কিবরিয়া আনসারী: বিনা বিচারে কিভাবে ৪ বছর ধরে
জেলবন্দি উমর খালিদ? এই প্রশ্নই তুললেন
জেএনইউ প্রাক্তন ছাত্রনেতার দুই বন্ধু অর্ণিবান ভট্রাচার্জ ও বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী।
দিল্লি দাঙ্গায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন উমর। গত ১৩ সেপ্টেম্বর চার বছর
পূর্ণ হয়েছে তার জেলবন্দি জীবন। এনিয়েই রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতার সুজাতা সদনে আয়োজিত
হয় ‘নীরব কণ্ঠ: আজকের ভারতে
রাজনৈতিক বন্দি‘ শীর্ষক আলোচনা সভা। সেখানেই
উপস্থিত ছিলেন উমর খালিদের দুই বন্ধু অর্ণিবান ভট্টাচার্য ও বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী।
সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী বলেন, “ইউএপিএ ধায়ায় অভিযুক্ত অন্যান্য বন্দিরা মুক্তি পেলেও, জামিন দেওয়া হচ্ছে না উমরকে। ৪ বছর ধরে তাঁর জামিন নিয়ে যা করা হচ্ছে তার জন্য
বিচারব্যবস্থাই দায়ী। দেশের বিচারব্যবস্থা খুবি ধীর গতির।”
প্রসঙ্গত, সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে
দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির হিংসায় মৃত্যু হয় ৫৩ জনের। ঘটনার ‘অন্যতম মূল ষড়যন্ত্রকারী’ বলে দাবি করে উমরকে
উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার করে দিল্লি
পুলিশ। জেএনইউয়ের প্রাক্তন এই গবেষকের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা
হয়। এই ইউএপিএ আইনকে ‘ভয়ংকর‘ বলে আখ্যা দিয়েছেন বনজ্যোৎস্না। তিনি বলেছেন, “আগামীতে আরও বহু মানুষের কণ্ঠরোধ করা হবে। সন্ত্রাসদমন আইনে অনেককেই গ্রেফতার
করা হবে। সময় এসেছে এই কালাকানুন বাতিল দাবিতে আওয়াজ তুলতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলনে
নামতে হবে আমাদের।”
ইউএপিএ বাতিল নিয়ে প্রধান
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “সাধারণ মানুষ ইউএপিএ বাতিলের দাবি তুললেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এনিয়ে কিছুই
বলছে না। তারা পিএমএলএ আইন নিয়ে বেশি চিন্তিত। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে নিজেদের
স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে ইউএপিএ বাতিলের দাবি জানানো উচিত।”
এদিন ‘কয়েদি নম্বর-৬২৬৭১০ হাজির হে‘ নামক এক
ডকুমেন্টারি ফিল্মও দেখানো হয়। যেখানে উমর খালিদের লড়াইয়ের জীবন কাহিনীকে তুলে ধরা
হয়েছে। তৎকালীন সময়ে জেএনইউ-এর ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যম মিথ্যাচারের ছবি
ফুটে উঠেছে। সংবাদমাধ্যমের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে বনজ্যোৎস্না বলেন, মিডিয়া পুরোপুরি একতরফা ভাবে উমরের বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ঢালাও ভাবে প্রচার
করেছে। বিজেপির আইটি সেল যেভাবে বলেছে সেভাবেই কাজ করেছে সংবাদমাধ্যমগুলি। যদিও
মিথ্যা খবরের বিরুদ্ধে এনবিডিএ-তে অভিযোগ দায়ের করা হয় বলেও জানান তিনি। অভিযোগের
পর বেশকিছু খবর ডিলিট করা হয়। এমনকি কয়েকটি চ্যানেলকে আর্থিক জরিমানাও করা হয়। তবে
এতে কর্পোরেট সংবাদমাধ্যমের কিছু যায় আসেনা বলেও মন্তব্য করেছেন বনজ্যোৎস্না।
অন্যদিকে অর্ণিবান ভট্টাচার্য
বলেছেন, “আমার বাড়িতে ওর জন্মদিন পালন
করা হয়। তার পরের দিন দিল্লি ফিরে গেলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শুধুমাত্র মুসলিম
হওয়ার কারণেই উমরের উপর ও তাঁর পরিবারের ওপর রাষ্ট্রীয় দমন নিপীড়ন নেমে
এসেছে।”