নিজস্ব প্রতিনিধি : মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় , বাবুল সুপ্রিয়, কৃষ্ণ কল্যাণী, সব্যসাচী দত্ত, জয়প্রকাশ মজুমদার। বঙ্গ বিজেপি ত্যাগের তালিকাটা ক্রমশই লম্বা হচ্ছে। শুধু উচুতলার হেভিওয়েট নেতারাই নয় দলের প্রতি মোহভঙ্গ ঘটায় পদ্ম শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দেওয়ার রাস্তায় হাঁটছেন নিচুতলারও কর্মীরা, দলের এমন ভাঙন রুখতে কী দাওয়াই প্রয়োগ করা হবে, তা ভাবতেই পারছেন না বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, পাঁচ রাজ্যে সরকার গঠনের পরে ফের সুকান্ত মজুমদার-দিলীপ ঘোষদের দিল্লিতে তলব করছেন বিজেপি শীর্ষ নেতারা। আগামী পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঘর গোছাতে নতুন কোনও রণকৌশল নেওয়া হতে পারে। যদিও দলের যে পরিস্থিতি, তাতে আদৌ কোনও রণকৌশল কাজ করবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দিহান রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশ।
গত বছর দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারের হাতে রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব সঁপেছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দিল্লিতে বঙ্গ বিজেপির নয়া মুখিয়াকে ডেকে অমিত শাহ-জেপি নাড্ডারা নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে কোনও উপায়ে হোক, ভাঙন রুখুন। দলের সেই ভাঙন রুখতে প্রয়োজন ছিল একটা জয়। কিন্তু বিধানসভার ভোটের পরে যত ভোট হয়েছে, তাতে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে ক্রমশই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে এক বছর আগে নবান্ন দখলের স্বপ্ন দেখা দল। উল্টে রাজ্য কমিটির পদাধিকারী ও জেলা সভাপতি নিয়োগ নিয়ে দলের অন্দরে বিদ্রোহের বিউগল বেজে উঠেছে। প্রকাশ্যেই দলের একাংশ রীতিমতো রাজ্য সভাপতির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন রাহুল সিনহার হাত থেকে সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে দলীয় কর্মীদের অনেকটাই উজ্জীবিত করতে পেরেছিলেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও দলের নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে চাঙা হয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির নতুন মুখিয়া সুকান্ত মজুমদারের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার সেই গুন নেই। বরং সারাজীবন জেলায় থাকার কারণে অনেকটাই গুটিয়ে থাকছেন তিনি। যেভাবে দলে ভাঙন শুরু হয়েছে , তার শেষ কোথায়? সেই জবাব নেই রাজ্য বিজেপি নেতাদের কাছে।
কেন দল ছেড়ে নেতা-কর্মীরা চলে যাচ্ছেন তার পর্যালোচনা করার পরিবর্তে দলত্যাগীদের অহেতুক আক্রমণ করে পরিস্থিতি আরও জটিল করছেন রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব। তবে সত্যি কথাটি বুধবার বলে ফেলেছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘দল এখন গাড্ডায় পড়ে গিয়েছে। সেজন্য যদি কেউ দল ছেড়ে চলে যায় তবে কিছু বলার নেই। আমরা পার্টিকে দাঁড় করিয়েছি। সব পার্টি, ব্যক্তির জীবনে এরকম আসে। আমরা লড়াই করছি। আবার পার্টিকে দাঁড় করাব।
কিন্তু বঙ্গ বিজেপির অrদরেই কানাঘোষো চলছে, এর পরে আর কে ছাড়বেন দল। যেহেতু তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পরের দিন জয়প্রকাশ দল ছেড়েছেন, তাই লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দল ছাড়া নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। বঙ্গ বিজেপির একাংশ মনে করছেন, তালিকায় আরও অনেকে রয়েছেন। দলের রাজ্য নেতৃত্বে পরিবর্তনের আশায় অনেকে দলে রয়ে গিয়েছেন। যদি তাঁরা দেখেন, সুকান্তই ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, তাহলে তাঁরাও দল ছাড়বেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভাঙবে সংগঠন।