সেখ কুতুবউদ্দিন : রমযানের মাত্র আর কয়েকটা দিন বাকী। তার আগে বেকার হস্টেলের পড়ুয়ারা প্রস্তুতিও শুরু করেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বহু দিন বন্ধ ছিল হস্টেল। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের পাশাপাশি এবার হস্টেলগুলি সাজতে শুরু করেছে। প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা ভর্তি হলেও আবাসিক পড়ুয়াদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। আর কটা দিন বাকী রমযানের। করোনা বিধি মেনেই রমযানের ইফতার ও রোজা পালন করা হবে বলে সোমবার জানালেন বেকার হস্টেলের ছাত্ররা। দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রথম বর্ষের ছাত্র আঞ্জুম হোসেনের বক্তব্য, বহু দিন হস্টেল বন্ধ ছিল। এখন হস্টেল খুলেছে। এক মাস রোজা চলবে। তার সঙ্গেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে হবে। তবে রোজা ছাড়বো না। সন্ধ্যের সময় ছাত্ররা যে যার মতো ইফতার ও সেহরীর ব্যবস্থা করে। আবার কয়েকজন মিলে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। হস্টেলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেই সম্পর্কে বেকার হস্টেল সুপার মুহাম্মদ হাসিমকিছু বলতে চাননি।
এদিকে বেকার হস্টেলের পাশেই রয়েছে একটি মসজিদ, তার ঠিক পাশে ইলিয়ট হস্টেল। ইলিয়ট হস্টেলের পড়ুয়াদেরও বক্তব্য, তারাও নিজ নিজ ইফতার ও শেহরীর ব্যবস্থা করবে। তবে কয়েকজন মিলে স্পেশাল ভাবে ইফতারের ব্যবস্থাও করা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্বাবধানে রয়েছে ঐতিহাসিক বেকার হস্টেল। তার ঠিক পাশেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অধীনে থাকা ইলিয়ট হস্টেল। একই প্রাঙ্গনে অবস্থিত হস্টেল দুটিতে সব মিলিয়ে ৭০০ বেশি সংখ্যালঘু ছাত্র আবাসিক হিসেবে থাকেন। সেই সব ছাত্ররা কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। ইলিয়ট হস্টেলের পড়ুয়াদের অধিকাংশই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা রয়েছেন।
সোমবার হস্টেলের কয়েকটি ঘরে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নিজেদের মতোই ইফতার সারেন ছাত্ররা। পড়ুয়ারা বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে ইফতার এবং সেহেরী করেন। ইলিয়ট হস্টেলে একটি ক্যান্টিনও রয়েছে। ইফতারের পর অথবা সেহেরির খাবার সেখান থেকেই করেন বলে পড়ুয়ারা জানান। হস্টেলের আবাসিক ছাত্রদের বক্তব্য, রমযানে হস্টেলের বেশিরভাগ ছাত্র রোজা রাখেন। রমযান মাসে একটা আলাদা ইবাদতের পরিবেশ থাকে।ইলিয়টের মতো বেকার হস্টেলের আবাসিকদের মধ্যেও রমযানের পরিবেশ লক্ষ্য করা গেল।আবাসিক ছাত্র মোস্তাকিম হোসেন জানালেন, বেকার হস্টেল-এ চারশোর বেশি আবাসিকের মধ্যে অধিকাংশ ছাত্র রোজা রাখছেন।
হস্টেলের ছাত্ররা আরও বলেন, বেকার হস্টেলে মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদের ছাত্রদের সঙ্গে এলাকার মুসুল্লিরাও এসে তারাবীহ নামাজ পড়ছেন। নামাজ পড়ার জায়গা সঙ্কুলানের জন্য আলাদাভাবে বাঁশ টাঙিয়ে ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই চলছে খতম তারাবীহ। ছাত্রদের কাছ থেকে জানা গেল, প্রতি বছর ইফতার মজলিসেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এ বছরও ইফতার মজলিসের ব্যবস্থা করার জন্য অনেকের ইচ্ছা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির পর হস্টেল খুলেছে। এবার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নিয়ে ইফতার মজলিস হবে কী না এই বিষয়ে এখনও চুড়ান্ত হয়নি।
ইলিয়ট হস্টেলে আবাসিক ছাত্রদের বক্তব্য, রমযান মাসে এক সঙ্গে সেহেরি-ইফতার ও ইবাদত করার অনুভূতিই আলাদা। একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। সকলে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া ও নামাজ পড়ার ফলে আবাসিকদের মধ্যে একটা মেল বন্ধন গড়ে ওঠে। এই বিষয়ে হস্টেল সুপার তাজদার আলি বলেন, ছাত্ররা নিজেদের মতো ইফতার ও নামাজ পড়েন। রমযানে ছাত্রদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেই দিকে বিশেষভাবে নজরও দেওয়া হবে।