চলতি বছরের জুনে, মার্কিন সরকার অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু (ইউএফও) সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়েছিল যে এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে এলিয়েনের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিবেদনে এলিয়েনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নটির উত্তর প্রবলভাবে খোঁজার চেষ্টা করে চলেছেন। তাঁরা পৃথিবী থেকে প্রায় চার আলোকবর্ষ দূরে আলফা সেন্টোরি নামের একটি নক্ষত্রমণ্ডলে প্রাণের সন্ধান শুরু করতে চলেছেন। কিন্তু তারা কি ভিনগ্রহীদের খুঁজে বের করতে পারবেন? আর পৃথিবী থেকে দূরে কোথাও কি সত্যিই প্রাণ আছে?
কোথায়, কিভাবে প্রশ্ন উঠেছে
নাটালি হেইনস একজন লেখিকা এবং কল্পবিজ্ঞানে তাঁর যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। তিনি বলেন যে দু-হাজার বছর আগে যখন মহাকাশ পর্যিবেক্ষণকেন্দ্র বা মহাকাশযানের ধারণা ছিল না, সেই সময়ে লুসিয়ান নামে একজন গ্রীক লেখক তাঁর বইতে পৃথিবী থেকে দূরের জীবনের কথা উল্লেখ করেছেন।
নাটালি হেইনস বলেন, “তাঁর(লুসিয়ান) ‘এ ট্রু হিস্ট্রি’ বইয়ে লুসিয়ান এমন কিছু ভ্রমণকারীর গল্প লিখেছেন যারা টর্নেডোর চক্রে পড়ে চাঁদে পৌঁছেছিল। এই যাত্রায় তাদের সাতদিন সময় লেগেছিল, যেখানে আজকাল চাঁদে পৌঁছতে রকেটে প্রায় এর অর্ধেক সময় লাগে। ওই গল্পে চাঁদের রাজা এবং সূর্যের রাজার মধ্যে একটি যুদ্ধও চলে এবং তাদের সৈন্যবাহিনীর চেহারাও অদ্ভুত।”
লুসিয়ান তাঁর বইতে চাঁদে ডানাওয়ালা ঘোড়া, দৈত্যাকার শকুন এবং বারোটি হাতির আকৃতির মাছির উল্লেখ করেছেন। তিনি এমন সব বিচিত্র মানুষদের কথা লিখেছেন, যাদের এলিয়েন বললে ভুল হবে না।
এর প্রায় আটশ বছর পরে, দশম শতাব্দীর জাপানে আরেকটি কল্পবিজ্ঞান কাহিনী ‘দ্য ব্যাম্বু কর্টার’স ডটার’ লেখা হয়। নাটালি বলেন, “গল্পটি এমন- এক ব্যক্তি বাঁশ কাটতেন, তিনি একদিন বাঁশের ভিতরে একটি উজ্জ্বল আলো দেখতে পান। এরপর তিনি সেখানে একটি ছোট মেয়েকেও দেখতে পান যাকে তিনি বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং নিজের মেয়ের মতো বড় করেন। পরে মেয়েটি জানায় যে সে চাঁদ থেকে এসেছে।” আশ্চর্যজনকভাবে যেসব কাহিনিতে এলিয়ানদের কথা এসেছে সেখানে কোনো না কোনোভাবে চাঁদের কথাও এসেছে।
নাটালির মতে, “এটা সত্য যে চাঁদ নিয়ে অনেক দিন ধরেই লেখা হয়েছে। সম্ভবত এর কারণ হল চাঁদ পৃথিবী থেকে স্পষ্টভাবে দেখা গেলেও শুক্র বা মঙ্গল গ্রহ সেভাবে দেখা যায় না।”
কিন্তু পরবর্তীতে শীঘ্রই মঙ্গল গ্রহও পৃথিবীতে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। ১৮৭০-এর দশকে, একজন ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওভানি ভার্জিনিও শিয়াপারেলি একটি টেলিস্কোপ দিয়ে মঙ্গল গ্রহ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং এটি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন।
এই ব্যাপারে নাটালি ব্যাখ্যা করেন, “তিনি (জিওভানি ভার্জিনিও শিয়াপারেলি) মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে যে রেখাগুলো দেখেছিলেন, সেগুলোকে তিনি ‘কানালি’ বলেন। মানুষ ভেবেছিল তিনি খালের কথা বলছেন। সেই সময় সুয়েজ খালের কাজও শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকেই মানুষের ধারণা হয়েছিল যে মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দারা সেখানেও খাল খনন করেছে।”
কয়েক বছর পরে, ১৮৮১ সালে, ‘লন্ডন ট্রুথ’ নামে একটি পত্রিকায় মঙ্গল গ্রহের পৃথিবী আক্রমণ করা নিয়ে একটি কাল্পনিক গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। এরও কয়েক বছর পরে, একজন পোলিশ ধর্মযাজক ‘এলেরিয়ে- আ ওয়ায়েজ টু আদার ওয়ার্ল্ডস’ নামে একটি বই লিখেছেন। সেখানে তিনি মঙ্গল গ্রহে বসবাসকারী প্রায় নয় ফুট লম্বা নিরামিষাশীদের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমবার তিনি তাদের জন্য ‘মার্শিয়ান’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এরপর মঙ্গল গ্রহ থেকে আসা উজ্জ্বল আলোর রশ্মি দেখেছেন বলেও দাবী করেছেন অনেকে।
এই সময়কালে, এইচ জি ওয়েলস-এর বই ‘দ্য ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস’-এর নাট্য রূপান্তর রেডিওতে প্রচারিত হয়েছিল। অরসন ওয়েলস এই গল্পটিকে একটি নিউজ বুলেটিন সিরিজের আকারে এমনভাবে বর্ণনা করেন যে শ্রোতারা ভেবেছিলেন যে মঙ্গলগ্রহের লোকজন পৃথিবী আক্রমণ করেছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির পাশাপাশি, বই এবং গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছিল, যা তরুণ বিজ্ঞানীদের ভিনগ্রহ সম্পর্কে জানার আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করেছিল।
অন্যান্য গ্রহে জীবনের সন্ধান
১৯৬০-এর দশকে একজন তরুণ বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত রেডিও প্রযুক্তিকে সৌরজগৎ-এর একস্থান থেকে অন্য স্থানে বা অন্য নক্ষত্রমণ্ডলে সংকেত পাঠাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এমনও হতে পারে এলিয়েনরাও একই কাজ করছে। এমতাবস্থায়, তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে, আমাদের কেবল তাদের সিগনালকে ধরতে হবে। সেটি (SETI)-র একজন সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানীও গত চার দশক ধরে এলিয়েনদের সিগনাল শোনার চেষ্টা করছেন।
পশ্চিম ভার্জিনিয়ার অবজারভেটরির রেডিও অ্যান্টেনাটিকে সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ফ্র্যাঙ্ক। এর মাধ্যমে তিনি এলিয়ানদের সিগনাল ধরার চেষ্টা করেন। তিনি দুটি তারার দিকে নজর রেখেছিলেন। মজার ব্যাপার ছিল যে একটি তারা থেকে তিনি কোনো সংকেতই পাননি কিন্তু কিন্তু অন্য তারাটি থেকে তিনি কিছু শব্দ শুনতে পান। তাঁর মনে হয়েছিল, তিনি এলিয়েনদের খুঁজে পেয়েছেন। যদিও এটি একটি সেনা বিমানও হতে পারে।
এরপর সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা এলিয়েনদের চিহ্ন খুঁজছিলেন। ১৯৮০-র দশকে, মার্কিন সরকার এলিয়েনদের সন্ধানের জন্য SETI ইনস্টিটিউটকে অর্থনৈতিক সাহায্য করা শুরু করে। রেডিও তরঙ্গগুলি সহজেই মহাকাশে ভ্রমণ করতে পারে। SETI রেডিও রিসিভারে যে শব্দ শুনতে চেয়েছিল তা সাধারণ শব্দগুলির থেকে আলাদা ছিল। SETI সিমুলেশন ব্যবহার করে একটি শব্দ তৈরি করে যা একটি এলিয়েন সিগন্যালের মতো শোনায়, যাতে বোঝা যায় তারা কী খুঁজছে।
SETI কর্তৃপক্ষ ও তাদের দল জানতেন যে তারা কী খুঁজছিলেন। তবে অসুবিধা হল যে তাদের লক্ষ লক্ষ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি দেখতে হত। তারা কীভাবে বুঝত কোনটি প্রথমে দেখতে হবে? এর উত্তরে তাঁরা বলেন, এটি একটি বড় সমস্যা ছিল। এলিয়েনরা তো এই বার্তা পাঠায়নি, যে কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে টিউন-ইন করতে হবে। তাই সব ফ্রিকোয়েন্সিই চেক করতে হত। এর ফলে অনেক সময় নষ্ট হত। তাঁদের এমন একটি রিসিভার দরকার ছিল, যার মাধ্যমে সব চ্যানেলগুলো একসঙ্গে শোনা যায়।
১৯৯০ সাল নাগাদ এটিও সম্ভব হয়েছিল এবং এমন কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছিল যা একসঙ্গে লক্ষ লক্ষ ফ্রিকোয়েন্সি শুনতে পারে। ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী যখন রেডিও টেলিস্কোপের ডেটা দেখছিলেন, তখন তিনি অত্যন্ত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির সংকেত খুঁজে পান। তারা ভেবেছিলেন এটা এলিয়েনদের সংকেত। SETI ব্যাখ্যা করে, “তিনি খুব খুশি ছিলেন যে তিনি তথ্যপ্রাপ্তির জায়গায় কাছে ‘ওয়াও’ লিখেছিলেন। কিন্তু আমরা জানি না যে তিনি আসলে কী খুঁজে পেয়েছেন! আরও অনেক লোকও আকাশের একই অংশে অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু তারা এরকম কিছু খুঁজে পায়নি। এখানে দুটি সম্ভাবনা ছিল, হয় তারা এলিয়েন ছিল অথবা পৃথিবীতেই কোনো কিছুর শব্দ ছিল।” অবশ্য অনেক লোকের জন্য, এটি ছিল এলিয়েনদের সংকেতের সেরা উদাহরণ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে প্রকৃত অর্থে খোঁজাখুঁজির পরও ভিনগ্রহের প্রাণী সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন রাষ্ট্রের এই জাতীয় প্রকল্পগুলিতে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ ব্যয় করা কতটা ঠিক, যারকোনও ফলাফল পাওয়া যায় না। ১৯৯০ এর গোড়ার দিকে, SETI ইনস্টিটিউটে সরকারি সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এখানেই এলিয়েন খোঁজা শেষ হয়নি।
কেপলার
ডেভিড গ্রিনস্পুন একজন জ্যোতিবিজ্ঞানী এবং প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বিজ্ঞানী। তিনি মহাকাশ গবেষণায় নাসার উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি বলেছেন যে এলিয়েনদের খোঁজার উৎসাহ আরো কমে গিয়েছিল কারণ ওই সময় বেশি গ্রহও আবিষ্কার করা যায়নি। কিন্তু নব্বই-এর দশকের গোড়ার দিকে, বিজ্ঞানীরা আমাদের সৌরজগতে কয়েকটি নতুন ছোট গ্রহ এবং বামন গ্রহের সন্ধান পায়। তাই আবারও প্রশ্ন উঠেছিল যে আমাদের সৌরজগতের বাইরে এমন গ্রহ থাকতে পারে যেখানে প্রাণ রয়েছে।
২০০৯ সালের মার্চ মাসে, নাসা কেপলার মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে, যার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বাইরে জীবন সন্ধান করা। বিজ্ঞানী ডেভিড বলেছেন, “কেপলারের একটি খুব ভালো বৈশিষ্ট্য ছিল। পৃথিবী থেকে দূরে এমন একটি জায়গায় একে রাখা হয়েছিল যেখান থেকে পুরো মহাকাশের উপর নজর রাখা যায়।” কেপলার বহু বছর ধরে তারাদের উপর নজর রেখেছিল। এর কাজ ছিল নক্ষত্র থেকে আসা আলোর পরিবর্তন হয় কিনা তা দেখা।
তিনি আরো বলেন, “যদি আলোর পরিবর্তন হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে আমাদের এবং সেই নক্ষত্রের মধ্যে কিছু একটা যাতায়াত করছে। সেটি কোনো গ্রহও হতে পারে। যদি কোনো নক্ষত্রের আলোতে একটি প্যাটার্ন থাকে, তাহলে বোঝা যাবে কোনোকিছু এর চারপাশে আবর্তন করছে।”
কেপলার নয় বছরে সৌরজগতের বাইরে ২৬০০ গ্রহ খুঁজে পেয়েছে। ফলে ২০১৩ সালে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন আমাদের গ্যালাক্সিতেও এমন কোটি কোটি গ্রহ থাকতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে কটি গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে?
ডেভিড বলেছেন, “এটি সম্পূর্ণ একটি অনুমানমাত্র, কারণ আমরা জানি না যে কোন পরিস্থিতিতে প্রাণের বিকাশ লাভ সম্ভব। আমাদের সামনে কেবল পৃথিবীরই উদাহরণ রয়েছে। তবে আমরা ধরে নিতে পারি যে যদি এমন কোনও গ্রহ থাকে, যার আকার এবং জলবায়ু পৃথিবীর মতো, সেখানে প্রাণের সম্ভাবনা থাকতে পারে। এই অনুসারে বলা যেতে পারে আমাদের গ্যালাক্সিতে এমন প্রায় ৩০ কোটি গ্রহ থাকতে পারে।
ডেভিড গ্রিনস্পুনের মতে, এই আবিষ্কারটি ছিল সেই বিপ্লব যা পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনা বদলে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, “অধিকাংশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞানীরা বলবেন যে তারা বিশ্বাস করেন অন্য কোনও গ্রহে প্রাণের অস্তিস্ব থাকতে পারে।”
ইতিমধ্যে, পৃথিবীতে এক্সট্রিমোফাইলের মতো এমন কিছু প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে জীবন খুব কঠিন পরিস্থিতিতেও বিকাশ লাভ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা আত্মবিশ্বাসী যে এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলি, যেগুলি জীবনের সূচনার ভিত্তি হয়ে উঠেছে, তারা মহাবিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। নতুন এই আবিষ্কার আবারও এলিয়েনদের খোঁজে আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল- যদি কোথাও এলিয়েন পাওয়া যায় তাহলেই বা কী?
এলিয়েনদের দেখা পেলে কী করব আমরা?
স্টিভেন ডিক একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ। তিনি নাসার একজন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন তাঁর নামে একটি গ্রহের নাম দিয়েছে 6544 স্টিভেন ডিক। অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতো, স্টিভেনও নিশ্চিত যে পৃথিবীর বাইরেও জীবন আছে। কিন্তু এর সন্ধান পাওয়ার পর কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত সকলেই। তিনি বলেছেন, “আমি যতটা জানি, কোথাও এলিয়েন পাওয়া গেলে কী প্রভাব ফেলবে সে সম্পর্কে মার্কিন সরকার বা অন্য কারও কোনো পরিকল্পনা নেই।” স্টিভেন ডিক বহু বছর ধরে নাসার স্পন্সর করা ‘এলিয়েন লাইফ প্রিপারেশন প্রোগ্রাম’-এ ছিলেন। তাঁর কথায়, “অন্যান্য গ্রহ থেকে আসা জিনিসগুলি সম্পর্কে কিছু নিয়ম তো রয়েছে, তবে সেগুলি বেশিদিনের জন্য বানানো হয়নি। আমরা এখনও জানি না আমরা যাদের খুঁজছি তারা কেমন এবং আমাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে?”
ডিক আরও বলেন, “আমরা ধরে নিতে পারি না যে এলিয়েনরা ভালোই হবে। এমনকি জীবাণুর স্তরে, অন্য গ্রহের ব্যাকটেরিয়ার দ্বারাও এখানে সংক্রমণ ঘটতে পারে। আমরা জানি না যে এলিয়েনদের দুনিয়ায় উপকারী মনোভাব আছে কিনা। আর মানুষের প্রতিও তাদের মনোভাব ঠিকঠাক কিনা তাও অজানা!”
কিন্তু এটাও কি হতে পারে যে আমরা যে এলিয়েনদের খুঁজছি তারা আমাদের খুঁজছে এবং আমাদের সঙ্গে দেখা করতে পৃথিবীতে চলে আসতে পারে! আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, আমরা কিভাবে ভিনগ্রহীদের সঙ্গে কথা বলব? স্টিভেন বলেছেন, “এটি একটি গুরুতর আলোচনার বিষয়। আমি মনে করি এই জিনিসটি ‘অ্যারাইভাল’ সিনেমায় খুব ভালভাবে দেখানো হয়েছে। এতে কিছু এলিয়েন মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু এমন একটি ভাষা দরকার যা পুরো ব্রহ্মাণ্ডের বোধগম্য হবে।” কারোর কারোর অবশ্য মনে হয় হয় এটা গণিতের দ্বারা সম্ভব। যদি এ নিয়েও ভিন্ন মত আছে।
এছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন আছে যা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, আমরা তাদের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করব? আর তখন তাদের সঙ্গে কথাই বা কে বলবে বিশ্ব-জাতিসংঘ নাকি অন্য কেউ? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো কারো কাছে নেই। স্টিভেন ডিক বলেছেন যে এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আমাদের জ্যোতির্বিজ্ঞানী, দার্শনিক, জীববিজ্ঞানী এবং রাজনীতিবিদদের একত্রিত করতে হবে। তিনি বলেন, “আমি মনে করি আমাদের একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত, আমরা কী করব তা আমরা জানি না তবে এটি আগে থেকে চিন্তা করলে ভালো হবে।”
আবার সেই প্রশ্নেই ফেরা যাক, সত্যিই কি এলিয়েন আছে? আমরা জানি যে এখনও পর্যন্ত আমরা অন্যান্য গ্রহে জীবন সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাইনি। কয়েক দশক ধরে খোঁজাখুঁজির পরেও, এই বিষয়ে আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি। কিন্তু একে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা যায়। এটা সম্ভাবনার প্রশ্ন। মহাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ গ্যালাক্সি রয়েছে যার মধ্যে একটি হল আমাদের মিল্কিওয়ে এবং আমাদের গ্যালাক্সিতেও কোটি কোটি গ্রহ রয়েছে। এটা সম্ভব যে পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ হবে না যেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে। অন্য কোনো গ্রহেও প্রাণ থাকতে পারে এবং সেখানের অধিবাসীরা আমাদের মতোই হতে পারে। হয়তো কোনো একদিন আমরা এলিয়েনদের খুঁজে বের করতে পারব অথবা হয়তো তারাই আমাদের প্রথম খুঁজে পাবে।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি
তরজমা: রুবাইয়া জুঁই