পুবের কলম প্রতিবেদক: ওয়েস্ট বেঙ্গল রেকগনাইজড আন এডেড মাদ্রাসা টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ও মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটির সহযোগিতায় বর্তমান মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার পার্ক সার্কাস হজ হাউসের অনুষ্ঠানে রাজ্যের মাদ্রাসার শিক্ষার গুরুত্ব ও দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী হুমায়ুন কবির বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের ঘরের ছেলে মেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। জ্ঞানই হচ্ছে শক্তি। আমাদের অনেক জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী আমাদের একত্রে কুরআন হাদিস ও বিজ্ঞানের চর্চা করতে হবে। তাহলেই আমাদের সমাজে শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে ও মেধার বিকাশ ঘটবে। আর এর জন্য মাদ্রাসা শিক্ষকদের আরও এগিয়ে এসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের কথা তিনি বলেন।
সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান বলেন, এই মাদ্রাসাগুলোই আমাদের সমাজকে শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। খারেজী মাদ্রাসা থেকে হাই মাদ্রাসা ও সিনিয়র মাদ্রাসা এমনকি মক্তবের মাধ্যমে আমাদের ঘরের ছেলে মেয়েরা স্বাক্ষরতার আলো পেয়েছে। না হলে সাচার কমিটির রিপোর্টে মুসলিম সমাজের শিক্ষার যে করুণ দশা আমরা দেখতে পাই, তা আরও করুণতর হত। তবে তিনি আন এডেড মাদ্রাসার পরিকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানাবিধ বিষয় উল্লেখ করেন। বিশেষ করে ওই সমস্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদেরদের যে সাম্মানিক দেওয়া হয় তা যথেষ্ট নয়। তা তিনি বাড়ানোর দাবি জানান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ইমাম মোয়াজ্জেনদের সম্মানজনকভাবে বাঁচার জন্য আরও ভাতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন। আর এ বিষয়ে মুসলিম সমাজকেও এগিয়ে আসাতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, আলিয়া মাদ্রাসাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করে একটি বিশাল কাজ করেছেন। এই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ধরনের অশান্তি বা কারও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা যেন না হয়। সেটাও সুনিশ্চিত করতে হবে।
আলিয়ার রেজিস্টার সৈয়দ নুরুস সালাম এই সমস্ত মাদ্রাসা শিক্ষকদের করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি সভায় আগত মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রতি তাঁর বার্তা, আপনাদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। আপনারা এই কাজে লেগে থাকুন।
ওয়ায়েজুল হক বলেন, সরকার অনুমোদিত আন এডেড মাদ্রাসার শিক্ষকদের ভাতাটা নিশ্চয় প্রয়োজনের। কিন্তু আমাদের অধিকার দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু উন্নয়নে আন্তরিক। তাঁকে সঠিক তথ্য দিতে হবে। তবে তাঁর পরামর্শ এক ছাতার তলায় থেকে আমাদের কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যদি আমরা বোঝাতে পারি নিশ্চয় কাজ হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
খালিদ ইবাদুল্লা বলেন, সরকার অনুমোদিত আন এডেড মাদ্রাসার কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। স্কুলে ধর্মের প্রশ্নে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেটা আমরা কর্নাটকে দেখতে পেয়েছি। তাঁর কথায়, আমরা শিক্ষাকে সম্বল করে এগিয়ে যাব।
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি আবদুল ওহাব মোল্লা এবং আবদুল আলিম শিক্ষকদের নিয়োগপত্র ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। একই সঙ্গে শিক্ষকদের ভাতা বা বেতনের ব্যবস্থা হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান তাঁরা।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাজ্য মাইনরিটি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইনতাজ আলি শাহ, নাখোদা মসজিদের ইমাম শফিক কাশেমি, মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অ্যাসিসটেন্ট ডায়রেক্টর নজরুল সিপাই, মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটির সভাপতি প্রমুখ। এদিনের সভায় বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষকশিক্ষিকারা হাজির হন এবং ভিড় ছিল দেখার মতো।