পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: তখতে বসেই কার্যত ঝড় তুলছে ট্রাম্প ২.০ সরকার! একের পর এক নির্বাহী অর্ডারে স্বাক্ষর করছেন বিতর্কিত এই ধনকুবের। যার মধ্যে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ আদেশ হল নাগরিকত্ব সংক্রান্ত। হোয়াইট হাউজের তরফ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, এবার থেকে আর মার্কিন মুলুকে জন্মগত ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার থাকবে না। বলা বাহুল্য, প্রায় ১৫০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া শিশুরা ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব’ পেয়ে আসছেন। তবে সেই অধিকারকে বাতিল করে এবার নির্বাহী নির্দেশিকা জারি করলেন ট্রাম্প। এই নির্দেশিকা কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে।
এই নির্দেশ অনুযায়ী, মার্কিন মুলুকে যদি অবৈধ অভিবাসীর সন্তান জন্ম নেয়, তাহলে সেই শিশুরা আর মার্কিন নাগরিক হবেন না। এছাড়া জন্ম নেওয়া শিশুর মা বাবা যদি বৈধ ভাবেই আমেরিকায় গিয়ে থাকেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও একজন সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাহলেও সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। এছাড়া কেউ যদি স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা বা টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন, তাহলেও সেই শিশু আর মার্কিন নাগরিক হবে না। এদিকে নয়া নিয়মে যে সব ভারতীদের সন্তান ১০০+ গ্রিন কার্ড ওয়েটিং লিস্টে আছে, তারা মার্কিন নাগরিক হতে পারবে না।
শপথ নেওয়ার পরে একগুচ্ছ ফাইল এনে রাখা হয় ট্রাম্পের সামনে। সেগুলির প্রত্যেকটিতে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট সই করে তুলে ধরেছেন উপস্থিত জনতার সমক্ষে। স্বাক্ষরিত নথি দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে মার্কিন জনতা। এছাড়াও নির্দেশ দিলেন, সরকারি আধিকারিকরা আপাতত কোনওরকম নির্দেশিকা জারি করতে পারবেন না। বন্ধ থাকবে সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগও। যতদিন পর্যন্ত নতুন প্রশাসন পুরোপুরি দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে, ততদিন জারি থাকবে এই অবস্থা।
এদিন ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতি আবারও বাস্তবায়নের কথা জানান তিনি। বলেন, খুব শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট নীতি নিয়ে কাজ শুরু করবেন তিনি।
সীমান্ত বন্ধ নিয়েও কথা শোনা যায় তাঁর মুখে। ১৯৪৪ সালে নেওয়া পদক্ষেপটি ‘টাইটেল ৪২’ নামে পরিচিত। এর অধীন জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে অভিবাসন কমাতে পারে মার্কিন সরকার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মাদক চক্রগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আল-কায়েদা, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট এবং হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোর তালিকায় এসব চক্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন তিনি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন। প্রাচীরটির একটি অংশ নির্মাণ করা হলেও এখনো বড় একটি অংশ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। ট্রাম্প হয়তো এবার সেই কাজ শেষ করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পোৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আমদানি পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্কারোপের আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চিনসহ বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সেটি বজায় রেখেছিলেন। তবে এবার ট্রাম্প সব ধরনের আমদানি পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের আশ্বাস দিয়েছেন। এর মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চিনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব শুল্ক ভোগ্যপণ্যকে আরও ব্যয়বহুল করতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে। কিছু দেশ এর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের কথা ভাবছে। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প সব সময় ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে ছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অনেকের বিশ্বাস, বিটকয়েনের একটি কেন্দ্রীয় মজুত গড়ে তোলার জন্য ট্রাম্প খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল ও সোনার মতো একটি কৌশলগত মজুত। ট্রাম্পের ভাষ্য, মার্কিনদের উপকারে এটি স্থায়ী জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজে লাগবে।