বিশেষ প্রতিবেদন: এক সময় মানুষের স্বপ্নের ঠিকানা ছিল আমেরিকা। শিক্ষা ও কাজের সন্ধানে আমেরিকা পাড়ি দিতেন অনেকেই। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে। এখন খোদ মার্কিনিরাই দেশ ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছেন অন্য দেশে। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ফাঁপা ও অকার্যকর জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কিছু মার্কিনি দেশ ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করছেন। আগামী নভেম্বরে পছন্দের প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাবেন কি না—এমন প্রশ্নে প্রায় ২ হাজার পাঠক নিউইয়র্ক টাইমসকে তাদের মতামত জানিয়েছেন। এছাড়া সোশ্যাল সাইটেও একই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আরও ৩ হাজার মানুষ। এরমধ্যে কিছু উত্তরদাতা এরই মধ্যে আমেরিকা থেকে সরে গেছেন। আবার কেউ কেউ এর জন্য চেষ্টা করছেন। তাদের এমন ইচ্ছার বিভিন্ন কারণ ছিল। অনেকেই জানিয়েছেন, তারা আশঙ্কা করছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হলে দেশটি কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে পারে। আবার অনেকে কমলা হ্যারিসের দেশ পরিচালনার সক্ষমতা নিয়েও চিন্তিত। এছাড়াও অনেকে বন্দুক হামলা, রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অভাব, গর্ভপাতের বিধিনিষেধ, ক্রমবর্ধমান ইহুদি বিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও এলজিবিটিকিউ বৈষম্য নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা সবাই কর্মজীবী। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার নৃবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মেগান এ কার্নি বলেন, ‘একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতন হচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচনে কে জিতবে এখানে তা বিবেচ্য নয়।’ সমীক্ষায় বেশ কয়েকজন পাঠক আমেরিকান গণতন্ত্রের ভবিষ্যত ও নির্বাচনের পরে দাঙ্গা–আন্দোলন নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক দম্পতি বলেছেন, সহিংসতা শুরু হওয়ার শঙ্কায় তারা ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছেন। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা কর্তৃত্ববাদী শব্দটি ৪৯ বার, স্বৈরশাসক ৪২ বার, ফ্যাসিবাদী বা ফ্যাসিবাদ শব্দটি ১০১ বার ব্যবহার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন আবাসন ব্যবসায়ী রবার্ট হর্টন। ভার্জিনিয়ার এই বাসিন্দা এক দশক আগে প্যারিসে যাওয়া শুরু করেন। সেখানে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মার্কিন রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশ ছেড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে। এই ব্যবসায়ী নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, দেশে ছেড়ে চলে যাওয়াদের মধ্যে অনেকেই আর ফিরে আসার আশা করেন না। চলতি বছরের শেষে প্যারিসে স্থায়ী বসবাস শুরুর কথা ভাবছেন হর্টনও। তাঁর মতে, নির্বাচনের পর আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে। তাই আগে থেকেই দেশ ত্যাগ করার পরিকল্পনা তাঁর। হর্টনের মতো আরও অনেক মার্কিনি নির্বাচনের আগেই আমেরিকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন।