৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হরিদ্বার ঘৃণা ভাষণ থেকে উর্দু, টিপু সুলতান, সংসদে কেন্দ্রকে তুলোধোনা মহুয়ার

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২, শনিবার
  • / 9

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ সংসদে এখন চলছে রাষ্ট্রপতির ভাষণের শুভেচ্ছাজ্ঞাপন পর্ব। আর সেখানেই বিজেপিকে তুলোধোনা করলেন তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। হরিদ্বার ঘৃণা ভাষণ থেকে শুরু করে টিপু সুলতান, জম্মু-কাশ্মীরের সরকারি ভাষা থেকে উর্দুকে সরিয়ে দেওয়া সহ একাধিক ইস্যুতে সংসদে সরব হলেন মহুয়া।

বৃহস্পতিবারই ট্যুইট করে গেরুয়া বাহিনীকে গো-মূত্র খেয়ে তৈরি থাকতে বলেছিলেন তাঁর মোকাবিলা করার জন্য। তখনই বোঝা গিয়েছিল,  যেভাবে বিজেপির গো-মূত্র প্রীতিকে খোঁচা দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন মহুয়া তাতে তিনি সংসদে ঝড় তুলবেন। আর ঠিক সেটাই হল। সংসদে দাঁড়িয়ে একের পর এক ইস্যু তুলে তীব্র আক্রমণ শানালেন বিজেপির বিরুদ্ধে। তাঁর আক্রমণের ঝাঁঝের কাছে স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত দেখালো গেরুয়া ব্রিগেডকে।

শুরুতেই নেতাজিকে স্মরণ করে গেরুয়া বাহিনীকে মোক্ষম ধাক্কাটি দিলেন মহুয়া। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নেতাজি-প্রেম’কে তুলোধনা করে এই তৃণমূল সাংসদ বলেন, হরিদ্বারে ধর্মসংসদে মুসলিমদের গণহত্যা করার যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল নেতাজি কি তাতে অনুমোদন দিতেন?  গেরুয়া বাহিনীর উগ্র হিন্দুত্ববাদ সমালোচনা করে মহুয়া বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে একাধিকবার নেতাজির কথা উঠে এসেছে। আমি এই প্রজাতন্ত্রকে মনে করিয়ে দেব এটা সেই নেতাজি যিনি বলেছিলেন দেশের সমস্ত ধর্মের প্রতি ভারত সরকারের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন মনোভাব থাকা উচিত।’

এরপরই তৃণমূল সাংসদের চোখা প্রশ্ন, ‘নেতাজি কি হরিদ্বারের ধর্মসংসদের অনুমোদন দিতেন যা মুসলিমদের প্রতি ভয়াবহ গণহত্যার আহ্বান। মহুয়া আরও বলেন, ‘নেতাজির ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ)-র প্রতীক ছিল টিপু সুলতানের ক্ষিপ্র বাঘ। সেই টিপু সুলতান যাঁর নাম-নিশানা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে ফেলতে চায়। উল্লেখ্য, বাঘ খুবই পছন্দের ছিল টিপু সুলতানের। টিপু কতটা ইংরেজ-বিরোধী ছিলেন তার সব থেকে বড় নির্দশন ছিল তাঁর কাছে থাকা কাঠের তৈরি রং করা বাঘমূর্তি। এতে দেখা যায় ডোরাকাটা বাঘটি এক ইংরেজের গলার টুঁটি চেপে ধরে রেখেছে। টিপুকে হত্যার পর ওই বাঘমূর্তিকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছিল ইংরেজরা। ইংরেজদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া সেই প্রতীকী ক্ষিপ্র বাঘকেই আইএনএ-র প্রতীক বা লোগো করা হয়।

টিপুর সেই বাঘের কথাই উল্লেখ করেছেন মহুয়া। উর্দু প্রসঙ্গ টেনে এনে মহুয়া বলেন,  আইএনএ’র মূল স্লোগান ছিল তিনটি উর্দু শব্দ, ইত্তেহাদ (ঐক্য), এতামাদ (বিশ্বাস) ও কুরবানি (ত্যাগ)। সেই উর্দু যাকে বর্তমান সরকার জম্মু-কাশ্মীরের প্রধান সরকারি ভাষা থেকে সরিয়ে হিন্দিকে জায়গা করে দিয়েছে। এই সরকার ইতিহাস বদলাতে চাইছে। কৃষ্ণনগরের সাংসদের কথায়,  ‘আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতে চাই যার মুখোমুখি আমাদের সবাইকে হতে হচ্ছে, তা হল— আমরা কী ধরনের প্রজাতন্ত্র চাই?  আজ আমরা কোন ভারত চাই? এখন সরকার যে ৮০ শতাংশ বনাম ২০ শতাংশ (সংখ্যাগুরু বনাম সংখ্যালঘু) যুদ্ধ শুরু করেছে তা আমাদের এই প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেবে। আমাদের একটি প্রাণবন্ত সংবিধান আছে। এটি ততক্ষণ শ্বাস নেয় যতক্ষণ আমরা এতে প্রাণবায়ু দিতে ইচ্ছুক। অন্যথায় এটি একটি শুধুমাত্র কাগজের টুকরো। সাদা-কালো। যাকে কোনও সংখ্যগরিষ্ঠ সরকার ধূসর ছায়ায় ঢেকে দিতে পারে।’

সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে নিশানা করতে গিয়ে মহুয়া নেতাজির ১৯৩৮ সালে কুমিল্লায় (বর্তমানে বাংলাদেশে) দেওয়া ভাষণকে উল্লেখ করে বলেন,  সেখানে নেতাজি বলেছিলেন,  ‘সাম্প্রদায়িকতা তার সমস্ত নগ্নতা নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে কুৎসিত মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।’ মোদি সরকারকে নিশানা করে মহুয়ার কটাক্ষ বাণ, ‘আপনি এমন একটি ভারতকে ভয় পান যে তার নিজস্বতা নিয়ে স্বস্তিতে থাকে,  নিজের বিবিধ বৈচিত্র্যের বাস্তবতা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আপনি এমন একটি ভারতকে ভয় পান যেখানে একটি জৈন ছেলে বাড়িতে লুকিয়ে আহমদাবাদের রাস্তায় কাঠি কাবাব উপভোগ করে। তাই আপনি কী করলেন?  গুজরাত পুরসভায় আমিষ নিষিদ্ধ করে দিলেন।’

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

হরিদ্বার ঘৃণা ভাষণ থেকে উর্দু, টিপু সুলতান, সংসদে কেন্দ্রকে তুলোধোনা মহুয়ার

আপডেট : ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২, শনিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ সংসদে এখন চলছে রাষ্ট্রপতির ভাষণের শুভেচ্ছাজ্ঞাপন পর্ব। আর সেখানেই বিজেপিকে তুলোধোনা করলেন তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। হরিদ্বার ঘৃণা ভাষণ থেকে শুরু করে টিপু সুলতান, জম্মু-কাশ্মীরের সরকারি ভাষা থেকে উর্দুকে সরিয়ে দেওয়া সহ একাধিক ইস্যুতে সংসদে সরব হলেন মহুয়া।

বৃহস্পতিবারই ট্যুইট করে গেরুয়া বাহিনীকে গো-মূত্র খেয়ে তৈরি থাকতে বলেছিলেন তাঁর মোকাবিলা করার জন্য। তখনই বোঝা গিয়েছিল,  যেভাবে বিজেপির গো-মূত্র প্রীতিকে খোঁচা দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন মহুয়া তাতে তিনি সংসদে ঝড় তুলবেন। আর ঠিক সেটাই হল। সংসদে দাঁড়িয়ে একের পর এক ইস্যু তুলে তীব্র আক্রমণ শানালেন বিজেপির বিরুদ্ধে। তাঁর আক্রমণের ঝাঁঝের কাছে স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত দেখালো গেরুয়া ব্রিগেডকে।

শুরুতেই নেতাজিকে স্মরণ করে গেরুয়া বাহিনীকে মোক্ষম ধাক্কাটি দিলেন মহুয়া। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নেতাজি-প্রেম’কে তুলোধনা করে এই তৃণমূল সাংসদ বলেন, হরিদ্বারে ধর্মসংসদে মুসলিমদের গণহত্যা করার যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল নেতাজি কি তাতে অনুমোদন দিতেন?  গেরুয়া বাহিনীর উগ্র হিন্দুত্ববাদ সমালোচনা করে মহুয়া বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে একাধিকবার নেতাজির কথা উঠে এসেছে। আমি এই প্রজাতন্ত্রকে মনে করিয়ে দেব এটা সেই নেতাজি যিনি বলেছিলেন দেশের সমস্ত ধর্মের প্রতি ভারত সরকারের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন মনোভাব থাকা উচিত।’

এরপরই তৃণমূল সাংসদের চোখা প্রশ্ন, ‘নেতাজি কি হরিদ্বারের ধর্মসংসদের অনুমোদন দিতেন যা মুসলিমদের প্রতি ভয়াবহ গণহত্যার আহ্বান। মহুয়া আরও বলেন, ‘নেতাজির ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ)-র প্রতীক ছিল টিপু সুলতানের ক্ষিপ্র বাঘ। সেই টিপু সুলতান যাঁর নাম-নিশানা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে ফেলতে চায়। উল্লেখ্য, বাঘ খুবই পছন্দের ছিল টিপু সুলতানের। টিপু কতটা ইংরেজ-বিরোধী ছিলেন তার সব থেকে বড় নির্দশন ছিল তাঁর কাছে থাকা কাঠের তৈরি রং করা বাঘমূর্তি। এতে দেখা যায় ডোরাকাটা বাঘটি এক ইংরেজের গলার টুঁটি চেপে ধরে রেখেছে। টিপুকে হত্যার পর ওই বাঘমূর্তিকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছিল ইংরেজরা। ইংরেজদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া সেই প্রতীকী ক্ষিপ্র বাঘকেই আইএনএ-র প্রতীক বা লোগো করা হয়।

টিপুর সেই বাঘের কথাই উল্লেখ করেছেন মহুয়া। উর্দু প্রসঙ্গ টেনে এনে মহুয়া বলেন,  আইএনএ’র মূল স্লোগান ছিল তিনটি উর্দু শব্দ, ইত্তেহাদ (ঐক্য), এতামাদ (বিশ্বাস) ও কুরবানি (ত্যাগ)। সেই উর্দু যাকে বর্তমান সরকার জম্মু-কাশ্মীরের প্রধান সরকারি ভাষা থেকে সরিয়ে হিন্দিকে জায়গা করে দিয়েছে। এই সরকার ইতিহাস বদলাতে চাইছে। কৃষ্ণনগরের সাংসদের কথায়,  ‘আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতে চাই যার মুখোমুখি আমাদের সবাইকে হতে হচ্ছে, তা হল— আমরা কী ধরনের প্রজাতন্ত্র চাই?  আজ আমরা কোন ভারত চাই? এখন সরকার যে ৮০ শতাংশ বনাম ২০ শতাংশ (সংখ্যাগুরু বনাম সংখ্যালঘু) যুদ্ধ শুরু করেছে তা আমাদের এই প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেবে। আমাদের একটি প্রাণবন্ত সংবিধান আছে। এটি ততক্ষণ শ্বাস নেয় যতক্ষণ আমরা এতে প্রাণবায়ু দিতে ইচ্ছুক। অন্যথায় এটি একটি শুধুমাত্র কাগজের টুকরো। সাদা-কালো। যাকে কোনও সংখ্যগরিষ্ঠ সরকার ধূসর ছায়ায় ঢেকে দিতে পারে।’

সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে নিশানা করতে গিয়ে মহুয়া নেতাজির ১৯৩৮ সালে কুমিল্লায় (বর্তমানে বাংলাদেশে) দেওয়া ভাষণকে উল্লেখ করে বলেন,  সেখানে নেতাজি বলেছিলেন,  ‘সাম্প্রদায়িকতা তার সমস্ত নগ্নতা নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে কুৎসিত মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।’ মোদি সরকারকে নিশানা করে মহুয়ার কটাক্ষ বাণ, ‘আপনি এমন একটি ভারতকে ভয় পান যে তার নিজস্বতা নিয়ে স্বস্তিতে থাকে,  নিজের বিবিধ বৈচিত্র্যের বাস্তবতা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আপনি এমন একটি ভারতকে ভয় পান যেখানে একটি জৈন ছেলে বাড়িতে লুকিয়ে আহমদাবাদের রাস্তায় কাঠি কাবাব উপভোগ করে। তাই আপনি কী করলেন?  গুজরাত পুরসভায় আমিষ নিষিদ্ধ করে দিলেন।’