বিশেষ প্রতিবেদন: কামরূপের কামাখ্যায় সতী মন্দির নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব। অসমের ধিঙ বিধানসভার এআইইউভিএফ-এর বিধায়ক আমিনুল ইসলাম দিনকয়েক আগে এমন মন্তব্য করেছিলেন। আর তাই নিয়ে এখন উত্তাল অসমের রাজনীতি। আমিনুলের এমন মন্তব্যের পর আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গেছে শাসক ও বিরোধী শিবির। আমিনুলের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে এবং ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্টৃñতির পরিপন্থী বক্তব্য সহ্য করা হবে না বলে তাঁকে জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
আমিনুলের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর এমন গ্রেফতারির হুঁশিয়ারির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এআইইউডিএফ-এর জুনিয়র বিধায়ক রফিকুল ইসলাম এবং মানকাছাড়ের বিধায়ক আমিনুল ইসলাম। দু’জনেই বলছেন– ধিঙের বিধায়ক যা বলেছেন– সেটা ইতিহাসের বিষয়। এই নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জেলে পোড়ার হুমকি দিতে পারেন না। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলতে পারতেন– ঐতিহাসিক প্রমাণ দিন আমিনুল। সোমবারও হিমন্ত বলেছেন– আর দু’চারদিন দেখব কী করেন আমিনুল। গ্রেফতার করাটা কোনও খেলা নয়। আগেও বলেছি– প্ররোচনামূলক বক্তব্য দেওয়া অনুচিত।
মুখ্যমন্ত্রী কড়া ব্যবস্থার ফরমান দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিলেও নিজের অবস্থানে অনড় আমিনুল। তিনি বলেছেন– এটা ঐতিহাসিক সত্য দেশের বিভিন্নস্থানে বেশ কয়েকটি মন্দির নির্মাণের জন্য জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আওরঙ্গজেব। কামাখ্যা মন্দিরের জন্য জমি বণ্টনের জন্য ফরমান দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা যদি ভেবে থাকেন– কেউ সত্যি কথা বললে তিনি মুখ বন্ধ করে দেবেন– তাহলে সাধারণ মানুষ বিচার করে দেখাবেন। বলছেন আমিনুল।
অন্যদিকে– অসমের বিরোধী দলের নেতা কংগ্রেস বিধায়ক দেবব্রত শইকিয়া ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে আমিনুলের পাশেই দাঁড়ালেন। স্বনামধন্য অসমিয়া ইতিহাসবিদ মহেশ্বর মেওগর লেখা ‘পবিত্র অসম’! বইটি তুলে ধরে তিনি দেখিয়েছেন অসম সাহিত্য সভা প্রকাশিত বইটির ২৬৪ নম্বর পৃষ্ঠায় পরিষ্কার লেখা আছে– গুয়াহাটির উমানন্দ মন্দিরের পূজারি সদামন এবং তাঁর পুত্র কামদেবকে আগের রাজাদের দেওয়া জমি ফের দান করেছিলেন মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব। এ সংক্রান্ত ফার্সি ভাষায় দু’টি লেখাও পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া ওই বইয়ে লেখা আছে– আওরঙ্গজেবের শাসনের নবম বছরে পূর্বে আল্লাহয়ার খাঁ এবং হাসান কান্দাহারি খাঁ গুয়াহাটির ফৌজদার থাকার সময় তুরুখপাড়া মৌজায় দু’জন পূজারিকে কামাখ্যা নামে দান করা ভূমি পুর্নবণ্টন করা হয়েছিল। দেবব্রত শইকিয়া জানান– ইংরেজিতে লেখা ‘আওরঙ্গজেবঃ দ্য ম্যান অ্যান্ড দ্য মিথ’ বইয়েও লেখা রয়েছে– উমানন্দ মন্দিরের জন্য আগের রাজার দান করা জমি বহাল রাখার ফরমান দিয়েছিলেন আওরঙ্গজেব।
দেবব্রত বলেন– ইতিহাস না জেনে যদি কেউ বলপ্রয়োগের পথে হাঁটতে চান– তা রাজ্যবাসী মেনে নেবে না। তবে বিজেপির লক্ষ্যই হল ইতিহাস বিকৃত করা। এখন অসমেও সেটা করতে চাইছে।