পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ কলকাতা পুরভোটে ১৪৪টি ওয়ার্ডেই ১৩৪টি জয়ী হল তৃণমূল। এই জয় কে গণতন্ত্রের জয় বলে জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে বিজেপি ৩টি আসন দখল করেছে, বাম ২টি আসন, কংগ্রেস ২টি ও নির্দল ৩টি আসনে জয়ী হয়েছে।
কলকাতা পুরভোট নিয়ে প্রথমে চাপান-উতোর চলছিল। প্রথমেই কলকাতা পুরভোটে তারিখ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিজেপি। মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আদালতে সরকারি আইনজীবী জানান, রাজ্যে এই বর্তমান সময়ে করোনাকালে কলকাতার পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভাবে ভালো। এই কারণেই আগে কলকাতার ভোট করে পরবর্তী ভোটগুলির দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। এরপরেও দমে থাকেনি বিজেপি।
কমিশন রিপোর্ট দেয় কলকাতা পুলিশ দিয়ে ভোট সামলানো সম্ভব হবে। এদিকে এর পরেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানিয়ে প্রথমে হাইকোর্টে যায় বিজেপি। এর পর ফের হাইকোর্ট থেকে মামলা সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যায় বিজেপি। ফের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কি থাকবে তা দেখবে হাই কোর্ট।
১৯ ডিসেম্বর একাধিক ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভোট গ্রহণ। এর মধ্যে সব থেকে উত্তেজনার ঘটনা ঘটে
বোমাবাজি থেকে এজেন্টদের বসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। শিয়ালদা টাকি স্কুলের সামনে বোমাবাজি। বুথের সামনে দুটি পর পর ভোট পড়ে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তৃণমূলের দিকে এই হামলার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ উড়িয়ে দেয় তৃণমূল। বোমার আঘাতে জখম ভোটার। পাশাপাশি ব্রের্বোন রোডের জৈন স্কুলের ভিতরে উত্তেজনা ছড়ায়। কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে হাতাহাতি থেকে ধাক্কাধাক্কি, কিল, চড়, লাথি, ঘুসি সবই চলে। কংগ্রেস প্রার্থীর এজেন্টকে ধরে মারধর করা হয়। আরও কয়েকটি বুথে একই উত্তেজনার চিত্র ধরা পড়ে।
বিজেপি এই ঘটনায় বেলাগাম সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়। এদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘ভোটে জিততে পারবে না, বলে নাটক করছে বিজেপি। এগুলি ইগনোর করুন।’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তৃণমূল কোথাও অশান্তি করেনি, কোথাও তৃণমূলের অশান্তির ফুটেজ আনতে পারলে দেখান। দল এর ব্যবস্থা নেবে’।
এই চাপান-উতোরের মধ্যে ১৪৪টি ওয়ার্ডেই পুনর্নির্বাচনে দাবি তোলে বিজেপি। ১৬টি ওয়ার্ডে বামেরা ও ৪৫টি ওয়ার্ডে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলে কংগ্রেস। এদিকে সব দাবি খারিজ করে দিয়ে কমিশন জানিয়ে দেয়, ‘কোথাও বুথ জ্যাম হয়নি, সিসি ক্যামেরাও সচল ছিল। তাই পুনর্নির্বাচনের কোনও প্রয়োজন নেই।
পুরভোটের দিনই কলকাতা পুলিসের জয়েন্ট সিপি (হেড কোয়াটার্স) শুভঙ্কর সরকার জানিয়ে দেন, ‘দুটি বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। ৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোটের উপর ভোট শান্তিপূর্ণ। ভোট মিটতেই কমিশন জানিয়ে দেয় ভোটে অভিযোগ জমা পড়েছে ৪৫৩টি। অশান্তি করার দায় ১৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ভোট গণনা কিছুক্ষণ চলার পর থেকেই ক্রমশ চিত্র পরিষ্কার হতে থাকে। দুপুর থেকে জয়ের উন্মাদনা শুরু হয়ে যায় শহরজুড়ে।
উল্লেখ্য, ১৯ ডিসেম্বর কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে পুরভোট হয়। বুথের সংখ্যা ছিল ৪৯৫৯টি। এর মধ্যে ১১৩৯টি বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।