সেখ কুতুবউদ্দিনঃ হিজাব মানুষের আত্মমর্যাদার প্রতীক। অন্য কিছুর সঙ্গে আপোষ করা যায়, কিন্তু আত্মমর্যাদা হানির সঙ্গে নয়। হিজাব-বিদ্বেষ গণতন্ত্রে হামলা, সংবিধানে হামলা। বাংলাদেশ কর্ণাটক বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে হিজাব-হিংসার প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব-বিদ্বেষ ছড়াতে থাকবে অথবা ছড়ানোর চেষ্টা করা হবে। তার প্রতিবাদে সারা দেশের সঙ্গে এবার কলকাতায় বিক্ষোভ শুরু হল।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দাবিতে ১৩১দিন ধরে আন্দোলন করছেন ছাত্রছাত্রীরা। বুধবার কর্ণাটকের উদুপির একটি সরকারি কলেজে হিজাব পরার জন্য ৬ ছাত্রীকে হেনস্থার প্রতিবাদে মিছিল করল আলিয়ার ওই পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাস থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়।
সিআইটি রোড-পদ্মপুকুর হয়ে ফের মিছিল ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
উল্লেখ্য, কর্ণাটকের ওই হিজাবপরা পড়ুয়াদের কলেজে ঢুকতে না দেওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ধর্ণায় বসেন। এর জন্য ওই পড়ুয়াদের কলেজ থেকেই বের করে দিয়ে গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে চাপেপড়ে আলাদা ক্লাসে বসার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু কর্ণাটক সরকার নতুন নিয়ম করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের আপত্তি থাকলে হিজাব পরা যাবে না।
কলকাতায় মিছিলে হাঁটার সময় ছাত্রছাত্রীদের হাতে ছিল পোস্টার জাতীয় পতাকা। এক ছাত্রীর হাতে থাকা পোস্টারে লেখা ছিল, ‘আমি হিজাব পরেই থাকব’, এটা একজন মুসলিম মহিলার পোশাকের অবিচ্ছেদ্য অংশ, হিজাব মানবিক বস্ত্র। স্নাতকোত্তরের ইতিহাসের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী তাসলিম সুলতানা মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে স্লোগানে বলেন, আমরা হিজাব পরেই ক্লাসে আসব। আমাদের হিজাব কেউ খুলতে পারবে না। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা কর্ণাটকের ঘটনার নিন্দা জানাই।
সাহিনা খাতুন, রেকশোনা খাতুন মিছিলের সামনের সারিতে স্লোগান দিতে দিতে এগোচ্ছিলেন। প্রতিবাদে গর্জে উঠছিলেন পড়ুয়ারা। তাদের স্লোগান, ‘মরে গেলেও আমরা হিজাব ছাড়ব না। হিজাব পরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসব। এটা আমাদের নিজেদের অধিকার। যারা হিজাবের অপমান করছেন, তাদের প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই।
মিছিলে অংশগ্রহণকারী পড়ুয়াদের আরও বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদেশে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্প চালু করেছেন। কিন্তু সেই দেশে মেয়েদের পোশাকের উপর হস্থক্ষেপ করা হচ্ছে। বিজেপি শাসিত সরকার এখন হিজাব পরার বিরোধিতা করে উন্নয়নের ব্যার্থতা ঢাকার করার চেষ্টা করছে। ছাত্রীরা বলেন, ‘এক সম্প্রদায়ের পড়ুয়াকে হেনস্থা, অপমান, অবমাননা করে কোনও ভাবেই দেশের সরকার এগোতে পারে না। যারা হিজাবের অপমান করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি চাই।’
ছাত্রনেতা সাজিদুর রহমান বলেন, হিজাবের অপমান কোনওভাবে মানছি না, মানব না। মিছিলে হাঁটার সময় তাঁর বক্তব্য, হিজাব পরা মেয়েরা আমাদের বোন, বোনেদের অপমান বরদাস্ত করব না। কর্ণাটকে যে ঘটনা ঘটেছে, তার তীব্র বিরোধিতা করছি। নিন্দা করছি।
ছাত্র নেতা আহাসানুল্লা মিদ্দে, আব্বাসউদ্দিনদের বক্তব্য, বোনেদের হিজাব নিয়ে কর্ণাটক সরকার এবং ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ যে ভূমিকা নিয়েছে, তা একেবারেই কাম্য নয়। কারণ, হিজাব একটি শালীন পোষাক। তাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিজাব পরার বিরোধিতা করতে পারে না।
এদিন ছাত্রছাত্রীদের মিছিলে হাটার সময় পার্ক সার্কাস, সিআইটি রোড চত্বরে রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষরাও মন্তব্য করতে ছাড়েননি। পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁরা মন্তব্য করতে থাকেন, হিজাব নিয়ে মিছিল হচ্ছে। এই প্রতিবাদ মিছিলকে সমর্থন করা উচিত। মেয়েদের শালীনতার পোশাক হিজাব। পোশাক, খাদ্য প্রভৃতি মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার। এই অধিকার খর্ব করতে কেন্দ্র সরকারও বিভিন্ন সময় ইস্যু করছে। এতে একদল পড়ুয়া ও মানুষকে টার্গেট করা হচ্ছে। খাদ্য, পোশাক, বাসস্থানের অধিকার রক্ষা সরকারের। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেদিকে দৃষ্টিপাত দেওয়া কেন্দ্র সরকারেরও কর্তব্য। তবে কর্ণাটকের ওই কলেজের হিজাব পরতে না দেওয়া নিয়ে মামলা শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, একদল ছাত্রছাত্রী বলেন, তারাও গেরুয়া স্কার্ফ ও পাগড়ি পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবেন। এরপর ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিজাব পরে কলেজে আসতে নিষেধ করে। বাধ্য হয়ে ওই ছাত্রীরা কর্ণাটক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। এই মামলার শুনানি ছিল মঙ্গলবার। বুধবারও এই মামলার শুনানি হয়।
কর্নাটকের সরকারি কলেজে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জোর লড়াই শুরু করলেন কলকাতার ছাত্রীরা। পড়ুয়াদের বক্তব্য, পোশাকের শালীনতা বজায় রেখেই তারা কলেজে পড়তে চায়।