে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী বা অন্য বর্ষের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের দেখেছি গোটা রমযান মাসজুড়ে রোযা রাখতে। সারাদিন না খেয়ে এমনকী এক ফোটা জলও মুখে না নিয়ে কীভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছে, দেখে অবাক হয়েছি। পরবর্তীতে আরও জেনেছি, রমযান শুধুমাত্র আহার-পানীয় বর্জন করে রোযা বা উপবাসে থাকা নয়।
রমযান মাসে রোযা রেখে সৃষ্টিকর্তার স্মরণাপন্ন হলে তাঁর অনুগ্রহ লাভ আরও সহজ হয়ে যায়। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুসলিম ভাই-বোনেরা একমাস ধরে যে কঠোর সংযমের মাধ্যমে রোযা পালন করেন, তা দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। তাঁর কথায়, বাবা সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তাই বিভিন্ন সময় বহু জায়গায় পড়াশোনা করতে হয়েছে। সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে থাকার সময় রোযা সম্পর্কে জেনেছিলাম। এক সঙ্গে ইফতারও করেছি।
কিছু জিনিস রয়েছে, যা আমাদের অনুশাসন এনে দেয়। কোরআন পাঠের মাধ্যমেও মনের প্রশান্তি আসে। সমস্ত রকম খারাপ চিন্তা থেকে মুক্তি আসে, এই বিশ্বাসটা জন্মায়। তাই আমরা আমাদের ধর্মগ্রন্থ পাঠ করি। ধর্মের আচার আচরণ ও নিয়মগুলি মেনে চলি। রোযার মাধ্যমেও মনের প্রশান্তি আসে, সমস্ত খারাপ, অশুভ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে মূল্যবোধের কথা বলা হয়েছে। ধর্মপালনের মাধ্যমে ভালো-মন্দের তফাৎ বোঝা সহজ হয়ে যায়। খারাপকে দূরে রাখে। আর ভয় পেতে শেখায়। এতে মানুষকে অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করে।এর একটা বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। রোযার মাধ্যমে শরীর-মন ভালো থাকে। পাচনক্রিয়ার শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে।
এক মাস ধরে এমন মহানব্রত পালন করার মধ্যে বেশ বড় অনুভূতির ছোঁয়া রয়েছে বলেই আমার মনে হয়। এছাড়া আর একটি বিষয় আমাকে আকর্ষণ করে, তা হল, ইফতার। রোযা ভাঙার সময় ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত পেটে খাবার সাজিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে আজানের শব্দ শোনার অপেক্ষা। আর একসঙ্গে অনেকে মিলে ভাগ করে খাবার খেতে দেখলেও মন ভরে যায়। বহু ইফতার মজলিসে গিয়ে দেখেছি, সেখানে, কোনও ধর্মের গণ্ডি থাকে না। চেনা-অচেনা, হিন্দু-মুসলিম- শিখ, খ্রিস্টান সব ধর্মের লোকেদের সঙ্গে ইফতার ভাগ করে খাচ্ছেন মুসলিমরা। সুতরাং রমযানের ইফতার সম্প্রীতিরও বার্তা বয়ে আনে।