দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট: স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, অকৃতদার বিজ্ঞানী ড. মুনকির হোসেন আমাদের মধ্যে নেই। বুধবার রাত ১০-৩০ নাগাদ তাঁর ইন্তেকাল হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
বীরভূমের মুরারইয়ের ভীমপুর থেকে ১ কিমি দূরে খুঁটকাইল গ্রামে ১৯৫৪ সালে ২০ সেপ্টেম্বর জন্ম। নানির বাড়িতে মানুষ হন মুনকির সাহেব। আব্বার নাম ফাইজ হোসেন এবং মা রাজিয়া বিবি। হেতমপুর কলেজে কেমিস্ট্রি অনার্স পাস করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি ও পিএইচডি করেন। ১৯৮৯ সালে মুম্বাই আইআইটিতে যোগদান রিসার্চের কাজে। সেখানে সাড়ে সাত বছর কাটানো।
১৯৯৬ সালে তাইওয়ানে গবেষনার কাজে যান। দীর্ঘ ১৭ বছর তাইওয়ানের তাইপোর ‘এক্যাডেমিয়া সিনিকা ইন্সটিটিউট অব কেমিস্ট্রিতে, কেমিস্ট্রির ‘ক্যাটালিসিস’ বা অনুঘটক নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। বাড়ি ফিরে ফেলোশিপের টাকায় ‘আস-সাকিনাহ’ ট্রাস্টের নামে জমি কিনে তিন একর জমি সেখানে দান করেন। মা এবং প্রাথমিক স্কুল থেকেই ঐশী চেতনার প্রথম পাঠ লাভ করেন মুনকির সাহেব।
ড. মুনকির হোসেন ছিলেন ভীমপুরে দারুল হুদা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পৃষ্ঠোপোষক। দারুল হুদা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দু’দিন আগে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাঁকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। বুধবার রাতে তিনি মারা যান।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১-৩০ নাগাদ তাঁকে দারুল হুদা ক্যাম্পাসে মসজিদের সামনে দাফন করা হয়। ড. মুনকির সাহেবের জনাযায় প্রায় দশ হাজার মানুষের সমাগম হয়। অকৃতদার ড. মুনকির হোসেন মৃত্যুর পর রেখে যান ভ্রাতুষ্পুত্র ইঞ্জিল হোসেন, বদিরুজ্জামান, ভ্রাতৃষ্পুত্রী জামাতা আমিনুল ইসলাম প্রমুখকে।
জামাতা আমিনুল ইসলাম বলেন, গত বছর এপ্রিলে বেঙ্গালুরুর মনিপালে তাঁর ফুসফুসের ক্যানসার ধরা পড়ে। তারপর মুম্বাই টাটা ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর পরপর দুই বার স্ট্রোক হয়। প্রথম বার সামলালেও, দ্বিতীয় বার সামলাতে পারেন নি। বীরভূম হারালো অসহায়ের আশ্রয়দাতা এক মাটির মানুষ সমাজসেবী বিজ্ঞানীকে।