এস কে সাইফুদ্দিন : পশ্চিমবাংলার প্রতিষ্ঠিত ইউনানি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এ কে এ কেমিক্যালস প্রাইভেট লিমিটেড যে সবার উপরে স্থান করে নিয়েছে, সে-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ২০০২ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়ায় গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানের শ্রীবৃদ্ধি ও সুনামের পিছনে রয়েছে সংস্থার কর্ণধার হেকিম আবুল কালাম আজাদের কর্মনিষ্ঠা, অক্লান্ত পরিশ্রম, ও আত্মবিশ্বাস। বাবা খোদাবক্স মণ্ডল ছিলেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। তাঁর কাছেই হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি ওষুধ সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ। পরবর্তীকালে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক বইপত্র নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে তিনি তৈরি করেন হাঁস-মুরগির বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ের ওষুধ, শেফা-ই-হায়াত। এই ওষুধের সাফল্যের পর মানুষের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য মুক্তধারা, পাইরোটেন-সহ বেশ কিছু ওষুধ তিনি তৈরি করেন। নিজের তৈরি ওষুধগুলো জেলার বিভিন্ন মুদিখানা থেকে ওষুধের দোকানে তিনি বিক্রি করতে থাকেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কালাম সাহেবের তৈরি এই সমস্ত ওষুধের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসা বাড়ার পাশাপাশি নতুন নতুন ওষুধও সংযোজন হতে থাকে।
অবশেষে ২০০২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এ কে এ কেমিক্যালস। তাঁর তৈরি ওষুধগুলো আর শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে নয়, পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হতে থাকে। পশ্চিমবাংলার ইউনানি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একেএ কেমিক্যালসই প্রথম GMP ও ISO সার্টিফায়েড কোম্পানি। বর্তমানে এই কোম্পানির বিভিন্ন রোগের শতাধিক ওষুধ রয়েছে। ওষুধের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য সুদক্ষ অভিজ্ঞ কেমিস্ট-এর তত্ত্বাবধানে, আধুনিক বিজ্ঞানসম্মতভাবে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ওষুধ প্রস্তুত করা হয়। ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় উৎকৃষ্টমানের জড়িবুটি। এ কে এ কেমিক্যালস প্রাইভেট লিমিটেডের এই সমস্ত ওষুধ বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে আসাম, ওড়িশা ঝাড়খণ্ড-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেছে। প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এক ছেলে মণিরুল ইসলামকে এমবিবিএস পড়িয়েছেন। এক মেয়ে রুমানা পারভীন ইউনানি নিয়ে পড়াশোনা করছে। তাঁর পড়াও শেষের পথে। ইউনানি ওষুধ শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনানি বিষয়ক বড় বড় সেমিনারে সংস্থার কর্ণধার আবুল কালাম আজাদকে একাধিকবার সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তাঁর এই সাফল্যের পিছনে কাদের ভূমিকা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমেই আমার স্ত্রী রোকেয়া বেগম।
সংসারের সমস্ত কাজকর্ম সামলে কোম্পানির কর্মীদের সঙ্গে একজন সাধারণ কর্মীর মতো কাজ করেন। তিনি আজও আমার পাশে থেকে সাহস জুগিয়ে চলেছেন। এ ছাড়া ইউনানির সঙ্গে যুক্ত অনেকে আছেন, আমার বন্ধুবান্ধব এবং এই প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্মী, আমার সমস্ত ডিলার এবং ব্যাঙ্ক ঋণ দিয়ে আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছে। এক কথায় সকলের মিলিত প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের ফসল আজকের এই প্রতিষ্ঠান। তিনি আরও বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে বহু কষ্টে এই প্রতিষ্ঠানকে আমি তিল-তিল করে গড়ে তুলেছি শুধু ব্যবসা করার জন্য নয়। আমি চাই আমার এই কোম্পানির ওষুধ থেকে মানুষ উপকৃত হোক। তাই যতটা সম্ভব কম দামে উৎকৃষ্টমানের ওষুধ তৈরি করে মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। একদিন যিনি ছোট ছোট দোকানে ঘুরে ঘুরে ওষুধ বিক্রি করতেন আজ তার ওষুধ দেশের বড় বড় নামকরা ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। কালাম সাহেবের নতুন কিছু করার তাগিদ কঠোর পরিশ্রম এবং সৎ চিন্তাভাবনাই যে তাঁকে এই সমৃদ্ধি ও সফলতা এনে দিয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।