অর্পিতা লাহিড়ীঃ দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের ওপরে একটি শিশিরবিন্দু। তবে মনে রাখতে হবে ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল প্রাক্তন বর্ধমান জেলা বিভক্ত হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা গঠিত হয়।
কর্মক্ষেত্রের চাপ বা অর্থনৈতিক কারণে হয়ত সবসময় বাইরে বেড়াতে যাওয়া সম্ভব হয়না। কিন্তু আমাদের এই রাজ্যের প্রতিটি জেলার নিজস্ব একটা করে কাহিনি আছে। চলুন ঘুরে আসি রাজার শহর বর্ধমান থেকে। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেল হয়েছে। একটা গোটা দিন দিব্য কাটিয়ে আসতে পারেন। সঙ্গে স্বাদ নিতে ভুলবেন না সীতাভোগ, মিহিদানার।
বর্ধমান রাজবাড়ী ও বিশ্ববিদ্যালয়
মহারাজ তেজচাঁদের দত্তকপুত্র রাজা মহাতাবচাঁদ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেন। ১৮৫১ সালে এই রাজবাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়। মহারাজ মহাতাবচাঁদ তৈরি করেছিলেন বলে এই রাজবাড়ির নাম মহাতাব মঞ্জিল
এই রাজবাড়ীতে এখন রয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ও মহিলা মহাবিদ্যালয়। এছাড়াও রয়েছে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। যেখানে রয়েছে বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর সহ বিস্তৃত এলাকা থেকে খনন কার্য চালিয়ে পাওয়া নানা প্রত্নসম্পদ। এছাড়াও রয়েছে বর্ধমানের রাজাদের তৈলচিত্র। কোভিড বিধি মেনেই প্রবেশ করতে হবে। কোন প্রবেশ মূল্য নেই।
দেবী সর্বমঙ্গলা মন্দির
১৭০২ সালে মহারাজা কীর্তিচাঁদ দ্বারা সর্বমঙ্গলা মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল, যেটি বর্ধমানের ডিএন সরকার রোডে অবস্থিত। মাতা সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি প্রায় ১০০০ বছর পুরনো। এটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবরত্ন মন্দির। মন্দির গাত্রে খোদাই আছে বাংলার টেরাকোটার কাজ। সিদ্ধপীঠ হিসেবে খ্যাত এই সর্বমঙ্গলা মন্দির।
নবাব হাটের ১০৮ শিব মন্দির
বর্ধমানের মহারানি বিষণকুমারীর নবাবহাটে ১০৮ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
কথিত আছে এই মন্দিরের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। শেষ হয়েছিল ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময় বর্ধমান সংলগ্ন নবাবহাট এলাকায় মহামারি দেখা দিয়েছিল। বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। স্বজনদের হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিলেন এই এলাকার বাসিন্দারা। এলাকায় মন্দির গড়ে বাসিন্দাদের ঈশ্বরমুখী করে তাঁদের শোক ভোলাতে চেয়েছিলেন বর্ধমানের রানি। শিবরাত্রিতে অন্য সাজে সেজে ওঠে নবাবহাটের এই শিবমন্দির। তবে বারোটা থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকে তাই এ যাত্রায় বাইরে থেকে ছবি তুলেই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটলো।
কৃষ্ণসায়রঃ
বর্ধমানের কৃষ্ণসায়র পরিবেশ উদ্যান। প্রায় ৩৩ একর জমির উপর নির্মিত কৃত্রিম জলাধার কৃষ্ণসায়র। তাকে ঘিরেই পার্ক।শোনা যায়, ১৬৯১ সালে বর্ধমানের তৎকালীন রাজা কৃষ্ণরাম রাই দুর্ভিক্ষপীড়িত প্রজাদের কর্মসংস্থানের জন্য এই বিশাল সায়র নির্মাণ করান। তারপর থেকেই বর্ধমান রাজপরিবারের ইতিহাসে নানাভাবে জড়িয়ে আছে কৃষ্ণসায়রের নাম। মিথ বলে কৃষ্ণসায়রের জল ছাড়া রাজপরিবারে নাকি কোনো শুভ অনুষ্ঠান শুরু হত না।কৃষ্ণসায়রের প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা, কঠোর ভাবে মানতে হবে কোভিড প্রটোকল। ২ ঘন্টার বেশি থাকা যাবেনা উদ্যানে।
বর্ধমান জুওলজিকাল পার্ক
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের কাছে অবস্থিত। পার্কে রয়েছে হরিন , চিতাবাঘ, ভাল্লুক, কুমির, দাগযুক্ত হরিণ বাদে কিছু ধরণের পাখিও সেখানে রাখা হয়েছে। এটি বন বিভাগ দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।এলাকাটি প্রায় ১৪ হেক্টর।
কি ভাবে যাবেনঃ হাওড়া, শিয়ালদহ থেকে কর্ড বা মেন লাইনের লোকালে চেপে বসুন। কমবেশি আড়াই ঘন্টা সময় লাগবে।
ধর্মতলা থেকে প্রচুর বাস যাচ্ছে, ইচ্ছে হলে বাসেও আসতে পারেন।বর্ধমানে পৌঁছে কথা বলে নিন কোনো টোটোর সঙ্গে। এরপর ওঁরাই ঘুরিয়ে দেবেন সকল গন্তব্য। সারাদিন টোটো ঘুরতে খরচ ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।( ছবিঃ প্রতিবেদক)