ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর: সোমবার বাংলাদেশের
রাজধানী ঢাকায় এসেছে রাষ্ট্রসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম। ছাত্র-জনতার আন্দোলন কতটা
নৃশংসভাবে দমনের চেষ্টা করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার, সে
বিষয়ে এক মাস তদন্ত করবে রাষ্ট্রসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল।
পাশাপাশি দেশটির সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধদের
বিরুদ্ধে কোনওরকম হিংসার ঘটনা ঘটেছে কি না তার তদন্ত করবে এই দল। রাষ্ট্রসংঘের
প্রতিনিধিরা সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করবেন। দেশটির
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে ঢাকায় পা রেখেছে তারা।
দেশে মানবাধিকার বজায় রাখতে ইউনূস সরকারের এমন
পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশেই
সংখ্যালঘুদের অধিকার খতিয়ে দেখতে রাষ্ট্রসংঘের এমন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম আসেনি।
আমেরিকা, তুরস্ক,
ইরান ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বারবার অভিযোগ করলেও মোদি
সরকার তা স্বীকার তো করেইনি, কোনও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম
এনে তদন্তও করেনি।
প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলটি
গত জুলাই ও আগস্টের শুরুর দিকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ১৫ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে।
তদন্ত প্রতিবেদন আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের
কাছে জমা দেওয়া হতে পারে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের
পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাই ও আগস্টের শুরুতে বাংলাদেশ
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রসংঘের
মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে চিঠি লিখেন। তদন্তের জন্য রাষ্ট্রসংঘের
মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি
ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল ২২ থেকে ২৯ আগস্ট ঢাকা সফর
করেছিল।
আট দিনের ওই সফরে প্রতিনিধিদলটি অন্তর্বর্তী সরকারের
বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট কয়েকটি
মন্ত্রকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ছাত্র আন্দোলনের নেতা, বিক্ষোভ-সহিংসতায় শিকার
ব্যক্তিদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে
অন্তত ৪০টি বৈঠক করে। পরে এসব বৈঠকের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে
রাষ্ট্রসংঘ তথ্যানুসন্ধান দল তাদের কার্যপরিধি চূড়ান্ত করে।
এদিকে রাষ্ট্রসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলের
তদন্তে বাংলাদেশ কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সম্পূর্ণ
নিরপেক্ষ একটি তদন্ত হোক। তারা তদন্তের কাজে যেখানে যাবে, সেখানে যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা বা থাকার ব্যবস্থা করতে হয়, সে রকম লজিস্টিকস সহযোগিতা করতে আমরা রাজি।’