আসিফ রেজা আনসারী: ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হওয়ার ইতিহাস অনেক লম্বা। অভিযোগ, বাম আমলে ওয়াকফ বোর্ডের সদস্যদের মদদ ও রাজনীতির কারবারিদের ছত্র-ছায়ায় কিছু অসাধু মানুষ দখল করছে ওয়াকফ সম্পত্তি। শহীদ টিপু সুলতানের পরিবারের সদস্যদের ইংরেজরা পাঠিয়ে দিয়েছিল কলকাতায়। কলকাতায় রয়েছে টিপু সুলতান পরিবারের ওয়াকফ সম্পত্তি এবং একটি কবরস্থান। এই কবরস্থান সংলগ্ন ওয়াকফকৃত ফাঁকা জমি এখন জবরদখল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাহিদ আলম। তিনি টিপু সুলতান ওয়াকফ সম্পত্তির ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য। টিপু সুলতান পরিবারের ‘মহীশূর ফ্যামিলি ফতেহ ফান্ড ওয়াকফ এস্টেট’-এর মুতাওয়াল্লী কমিটির সেক্রেটারি। তিনি পুবের কলম-কে বলেন, টিপু সুলতানের বংশধরদের দানকৃত ওয়াকফ সম্পত্তির একটা বড় অংশ বেদখল হয়েছে। টালিগঞ্জ এলাকায় বর্তমানে একটি ফাঁকা মাঠ আছে, যা ওয়াকফ সম্পত্তি, সেখানে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
তিনি বলেন, দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ এলাকার ৫১/১বি, সতীশ মুখার্জি রোডে ‘মহীশূর ফ্যামিলি ফতেহ ফান্ড ওয়াকফ এস্টেট’-এর নামে একটি সম্পত্তি আছে। সেই সম্পত্তির ইসি নং- ৮৩০২। পাশেই টিপু সুলতানের বংশধরদের কবর রয়েছে। কালীঘাটের এই টিপু সুলতান পরিবারের এই কবরস্থানে তাঁর পুত্র ও জামাতার কবর রয়েছে বলে সাহিদ আলম সাহেব জানান।
বর্তমানে এই কবরস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত এবং ওয়াকফকৃত যে ফাঁকা জমিন রয়েছে এবার সেটাও দখল করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। অভিযোগ, তাতে ফের অবৈধ নির্মাণ করছেন কুমার সাহা ও তার ভাই প্রদীপ সাহা ওরফে ঘোটনা সাহা। ইতিমধ্যেই একটি বাঁশের প্যান্ডেল তৈরির জন্য কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ নিয়ে পুবের কলম-এর পক্ষ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের তোলা ছবি মুছে দিতে বাধ্য করা হয়। ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যেই আছে ‘কালীঘাট তরুণ ক্লাব’। সাংবাদিকদের ঘিরে ধরা দখলদাররা বলেন, এখানে ছবি তোলা বা খবর করতে হলে ক্লাবের অনুমতি লাগবে।
এ নিয়ে ‘মহীশূর ফ্যামিলি ফতেহ ফান্ড ওয়াকফ এস্টেট’-এর মুতাওয়াল্লি তথা সেক্রেটারি শাহিদ আলম জানান, বিগত ২০-২৪ বছর ধরে আমরা ওয়াকফ বোর্ডের কাছে কবরস্থান নিয়ে তদবির করছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।
এ দিকে ওয়াকফ সম্পত্তির দখল করা নিয়ে অভিযুক্ত কুমার সাহা পুবের কলম প্রতিবেককে বলেন, ৭০ বছর ধরে মানুষ দখল করে বসে আছে। জনবসতি হয়ে গেছে, সবার ভোটার কার্ডও আছে। তাই বলে তিনি কি ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করবেন? এ নিয়ে অবশ্য জবাব দিতে পারেননি কুমার সাহা।
এখন যে ফাঁকা জমিটি বেঁচে ছিল তাতেও প্যান্ডেল তৈরি করে জবরদখলের চেষ্টা শুরু হওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাহিদ আলম এবং ওয়াকফ সচেতন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। সাহিদ আলম বলেন, আমরা এই নতুন জবরদখল সম্পর্কে টালিগঞ্জ থানা, পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ড এবং ডিসি সাউথকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। কিন্তু জবরদখলের কাজকর্ম বন্ধ হয়নি। ওয়াকফ বোর্ড এ সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু তারাও সক্রিয় নয়। তিনি দুঃখ করে বলেন, শহীদ টিপু সুলতান পরিবারের এই ঐতিহাসিক ওয়াকফ সম্পত্তি কী এভাবেই বাংলার স্মৃতি থেকে মুছে যাবে?