পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের রূপালী শস্য তথা পদ্মার ইলিশের আমদানি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই চলছিল টানাপোড়েন। শারদ উৎসবের দিনগুলিতে পশ্চিমবঙ্গবাসী পদ্মার ইলিশের স্বাদ পাবেন কি না, তা নিয়েও মাছ প্রিয় বঙ্গবাসী ধন্ধে ছিলেন। কিন্তু, রাজ্যে বাংলাদেশের ইলিশের আমদানি নিয়ে সব জল্পনার অবসান ঘটল। দুর্গাপুজোর আগেই বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ঢুকবে পশ্চিমবঙ্গে। শনিবার বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, পুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গে তিন হাজার টন ইলিশ পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ভারতের ‘ফিশ ইম্পোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শারদোৎসবের জন্য অন্যান্য বছর ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশ চলে আসে। কিন্তু, চলতি বছর ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ রেখেছিল বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণেই ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও, শনিবার বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, ভারতের যে সকল মৎস্য ব্যবসায়ী বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির জন্য আগেই আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আর নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তবে নতুন করে ইলিশ আমদানির ক্ষেত্রে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ আমদানি প্রসঙ্গে ‘ফিশ ইম্পোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন, ‘মাছ আসছে নিশ্চিত। ইলিশ নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তবে মাছের দাম কতটা কী হবে, বলা সম্ভব নয়। এমনিতেই ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া! যদি পরিমাণে বেশি আসে, তবেই দাম কম হবে। নয়তো দাম বেশিই থাকবে।’
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ পাঠানোর জন্য কলকাতার ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছিল। সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, ‘আসন্ন দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রফতানিকারকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে ৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হল।’
২০১৮ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তির পর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ইলিশ পাঠাতে রাজি হন। চুক্তি অনুযায়ী ঠিক হয় প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সরকার এক মাসের জন্য ৫০০০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি করবে ভারতে। কিন্তু চলতি বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল, অন্তর্র্বর্তী সরকারের হাতে দেশের শাসন যাওয়ার পর ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনও নিশ্চিত ছিল না, এবার ইলিশ আসবে কি না। যদিও শনিবার বাংলাদেশ সরকার চিঠি দিয়ে ইলিশ বফতানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে ট্রাকে করে ভারতের পেট্রাপোল স্থল বন্দরে এসেছিল পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ। সেবার দুর্গাপুজোর সময়ে ৩৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ। রফতানি হয়েছিল অবশ্য ১৩০০ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এবছর অবশ্য ৯৫০ মেট্রিক টন কম অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতবছর ৩৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এবছর ৩০০০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘ইলিশ মাছ খাওয়াটা বড় কথা নয়, ইলিশ মাছ বন্ধুত্বের বন্ধন শক্ত করার একটা বড় জায়গা। পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ একটা আবেগ। সেই আবেগের মর্যাদা দিয়েছে বাংলাদেশ। সেজন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় যা-ই হোক না কেন দু’দেশের সম্পর্ক যেন মজবুত থাকে, সেটাই আশা।’